বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দুই হাতে গুলি চালিয়ে আলোচনায় আসা রাজশাহীর সন্ত্রাসী জহিরুল হক রুবেল মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে এক স্কুলশিক্ষকের ৩ কাঠা জমি দখল করে নেন। এক ব্যক্তিকে বিক্রেতা দেখিয়ে ওই জমি তিনি বেচে দেন পুলিশের এক কনস্টেবলের কাছে। ভুক্তভোগী স্কুলশিক্ষক শনিবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেছেন।
এত দিন প্রাণভয়ে রাকিবুল ইসলাম নামের ওই স্কুলশিক্ষক নিজের জমিতেই যেতে পারেননি। তবে আওয়ামী সরকারের পতনের পর যুবলীগ কর্মী জহিরুল হক রুবেল গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে গেলে রাকিবুল নিজের জমিতে যান। সেখানে সাইনবোর্ডও দিয়েছেন। শনিবার রাজশাহী নগরের হড়গ্রাম মৌজার ওই জমির সামনের রাস্তায় সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে রাকিবুল ইসলাম জানান, তাঁর বাড়ি জেলার চারঘাট উপজেলার বাসুপাড়া গ্রামে। তিনি চারঘাটের পাইটখালী উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। ২০১৬ সালে তিনি তাঁর কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে বিক্রয় কবলা দলিল মূলে বাবর আলী, অসীম ঘোষ ও রংলাল নামের তিন ব্যক্তির কাছ থেকে হড়গ্রাম মৌজার আরএস ৮০৭ নম্বর খতিয়ানের ২৩৪৩ নম্বর দাগের ৩ কাঠা জমি কেনেন। এরপর তিনি যথারীতি খাজনা-খারিজ করে নেন। জমিতে সীমানাপ্রাচীরও দেন।
তিন বছর আগে একদিন খবর পান, সন্ত্রাসী রুবেল তাঁর জমির সীমানাপ্রাচীর ভেঙে ফেলছেন। তিনি ছুটে এসে বাধা দেন। তখন সন্ত্রাসী রুবেল তাঁর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে বলেন, ‘এই জমি রুবেল বিশ্বাস নামের এক পুলিশ কনস্টেবল কিনে নিয়েছেন। এই জমিতে আর দাবি নিয়ে এলে গুলি করে হত্যা করা হবে’ বলে স্কুলশিক্ষককে হুমকি দেন সন্ত্রাসী রুবেল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কনস্টেবল রুবেল বিশ্বাস বলেন, ‘২০২১ সালে ওই এলাকায় আমি, আমার স্ত্রীসহ আত্মীয়স্বজন জমি কিনেছি। আমি জমি কিনেছি সুকুমার নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে। আমি রুবেলকেও চিনি না, রাকিবুলকেও চিনি না। কে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বলতে পারব না।’
এলাকার লোকজন জানান, বলরাম ঘোষ নামের এক ব্যক্তি ও তাঁর চার ছেলের হড়গ্রাম মৌজার প্রায় সাড়ে ৬ বিঘা জমি দখল করে নিয়েছিলেন সন্ত্রাসী রুবেল। স্বপন ঘোষ নামের এক ভারতীয় নাগরিককে ওয়ারিশ দেখিয়ে এসব জমি তিনি জবরদখল করে জাল দলিলের মাধ্যমে বিক্রি করেছেন। এই চক্রে ছিলেন সাবেক সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের ব্যক্তিগত সহকারী আবদুল ওয়াহেদ খান টিটু ও নগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রকি কুমার ঘোষ।
এই চক্র জমি জবরদখলের পর বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। গত ৫ আগস্টের পর যুবলীগ কর্মী রুবেল গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবদুল ওয়াহেদ খান টিটু ও রকি কুমার ঘোষের কোনো খোঁজ নেই। তাঁরা এখন আত্মগোপনে।