ঠাকুরগাঁওয়ের বৃক্ষমেলায় ক্রেতাদের নজর কেড়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বনসাই। একেকটি বনসাইয়ের দাম চাওয়া হচ্ছে ৭৫ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। বিশেষ করে বনসাই দেখার আগ্রহ নিয়ে প্রতিদিনই মেলায় ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন। ঠাকুরগাঁও শহরের কালীবাড়ী পাবলিক ক্লাব মাঠে ৩ আগস্ট শুরু হওয়া মেলা চলবে ১৩ আগস্ট পর্যন্ত।
দেশি বট বনসাই, গাছটির বয়স ২৫ বছর। শহরের আদর্শ কলোনির বাসিন্দা বনসাই আর্টিস্ট মেহেদী হাসান মুন এত বছর ধরে এই গাছের যত্ন করে আসছেন। ঠাকুরগাঁও শহরের কালীবাড়ী পাবলিক ক্লাব মাঠে আয়োজিত বৃক্ষমেলায় আনা বনসাইটির দাম হাঁকা হয়েছে ১ লাখ টাকা।
মেহেদী হাসান বলেন, ‘এবারই প্রথম বৃক্ষমেলায় বনসাইটি বিক্রির জন্য স্টলে সাজানো হয়েছে। গাছটি আকর্ষণীয় করতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। যেকোনো দর্শনার্থী গাছটি দেখে আগে কয়েকটা ছবি তুলছেন। মনে হচ্ছে, আমার স্টলে থাকা অন্য গাছগুলোর আকর্ষণ সব কেড়ে নিয়েছে এই দেশি বট। এ ছাড়া স্টলে ২৫ থেকে ৩০ প্রজাতির বনসাই রয়েছে। এর মধ্যে ২০ বছর বয়সী তেঁতুল, একই বয়সী চায়না বট, পাঁচ বছর বয়সী দেশি শেওড়া, ২১ বছর বয়সী পাকুড়সহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ।’
পলি নার্সারির স্টলে আনা হয়েছে দুর্লভ প্রজাতির ভিয়েতনামের পিংপং লঙ্গানগাছ। এই গাছের দাম হাঁকা হয়েছে ৪ হাজার টাকা। এ ছাড়া তাঁদের কাছে রয়েছে অ্যাভোকাডো, রামবুটান, ম্যানিলা চেরি চারা। নার্সারির মালিক মো. হিরো বলেন, বৃক্ষপ্রেমীরা বছরজুড়ে এই মেলার জন্য অপেক্ষা করে। এ বছর এখন পর্যন্ত গাছের বিক্রি ভালোই। তবে এবার জায়গা কম হওয়ায় বড় গাছ নিয়ে আসা যায়নি।
ক্রেতা হাবিবা বেগমের হাতে গাছসহ ডালিম ফল। তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর মেলা থেকেই গাছ কিনি। তবে এ বছর দাম বেশি রাখছেন বিক্রেতারা।’
বৃক্ষমেলায় ঘুরতে এসেছেন ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী রুমানা, সাদিয়া ও জাহেদুল। তাঁরা বলেন, ‘এই মেলায় এলে আমরা নানা প্রজাতির গাছের সঙ্গে পরিচিত হতে পারি। তাই সময় পেলেই প্রতিবছর বৃক্ষমেলায় আসি।’
ঠাকুরগাঁও সামাজিক বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সফিউল আলম মণ্ডল বলেন, ১০ দিনব্যাপী এই মেলায় এবার চেনা-অচেনা বিদেশি নানা প্রজাতির ফলের গাছ রয়েছে। পাশাপাশি মেলা প্রাঙ্গণ রঙিন করেছে বিভিন্ন জাতের ফুলের গাছ, বনজ, ফলদ ও ঔষধি গাছ। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত আসতে পারবেন দর্শনার্থীরা। মেলায় প্রবেশের জন্য কোনো টিকিট লাগবে না।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, শক্ত কাণ্ডের গাছকে নান্দনিকভাবে খর্বাকৃতি করার যে শিল্প, তাকেই বনসাই বলে। প্রকৃতিপ্রেমীরা শিল্পের জীবন্ত কাজ হিসেবে বনসাইকে বেছে নিয়েছেন। এই শিল্পের মাধ্যমে অনেক তরুণ নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের পাশাপাশি আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছেন।