হোম > সারা দেশ > ঢাকা

থানা-হাজতে রাখা হয়নি, সহজেই পালিয়েছেন সাবেক ওসি শাহ আলম

নুরুল আমিন হাসান, উত্তরা (ঢাকা)  

আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০: ৩৩
সাবেক ওসি শাহ আলম, উত্তরা পূর্ব থানার ওসি মহিবুল্লাহ। ছবি: সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যার অভিযোগে কুষ্টিয়া থেকে গ্রেপ্তার হওয়া সাবেক ওসি শাহ আলমকে হাজতে রাখা হয়নি। তিনি থানাতে বেশ আদর-যত্নেই ছিলেন। এক পরিদর্শকের ফাঁকা কক্ষে ছিলেন তিনি। এরপর সুযোগ বুঝে ওয়াশরুমে যাওয়ার কথা বলে পালিয়ে যান।

আজ শুক্রবার প্রত্যক্ষদর্শী ও থানা-পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

পুলিশের সূত্র জানায়, কুষ্টিয়া থেকে থেকে গ্রেপ্তার করে উত্তরা পূর্ব থানায় নিয়ে আসার পর শাহ আলমকে হাজতখানায় রাখা হয়নি। এমনকি হাতকড়াও পরানো হয়নি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কখনো কখনো তাঁকে রাখা হতো ওসির কক্ষে। এ ছাড়া বাকি সময় তিনি ছিলেন পরিদর্শকের (অপারেশন) ফাঁকা কক্ষে। সেখানে চেয়ার, টেবিল থেকে বিছানা, টিভি সবই ছিল।

কোনো এক কাজে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে উত্তরা পূর্ব থানায় গিয়েছিলেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাঁদের একজন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি থানায় গিয়ে দেখি, ওসি শাহ আলমকে জামাই আদর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন একজন পরিদর্শক। তাঁকে দেখে তো বুঝতেই পারি নাই, সে যে একজন হত্যা মামলার আসামি। মনে করেছিলাম তিনি থানার ওসির মেহমান। বারবার জিজ্ঞাসা করা হচ্ছিল, তিনি নাস্তা করেছেন কিনা, কী নাস্তা করবেন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উত্তরা বিভাগে কর্মরত পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকা বলেন, উত্তরা পূর্ব থানার ওসি মহিববুল্লাহ ও গ্রেপ্তারের পর পালিয়ে যাওয়া ওসি শাহ আলম বন্ধু ছিলেন। এক সঙ্গেই তাঁরা পুলিশে যোগ দিয়েছেন। ওসি শাহ আলমের জন্য ওসি মহিবুল্লাহর একটু বেশিই ‘সিমপ্যাথি’ ছিল।

গতকাল বৃহস্পতিবার থানায় কর্মরত ছিলেন উপ–পরিদর্শক (এসআই) পদমর্যাদার এমন এক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পালিয়ে যাওয়ার আগ মুহূর্তে শাহ আলম পরিদর্শকের (অপারেশন) রুমে ছিলেন। তিনি ওয়াশরুমে যাওয়ার কথা বলে রুম থেকে বেরিয়ে পালিয়েছেন।’

এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ–পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইতিমধ্যে পালিয়ে যাওয়া ওসির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এখন সব বিষয় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, মহাসড়ক অবরোধ

হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারের পর উত্তরা পূর্ব থানা থেকে সাবেক ওসি শাহ আলম পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় আজ দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কের উত্তরার বিএনএস সেন্টার অবরোধ করে বিক্ষোভ করে ছাত্র–জনতা।

দুই শতাধিক ছাত্র–জনতা জড়ো হয়েছিলেন। এতে মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশের আশ্বাসে তাঁরা মহাসড়ক ছেড়ে দেন।

আন্দোলনকারী ছাত্র–জনতার দাবি, দ্রুত সময়ের মধ্যে সাবেক ওসি শাহ আলমকে গ্রেপ্তার করতে হবে। তা না হলে ছাত্র–জনতা উত্তরায় কঠোর কর্মসূচি দেবে। শাহ আলমকে পালাতে সহযোগিতাকারী উত্তরা পূর্ব থানার পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।

ওসির আদেশে জ্বালানি আনতে গিয়ে বরখাস্ত এএসআই

সাবেক ওসি শাহ আলম পালিয়ে যাওয়ার পরপরই দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত হন উত্তরা পূর্ব থানার এএসআই সাজ্জাদ হোসেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার আমার কোনো ডিউটি ছিল না। আমাকে ওসি স্যার আব্দুল্লাহপুর থেকে গাড়ির তেল (জ্বালানি) আনতে পাঠিয়েছিলেন। তেল নিয়ে এসে শুনি গ্রেপ্তার হওয়া সাবেক ওসি শাহ আলম পালিয়েছেন।’

সাময়িক বরখাস্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি একজন এএসআই, ছোট চাকরি করি। আমার কিছু বলার নাই।’ থানা ও আসামির নিরাপত্তার দায়িত্বের বিষয়ে সাজ্জাদ বলেন, ‘আমি তো একজন এএসআই। আমি কি থানা বা আসামির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকতে পারি!’

পরে ওসি মহিববুল্লাহর কাছে ওই এএসআইকে গাড়ির জ্বালানি আনতে পাঠানোর বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন।

ওসি প্রত্যাহার

থানা থেকে সাবেক ওসি শাহ আলম পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় এএসআই সাজ্জাদ হোসেনকে সাময়িক বরখাস্তের পর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহিববুল্লাহকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

ডিএমপির পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে আজ শুক্রবার তাঁকে প্রত্যাহার করা হয়।

সারা দেশে রেড অ্যালার্ট জারি

রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানা থেকে পালানো সাবেক ওসি শাহ আলমকে গ্রেপ্তারে সারা দেশে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। প্রত্যাহার হওয়ার আগে উত্তরা পূর্ব থানার ওসি মো. মহিবুল্লাহ আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য জানান।

ওসি মহিবুল্লাহ বলেন, সাবেক ওসি শাহ আলমকে ধরতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সারা দেশে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। তাঁকে গ্রেপ্তারসহ সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তাঁকে ধরতে যৌথ অভিযান চালাচ্ছে সেনাবাহিনী, র‍্যাব ও পুলিশের সবকটি ইউনিট। স্থলবন্দর, বিমানবন্দর সহ সব জায়গায় সতর্ক করা হয়েছে। শিগগিরই তাঁকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা factcheck@ajkerpatrika.com

অমর একুশে বইমেলা: স্টল বরাদ্দ নিয়ে বিভক্তি

পর্যটন মৌসুম শেষের পথে দেখা নেই বিশেষ ট্রেনের

নদীর জমি দখল, হচ্ছে বিক্রিও

নেতার ঘেরে আটকা নদীর খননকাজ