হোম > বিনোদন

স্মৃতিতে স্মরণে অভিনেত্রী অঞ্জনা

বিনোদন ডেস্ক

প্রকাশ : ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯: ১১
অঞ্জনা রহমান (১৯৬৫-২০২৫)। ছবি: সংগৃহীত

ভক্ত-প্রিয়জনদের কান্নায় ভাসিয়ে চলে গেলেন অভিনেত্রী অঞ্জনা রহমান। দুই সপ্তাহ আগে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। অবস্থার অবনতি ঘটলে বাড়ি থেকে হাসপাতালের বিছানা, সিসিইউ, আইসিইউতে লাইফ সাপোর্ট...কোনোভাবেই রাখা গেল না তাঁকে। অভিনেত্রীর এমন প্রয়াণে নেমেছে শোকের ছায়া। সহশিল্পীরা জানাচ্ছেন শ্রদ্ধাঞ্জলি, স্মৃতিতে স্মরণে আঁকছেন তাঁর ছবি...

মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা, প্রযোজক ও অভিনেতা। ছবি: সংগৃহীত

তার মতো শিল্পী পেতে হলে অনেক দিন অপেক্ষা করতে হবে
মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা, প্রযোজক ও অভিনেতা
আমার প্রযোজিত ও অভিনীত ‘দস্যু বনহুর’ সিনেমা দিয়ে চলচ্চিত্রে নায়িকা হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করে অঞ্জনা। তাই আমাকে অভিভাবক মানত সে। সবাইকে বলত—উনি আমার গুরু। সব সময় ফোন করে আমার খোঁজখবর নিত, আমার বাসায় আসত, যতক্ষণ থাকত, হইহুল্লোড় করত, আনন্দ করত। ভীষণ হাসিখুশি আর মিশুক মানুষ ছিল অঞ্জনা। সব সময় সেজেগুজে থাকতে ভালোবাসত, মন খরাপ করাটা তার স্বভাবেই ছিল না। নিজে যেমন হাসিখুশি থাকতে চাইত, সবাইকে তেমনি হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করত। বড় অসময়ে চলে গেল অঞ্জনা। সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির একটা বাতি নিভে গেল। খুব ভালো নাচতে পারত সে। নৃত্যশিল্পী থেকেই নায়িকা হয়েছে অঞ্জনা। তার মতো একজন শিল্পী পেতে হলে ইন্ডাস্ট্রিকে অনেক দিন অপেক্ষা করতে হবে।

কাজের মাধ্যমে বেঁচে থাকবেন অঞ্জনা
উজ্জল, অভিনেতা
অঞ্জনা দীর্ঘদিন যাবৎ চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত। যাঁরা এখন পরিণত অবস্থানে আছি, তাঁদের মধ্যে অঞ্জনা ছিলেন অন্যতম। অঞ্জনা শুধু নায়িকা নন, বিশেষায়িত নৃত্যশিল্পীদের একজন ছিলেন। সেখান থেকেই চলচ্চিত্রে আসেন তিনি। তখন সিনেমায় মানুষের মন জয় করা কঠিন কাজ ছিল। সেই কঠিন কাজটি অঞ্জনা করেছেন। অনেক জনপ্রিয় সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছেন। দর্শকের সামনে তাঁর প্রতিভার জানান দিয়েছেন। আমাদের মধ্যে কখনো জেলাসি ছিল না, ভালো কাজ করার প্রতিযোগিতা ছিল। তাঁর চলে যাওয়াটা চলচ্চিত্রের জন্য বিরাট ক্ষতি। তাঁর কাজের মাধ্যমেই বেঁচে থাকবেন তিনি। আর মানুষ হিসেবে খুব সহজ-সরল ছিলেন। সবার সঙ্গে আন্তরিক সম্পর্ক ছিল। তাঁর জন্য অনেক দোয়া। যেখানেই থাকেন তিনি যেন ভালো থাকেন।

