সিরিয়ার নতুন প্রশাসনের শিক্ষামন্ত্রী নাজির মোহাম্মদ আল-কাদরি জাতীয় পাঠ্যক্রমে ব্যাপক সংস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল বুধবার তিনি এ ঘোষণা দেন। যা দেশজুড়ে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।
আরব নিউজের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এসব পরিবর্তন দেশটির সব শিক্ষাস্তরে প্রভাব ফেলবে। বিশেষত ধর্মীয় শিক্ষা ও ইতিহাসের মতো বিষয়গুলোতে বড় ধরনের সংশোধন করা হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত সংস্কারের মধ্যে রয়েছে পাঠ্যবই থেকে সিরিয়ার ঐতিহাসিক বহুদেবতাবাদী ধর্মের ইতিহাস বাদ দেওয়া। এ ছাড়া মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বহু পাঠ্যবই সম্পূর্ণ নতুন করে লেখা হবে। কিছু অংশ মুছে ফেলা হবে, কিছু পুনর্লিখিত হবে এবং চিত্র-অঙ্কন সংশোধন বা অপসারণ করা হবে।
এই পরিবর্তনের অংশ হিসেবে ক্ষমতাচ্যুত আসাদ শাসনের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়বস্তু সরিয়ে ফেলা হবে। একই সঙ্গে ইতিহাস ও দর্শন বইয়ে দেবতাদের উল্লেখ থাকা অংশগুলো পুনর্লিখিত হবে। সিরিয়ার পাঠ্যক্রমে আগে ওসমানী সাম্রাজ্যের শাসনকে ‘নির্মম ওসমানী কর্তৃত্ব’ হিসেবে বর্ণনা করা হতো। যা সম্পূর্ণ বাদ দেওয়া হবে। দর্শন বিষয়েও বড় পরিবর্তন আনা হচ্ছে, যেখানে ‘চীনা দর্শনচিন্তা’ বিষয়টি বাদ দেওয়া হবে এবং বাকি অংশ পুনর্লিখিত হবে।
ইংরেজি ভাষার বিষয়েও বিস্তর পরিবর্তন আনা হচ্ছে, যেখানে বিভিন্ন স্তরের অধ্যায় সম্পূর্ণ বাদ দেওয়া হবে বা পুনর্লিখিত হবে। এ ছাড়া আসাদ পরিবারের চিত্র পাঠ্যবই থেকে মুছে ফেলা হবে।
শিক্ষামন্ত্রী জানান, এই শিক্ষাবর্ষের জন্য পূর্বের শিক্ষাক্রম সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘এই বিষয়টি আগে আসাদ সরকারের প্রচারণার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হতো এবং বাথ পার্টির আদর্শ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এর পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের গ্রেড ইসলামিক বা খ্রিষ্টান ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে। ধর্মীয় শিক্ষা এখন থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় সামগ্রিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।’
এই পরিবর্তনগুলো সিরিয়ার শিক্ষাক্ষেত্রে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। তবে এটি দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও বিতর্ক উসকে দিয়েছে। মার্কিন একাডেমিশিয়ান জোশুয়া ল্যান্ডিস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে মন্তব্য করেছেন, এই পরিবর্তন ‘জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গির দিকে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়।’
সিরিয়ান সাংবাদিক হুসাম হামুদ বলেছেন, ‘আসাদ শাসনের চিহ্ন মুছে ফেলার পাশাপাশি বাকি পরিবর্তনগুলোতে ধর্মীয় ছাপ স্পষ্ট।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা শুক্রবার দেশব্যাপী প্রতিবাদের ডাক দিয়েছেন। তবে সিরিয়ার সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ আরব এই প্রতিবাদের সমাবেশের সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।
সমালোচনার জবাবে শিক্ষামন্ত্রী নাজির মোহাম্মদ আল-কাদরি আজ বৃহস্পতিবার সিরিয়ার সংবাদ সংস্থা সানাকে জানিয়েছেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত বিশেষ কমিটি গঠন করে পাঠ্যক্রম পর্যালোচনা ও নিরীক্ষা সম্পন্ন না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত সিরিয়ার স্কুলগুলোতে পাঠ্যক্রম বর্তমান অবস্থাতেই থাকবে।’
আল-কাদরি আরও জানান, প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলো আসাদ শাসনের সময় ইসলামিক শিক্ষার পাঠ্যক্রমে থাকা ভুল ব্যাখ্যাগুলো সংশোধনের জন্য পরিকল্পিত। তিনি বলেন, ‘পূর্বে কিছু কোরআনের আয়াতের ভুল ব্যাখ্যা প্রচলিত ছিল। আমরা এখন সব শিক্ষাস্তরে সঠিক ব্যাখ্যা সংযুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছি।’
পাঠ্যক্রমের এই পরিবর্তন নিয়ে বিতর্ক সিরিয়ার সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তবে, সিরিয়ার নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি ওরফে আহমেদ আল-শারা সম্প্রতি, শীর্ষ খ্রিষ্টান নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তিনি নিশ্চিত করেছেন, নতুন প্রশাসনের অধীনে সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা করা হবে।