সিনেমাটি দেখার দায়িত্ব রয়েছে এই প্রজন্মের

এম এস রানা

প্রকাশ : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮: ২৮
জয়া আহসান। ছবি: সংগৃহীত

কেমন আছেন, কী করছেন এখন?

ভালো আছি। কয়েকটা দিন ফ্রি আছি। এখন শীতের চারা বুনছি। একটা সবজির বাগান করেছি।

২৭ ডিসেম্বর আপনার অভিনীত ‘নকশী কাঁথার জমিন’ সিনেমাটি মুক্তি পাচ্ছে। এর শুটিং হয়েছিল কবে?

শুটিং হয়েছিল বছর তিনেক আগে। তারপর তো সিনেমাটি তৈরি হলো। মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে অসম্ভব স্ট্রং একটা গল্প।

শুটিংয়ের পর অনেক দিন চলে গেল। সিনেমা মুক্তি পেতে এত দেরি হওয়ার কারণ কী ছিল?

হ্যাঁ, অনেক দিন চলে গেল। আসলে এটার বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। প্রযোজক ভালো বলতে পারবেন।

সিনেমাটি তো বিশ্বের বেশ কয়েকটি উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে।

হ্যাঁ, সিনেমাটি অনেক জায়গায় ট্রাভেল করেছে। বেঙ্গালুরু আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে এশিয়ান কম্পিটিশন বিভাগে পুরস্কার জিতেছে। ৫৩তম ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অব ইন্ডিয়ায় (আইএফএফআই) আইসিএফটি-ইউনেসকো গান্ধী মেডেলের জন্য নমিনেশন পেয়েছিল। দক্ষিণ কোরিয়ার ১৪তম বুসান পিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে বেস্ট ফিচার ফিল্মের পুরস্কার পেয়েছে। লন্ডন বাঙালি চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে।

সিনেমাটি নিয়ে উৎসবে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা কেমন?

আইএফএফআইতে যখন সবাই স্ট্যান্ডিং অভেশন দিল, সেটা খুবই ভালো লাগার ছিল। আসলে আপনি যখন আন্তর্জাতিক জায়গায় নিজের কিছু দেখাতে চাইবেন, তখন আপনার যত অরিজিনাল জায়গাটা দেখাবেন, সেটা দিয়েই সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক হতে পারবেন। বিদেশিরা গ্রামবাংলার মানুষের এই ঘটনাগুলো দেখতে পেরেছে, বুঝতে পেরেছে, সে জন্য ভীষণ রকম কানেকটেড ফিল করেছে। তারা আমাদের দেশটাকে দেখতে পেরেছে। তাদের অভিব্যক্তি খুবই ভালো ছিল। স্বাভাবিকভাবে সব মিলিয়ে সিনেমাটি নিয়ে অভিজ্ঞতা দারুণ।

উৎসবগুলোতে সিনেমাটি নিয়ে দর্শকের প্রতিক্রিয়া কেমন পেয়েছেন?

খুব ভালো প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। যেখানে গিয়েছি, লোকজন খুব পছন্দ করেছে। আমাদের আসল ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বাংলাদেশের জন্মের সময়টা দেখতে পেয়ে বিদেশিদের খুবই ভালো লেগেছে।

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তৈরি অন্যান্য সিনেমার গল্প থেকে এই সিনেমার মূল পার্থক্যটা কী?

সাধারণত আমরা গল্পে যেটা দেখে থাকি, মুক্তিযুদ্ধটাকে কোনো একজন হিরোকে ধরে গ্লোরিফাই করে দেখানো হয় কিংবা যুদ্ধের কিছু দৃশ্য দেখানো হয়। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় গণমানুষের যে অংশগ্রহণ ছিল, সেটা কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সিনেমাগুলোতে কম উঠে এসেছে। নকশী কাঁথার জমিন একেবারেই গণমানুষের অংশগ্রহণ, চাষাভুষা, গ্রামের সাধারণ যে মানুষ, তারা কীভাবে অংশগ্রহণ করেছিল, তাদের জীবনের গল্প। এই জায়গা থেকে এটা ভীষণ রকম ইউনিক।

দৃশ্যায়ন এবং পটভূমিতে ভিন্নতা কী দেখা যাবে? কীভাবে এগিয়েছে গল্প?