একই ওস্তাদের কাছে আমরা ক্ল্যাসিকাল শিখতাম
সাবিনা ইয়াসমীন, সংগীতশিল্পী
অঞ্জনা যে এত তাড়াতাড়ি আমাদের ছেড়ে চলে যাবে একটুও বুঝতে পারিনি। ওকে কোনো দিন অসুস্থ দেখিনি, শরীর খারাপ দেখিনি, ওষুধ খেতে দেখিনি। আমরা অনেক ছোটবেলার বান্ধবী। ৬-৭ বছর বয়স থেকেই আমাদের বন্ধুত্ব। একই ওস্তাদের কাছে আমরা ক্ল্যাসিকাল শিখতাম। বড় হওয়ার পরেও দেশের বাইরে কোনো অনুষ্ঠানে গেলে একসঙ্গে রুম শেয়ার করেছি। একসঙ্গে ঘোরাফেরা করেছি। একেবারে অভিন্ন হৃদয়ের বন্ধু ছিলাম আমরা। ওর আত্মা যেন চিরশান্তিতে থাকে, এটাই চাই।

রোজিনা, অভিনেত্রী। ছবি: সংগৃহীত

মনে দুঃখ থাকলেও সব সময় হাসিমুখে থাকতেন
রোজিনা, অভিনেত্রী
অঞ্জনাদি খুব ডিফারেন্ট একজন শিল্পী ছিলেন। এত ভালো মনের মানুষ ছিলেন, হাস্যোজ্জ্বল থাকতেন সব সময়। ওনার সঙ্গে অনেক সিনেমায় কাজ করেছি, আউটডোর শুটিংয়ে গিয়েছি একসঙ্গে। অনেক স্মৃতি তাঁর সঙ্গে আমার। একটি স্মৃতি খু্ব মনে পড়ছে। রাজ্জাক ভাইয়ের প্রোডাকশন ও পরিচালনায় ‘অভিযান’ সিনেমার শুটিংয়ে প্রায় এক মাস বড় জাহাজে ছিলাম। সারাক্ষণ সুখ-দুঃখের কথা হতো আমাদের। অভিনয়জীবনের বাইরেও আমাদের ব্যক্তিগত অনেক বিষয় থাকে। অনেক চাওয়া থাকে, অপূর্ণতা থাকে, মান-অভিমান থাকে, দুঃখ থাকে। এসব নিয়েও তাঁর সঙ্গে কথা হতো। মনের মধ্যে দুঃখ থাকলেও মানুষের সামনে এলে সব সময় হাসিমুখে থাকতেন। তাঁর সঙ্গে সিনিয়র-জুনিয়র সবার ভালো সম্পর্ক ছিল। অঞ্জনাদির চলে যাওয়া আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে শূন্যতা তৈরি করল। বাংলা চলচ্চিত্রে তাঁর যে কাজ রয়ে গেল, সেই কাজের মাঝেই বেঁচে থাকবেন তিনি।

নূতন, অভিনেত্রী। ছবি: সংগৃহীত

সবাই বলত আমি আর অঞ্জনা দুই বোন
নূতন, অভিনেত্রী
অঞ্জনা যেখানে যেত সব জায়গায় হাসিখুশি থাকত। কারও সঙ্গে কখনো খারাপ ব্যবহার সে করেনি। অঞ্জনার সঙ্গে আমার হাজারটা স্মৃতি রয়েছে। কত মজা করেছি আমরা। ব্যক্তি অঞ্জনা খুব ভালো মানুষ ছিল। একেবারে বাচ্চাদের মতো ছিল। সবাই বলত, আমি আর অঞ্জনা দুই বোন। আমার সেই বোন চলে গেল। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন। কী এমন হলো যে হঠাৎ করে অঞ্জনা আমাদের ছেড়ে চলে গেল!

