নিজস্ব প্রতিবেদক
ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম স্ত্রীর পরকীয়ার জেরে খুন হয়েছেন। তিনি শারীরিক অক্ষম ও অসুস্থ ছিলেন। তার স্ত্রী নুরানী আক্তার সুমীর সঙ্গে পরকীয়া ছিল কবি শাহাবুদ্দীন নাগরীর। নুরুল বাসা থেকে বের হলেই তার স্ত্রী নাগরীকে ফোনে ডেকে আনতেন। বাসার ভেতর বেশ কয়েক ঘন্টা একান্তে কাটাতেন সুমী-নাগরী। প্রায় প্রতিদিনই এমন ঘটতো।
নুরুল ইসলাম খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার নাগরী রিমান্ডে রয়েছেন। রিমান্ডে তিনি চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
কবি শাহাবুদ্দীন নাগরীর ব্যবসায়ী বন্ধু নুরুল ইসলাম। তার স্ত্রীর সঙ্গে নাগরীর পরকীয়ার সম্পর্ক আগে থেকেই চাউর ছিলো। নুরুলের শারীরিক অক্ষমতা ও অসুস্থতার সুযোগে গড়ে উঠে পরকীয়ার সম্পর্ক। নুরুল ইসলাম সন্তানহীন।
হঠাৎ খুনের ঘটনায় গ্রেফতার হন নিহত নুরুলের স্ত্রী নুরানী আক্তার সুমী (৩৫) ও গাড়ির চালক সেলিম।
নিউ মার্কেট থানা পুলিশ জানায়, গত ১৩ এপ্রিল রাজধানীর এলিফেন্ট রোডের ১৭০/১৭১নং ডম-ইনো অ্যাপার্টমেন্টের পঞ্চম তলায় নুরুল ইসলামকে মৃত অবস্থায় নিজ শয়নকক্ষ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে এ ঘটনায় তার বোন শাহানা রহমান কাজল বাদী হয়ে স্ত্রী নূরানী ও শাহাবুদ্দীন নাগরীসহ অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে নিউ মার্কেট থানায় মামলা করেন। এরপরই নূরানী, বন্ধু নাগরী ও গাড়ি চালককে গ্রেফতার করে পুলিশ।
সোমবার ওই মামলার শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম ওয়ায়েজ কুরুনী খান চৌধুরী গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে পাঁচদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, বাসার ক্লোজ সার্কিট (সিসি) টিভির ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ব্যবসায়ী নুরুল ইসলামের মরদেহ উদ্ধারের আগের দিন বিকেল ৩টা ১৩ মিনিটের দিকে বাসায় গিয়েছিলেন শাহাবুদ্দীন নাগরী। প্রবেশের ৪ ঘণ্টা ৪ মিনিট পর (সন্ধ্যা ৭টা ১৭ মিনিটে) বেরিয়ে আসেন তিনি। একই ঘটনায় শাহাবুদ্দীনের মোবাইল ফোন নম্বরও চেক করে দেখা হচ্ছে। নিহত নুরুলের স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ার গুঞ্জন থাকলেও তা তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে।
পুলিশের রমনা বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার বলেন, নিহতের স্ত্রী নুরানী ও বন্ধু নাগরীকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। খুনে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। রিমান্ড শেষে বিষয়টি পরিষ্কার হবে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, নাগরীর সঙ্গে নুরুল ইসলামের স্ত্রীর অবৈধসম্পর্ক চলছিল। নুরুল ইসলাম ব্যবসায়িক প্রয়োজনে বাসায় বাইরে গেলেই হাজির হতেন নাগরী। দীর্ঘ সময় সেখানে কাটাতেন। সম্প্রতি নাগরী বন্ধু নুরুল ইসলামের স্ত্রীর জন্য ১২ লাখ টাকা দামের গাড়ি উপহারের তথ্যও আমরা পেয়েছি। সেই গাড়ির চালক সেলিমকে জিজ্ঞাসাবাদে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। ওই হত্যাকাণ্ডে নাগরী ও স্ত্রী নুরানীর যোগসাজশ রয়েছে বলে ধারণা। তবে তদন্তে শেষে হত্যার মোটিভ জানা যাবে।
নিহত নুরুল ইসলামের অ্যাপার্টমেন্টের ব্যবস্থাপক বাবু কুমার জানান, এই ভাড়া বাসায় বছরখানেক ধরে বসবাস করে আসছিলেন নুরুল ইসলাম। মাঝে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন তিনি। এরপর থেকে বিশ্রামে বেশি সময় থাকতেন তিনি। কোনো কারণে নুরুল ইসলাম বাইরে গেলে নাগরী এসে হাজির হতেন। নুরুল ইসলাম থাকতেও বাসায় আসতেন তিনি। নাগরীর সঙ্গে নিহতের স্ত্রীর পরকীয়ার গুঞ্জন আশপাশে ছড়িয়েছিল। নুরুল ইসলামের পরিবারকে একটি প্রাইভেটকার উপহার দেয়ার পর সে সন্দেহ আরও জোরালো হয়। নুরুল ইসলামের মরদেহ উদ্ধারের আগের দিন সর্বশেষ ওই বাসায় নাগরীই এসেছিলেন বলেও দাবি করেন তিনি।
কবি নাগরীর বিরুদ্ধে অন্যের লেখা চুরি করে নিজের বলে চালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নামি লেখক বলেন, ‘মাঝে মধ্যেই নাগরীর ব্যাপারে আমরা (লেখকরা) বিভ্রান্ত হই। তিনি মেধাবী তরুণ লেখকদের লেখা গ্রন্থ হিসেবে প্রকাশ করার কথা বলে হাতিয়ে নেন। পরে সেগুলো নিজের নামে প্রকাশ করেন। বিষয়টি নিয়ে তার কাছে অভিযোগ করলে তিনি ভাল অঙ্কের টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করেন।
প্রসঙ্গত, শাহাবুদ্দীন নাগরী একাধারে কবি, গীতিকার, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, সুরকার, গায়ক ও নাট্যকার। দেশের প্রথিতযশা এই কবি ও সাহিত্যিক জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক কর্মকর্তা।