ভিন্নতা আসলে, এটা একটা পরিবারের গল্প। যুদ্ধের সময় ওই পরিবার কী রকম পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছে, সেই গল্প। মেয়েরা কেমন ছিল; দুই নারীর জীবনে, দুই বোনের জীবনে মুক্তিযুদ্ধটা কী; কেবল মুক্তিযুদ্ধই নয়, ছোটবেলা থেকে বৃদ্ধ জীবন অবধি তাদের জীবনের সবকিছু এই নকশী কাঁথায় বুনে রেখেছে। গল্পটা তাদের পারসপেকটিভ থেকে দেখা, তাই তাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সব ঘটনার খণ্ড খণ্ড অংশ উঠে এসেছে।

আপনি কোন চরিত্রে অভিনয় করেছেন?

বড় বোন রাহেলার চরিত্রে অভিনয় করেছি। আমার ছোট বোন সালেহার চরিত্রে অভিনয় করেছেন সেঁওতি।

‘নকশী কাঁথার জমিন’ সিনেমার দৃশ্যে জয়া ও সেঁওতি। ছবি: সংগৃহীত

মূল গল্পে দুই বোনের বিয়ে হয় একটি পরিবারের দুই ভাই জবর ও সবরের সঙ্গে। মুক্তিযুদ্ধের সময় জবর যোগ দেয় রাজাকার বাহিনীতে, কিন্তু তার ছেলে সাহেবালি অংশ নেয় মুক্তিবাহিনীতে। আবার সবর যোগ দেয় মুক্তিবাহিনীতে, কিন্তু তার ছেলে রাহেলিল্লাহ নাম লেখায় রাজাকার বাহিনীতে। পরিবারের পুরুষদের এই মতবিরোধ আর দ্বন্দ্বের মাঝে দুই নারীর নির্বাক প্রতিবাদ আর সংগ্রামের গল্প। এই চরিত্রগুলোতে কারা অভিনয় করেছেন?

দুই ভাইয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন রওনক হাসান ও ইরেশ যাকের। আর দুই ছেলের চরিত্রে সৌম্য জ্যোতি ও দিব্য জ্যোতি। অসম্ভব ভালো অভিনয় করেছেন তাঁরা।

এত স্বল্প সময়ের ঘোষণায় মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। মানুষকে সিনেমাটি সম্পর্কে জানাতে প্রচারণার কী পরিকল্পনা নিয়েছেন?

এটা ঠিক বলতে পারব না। প্রযোজক, পরিচালক ভালো বলতে পারবেন। তবে একটা সিনেমা মুক্তি দিতে গেলে নানা রকম বিষয় থাকে, ওসব পার হয়ে তাঁরা যে এই বিজয়ের মাসে সিনেমাটি মুক্তি দিতে পারছেন, এটা আমাদের জন্য ভীষণ রকম আনন্দের।

সিনেমাটি নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কী?

আমি চাইব, এই প্রজন্মের মানুষ যাঁরা আছেন, তাঁরা যেন আগের প্রজন্ম তাঁদের জন্য কী করে গেছেন, কীভাবে আমাদের দেশটার মানচিত্র তৈরি হলো; কত রক্ত, ঘাম, শ্রম এর পেছনে আছে, সেটা যদি তাঁরা দেখতে চান এবং আমরা তো শুধু হিরোদেরকে দেখি, গণমানুষের যে অংশগ্রহণ ছিল, সেটা যদি দেখতে চান, তাহলে এই সিনেমা দেখুন। আমি তো বলব, সবার; বিশেষ করে, সিনেমাটি দেখার এক ধরনের দায়িত্ব রয়েছে এই প্রজন্মের মানুষদের।