মিশা সওদাগর, অভিনেতা। ছবি: সংগৃহীত

আমরা শিল্পী হারিয়েছি, আর পৃথিবী একজন ভালো মানুষ হারিয়েছে
মিশা সওদাগর, অভিনেতা
অঞ্জনা আপা ছিলেন পুরোপুরি স্পোর্টসওম্যান, একজন ভালো মানুষ। উনি ছিলেন ডাউন টু আর্থ। শাবানা আপা থেকে শুরু করে একেবারে জুনিয়র শিল্পীদের সঙ্গেও একই রকম ব্যবহার করতেন। তাঁর কাছে কোনো ভেদাভেদ ছিল না। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে তাঁর বিরাট অবদান। তিন শর মতো সিনেমায় অভিনয় করেছেন। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। আমরা শিল্পী হারিয়েছি আর পৃথিবী একজন ভালো মানুষকে হারিয়েছে।

শাবনূর, অভিনেত্রী। ছবি: সংগৃহীত

অঞ্জনা আপার চলে যাওয়া মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে
শাবনূর, অভিনেত্রী
প্রিয় অঞ্জনা আপার এভাবে চলে যাওয়া মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। তিন শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করা গুণী এই শিল্পীর অকাল মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত। তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। মাত্র দুই সপ্তাহ আগে আমার জন্মদিনে, আমাদের দুজনের একসঙ্গে তোলা কিছু ছবি দিয়ে উইশ করে তিনি ফেসবুকে পোস্ট করে লিখেছিলেন, ‘শুভ জন্মদিন।’ আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত, শীর্ষস্থানীয় এক মহাতারকা তিনি।

মতিন রহমান, পরিচালক। ছবি: সংগৃহীত

অঞ্জনার বড় গুণ ছিল কৃতজ্ঞতা জানানোর ক্ষমতা
মতিন রহমান, পরিচালক
অঞ্জনার সবচেয়ে বড় গুণ ছিল কৃতজ্ঞতা জানানোর ক্ষমতা। সাধারণত কোনো শিল্পীর মধ্যে এই গুণটি আমি অন্তত খুঁজে পাই না। একজন শিল্পী যখন সাফল্যের শিখরে পৌঁছে যায়, তার যখন চারদিকে সম্মান বেড়ে যায়, তখন সেই শিল্পী পেছনের কথা মনে রাখে না। নিজেকে প্রকাশ করতেই ব্যস্ত থাকে। অঞ্জনা ছিল ব্যতিক্রম। সব সময় সে পেছনের কথা বলত। কে তার জন্য কতটুকু করেছে, সেটা সব সময় স্মরণ করত। সে ছিল অসম্ভব মেধাবী, সরল ও পরিশ্রমী শিল্পী। তাঁর বিদেহী আত্মার পরম শান্তি কামনা করি।

একনজরে অঞ্জনা
জন্ম: ২৭ জুন ১৯৬৫, ঢাকা।
অভিনয় শুরু: ১৯৭৬ সালে, বাবুল চৌধুরীর ‘সেতু’ সিনেমা দিয়ে।
প্রথম নায়ক: সোহেল রানা।
মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম সিনেমা: শামসুদ্দিন টগরের ‘দস্যু বনহুর’।
পরিচিতি পান: আজিজুর রহমানের ‘অশিক্ষিত’ সিনেমার মাধ্যমে।
আলোচিত সিনেমা: ‘মাটির মায়া’, ‘অশিক্ষিত’, ‘চোখের মণি’, ‘সুখের সংসার’, ‘জিঞ্জির’, ‘অংশীদার’, ‘আনারকলি’, ‘বিচারপতি’, ‘অভিযান’, ‘মহান’, ‘রাজার রাজা’, ‘বিস্ফোরণ’, ‘ফুলেশ্বরী’, ‘রাম রহিম জন’, ‘নাগিনা’, ‘পরিণীতা’ ইত্যাদি।
উল্লেখযোগ্য অর্জন: বাংলাদেশ ছাড়াও অভিনয় করেছেন ৯টি দেশের ১৩টি ভাষার সিনেমায়।
জাতীয় পুরস্কার: দুইবার। ‘পরিণীতা’ ও ‘গাঙচিল’ সিনেমার জন্য।
মৃত্যু: ৪ জানুয়ারি ২০২৫, ঢাকা।