ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ
প্রযুক্তিগত বা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে গতকাল রোববার দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) প্রায় দেড় ঘণ্টা বন্ধ ছিল। একই কারণে গত তিন বছরে ৭ বার, আর গত এক দশকে ১২ বার বিঘ্নিত হয়েছে পুঁজিবাজারের কার্যক্রম। মূলত স্টক এক্সচেঞ্জের অদক্ষতা, চেষ্টা ও উদ্যোগের অভাবেই এমনটি ঘটছে। তবে প্রতিবারের মতো, গতকালের বিরতি বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষভাবে ক্ষতিকর হয়ে উঠেছে। তাদের অভিযোগ যেন একধরনের অনুরণন হয়ে ফিরে আসে, প্রতিবারই তাদের দুর্ভোগ বাড়িয়ে চলেছে। অথচ, বছরের পর বছর এই সমস্যা ঠিকঠাক সমাধান না হওয়া বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একধরনের হতাশার সৃষ্টি করেছে। পুঁজিবাজারের এই স্থায়ী সমাধানের অভাব তাদের জন্য এক গভীর সংশয়ের জন্ম দিচ্ছে।
প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে গতকাল দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) প্রায় দেড় ঘণ্টা বন্ধ ছিল, যা গত তিন বছরে ৭ বার এবং এক দশকে ১২ বার ঘটেছে। মূলত স্টক এক্সচেঞ্জের অদক্ষতা, চেষ্টা ও উদ্যোগের অভাবেই এমনটি ঘটছে। প্রতিবারের মতো গতকালের বিরতিও বিনিয়োগকারীদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর ছিল। তাদের অভিযোগ, বারবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে এবং দীর্ঘ সময় ধরে এই সমস্যার সমাধান না হওয়ায় তাদের মধ্যে হতাশা ও সংশয় বাড়ছে।
এদিকে, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে লেনদেন বন্ধ থাকার জন্য বিনিয়োগকারীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছে ডিএসই। পাশাপাশি ত্রুটির কারণ বিশ্লেষণ এবং উচ্চতর তদন্তের জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সকাল ১০টায় নির্ধারিত সময়ে লেনদেন শুরু করা সম্ভব হয়নি। পরে ত্রুটি সারিয়ে বেলা সাড়ে ১১টায় লেনদেন শুরু হয়। সময়ের ঘাটতি পূরণে লেনদেনের সময় বাড়ানো হয়, যা বেলা ৩টা পর্যন্ত চলে।
এ বিষয়ে বিনিয়োগকারী সানী মাহমুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি চরম হতাশ। বারবার যান্ত্রিক ত্রুটি যুক্তিযুক্ত নয়, আর এটি প্রায়ই ঘটছে।’ তিনি বলেন, ‘এভাবে ঠিকমতো চালানো হয় না, নাকি অন্য উদ্দেশ্য আছে, তা জানি না। কিন্তু দিনের শেষে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।’
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘যান্ত্রিক ত্রুটি হতে পারে, তবে আমাদের এখানে এটি অত্যধিক হচ্ছে।’ তিনি জানান, প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তার (সিটিও) পদ এক বছর ধরে শূন্য, যা প্রধান সমস্যার একটি কারণ। সিটিও না থাকলে সমস্যা এবং তার সমাধানে নির্দেশনা দেওয়া কারও পক্ষে সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, বিনিয়োগকারীদের জানানো উচিত, কেন এমন ঘটছে।
সমস্যা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে
ডিএসই এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সেন্ট্রালাইজড অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (ওএমএস) কনফিগারেশন সমস্যার কারণে এই ট্রেডিং কার্যক্রমে বিলম্ব ঘটে। ২০১৪ সালে ডিমিউচুয়ালাইজেশনের পর নাসডাক ওএমএক্স এবং ফ্লেক্সট্রেড সিস্টেমের সহযোগিতায় ডিএসই অটোমেটেড ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম চালু করে, যা ১০ বছর ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে। লেনদেন শেষে ওএমএস থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্রোকারেজ হাউসগুলো তথ্য পেয়ে ক্লিয়ারিং ও সেটেলমেন্ট সম্পন্ন করে সিডিবিএল এবং পরবর্তী দিনের লেনদেনের জন্য তথ্য হালনাগাদ করে।
কেন বারবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি
আগেও ডিএসইর লেনদেনে কারিগরি ত্রুটির কারণে একাধিকবার বিঘ্নিত হয়েছে। ২০২৪ সালের ১০ মার্চ ত্রুটির কারণে সূচকে অস্বাভাবিক পরিসংখ্যান দেখা যায় এবং ২০২৩ সালের আগস্টে ফ্লেক্সট্রেডে ত্রুটির কারণে শেয়ার কেনাবেচার নিষ্পত্তি পরদিন ভোরে হয়। ২০২২ সালের অক্টোবরেও এক সপ্তাহে দুবার কারিগরি ত্রুটি ঘটে। এসব কারণে বিএসইসি ডিএসইর সিটিওকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়েছিল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর সাবেক সিটিও জিয়াউল করিম বলেন, বারবার এ ধরনের সমস্যা হওয়া উচিত নয়।
কোনো গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা
জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়াতে ডিএসই কার্যকরী উদ্যোগ নেবে এবং কোনো গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ডিএসইর পরিচালক রিচার্ড ডি রোজারিও আজকের পত্রিকাকে বলেন, এটি ওএমএস-সংক্রান্ত সমস্যা, যার সমাধান ও কারণ খতিয়ে দেখতে কমিটি হয়েছে। বর্তমানে এমডি, সিওও, সিটিও পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। এই পদে নিয়োগ হলে সমস্যাগুলোর সমাধান হয়তো সহজ হবে।
এ বিষয়ে ডিএসইর একজন সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ব্যবহৃত প্রযুক্তি পুরোনো, যা নিয়ে ডিএসইর কর্মকর্তারা হয়তো একমত হবেন না। একটার পর একটা হার্ডওয়্যার অ্যাড করা হচ্ছে। তবে এটি পরিবর্তনের পরিকল্পনা করেছিলাম। দায়িত্বে থাকলে অবশ্যই তা করতাম।’