বিশ্বে ১০ ট্রিলিয়ন ডলারের মালিক মাত্র ৫০০ জন

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ : ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩: ২৯
প্রতীকী ছবি

২০২৪ সালকে বলা হচ্ছে ধনীদের ‘স্বর্ণযুগ’। এই বছরে বিশ্বের শীর্ষ ৫০০ ধনী ব্যক্তির সম্মিলিত সম্পদ প্রথমবারের মতো ১০ ট্রিলিয়ন ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করেছে। ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ারস ইনডেক্সের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। বিশ্বজুড়ে মূলত প্রযুক্তি খাতের শীর্ষ বিনিয়োগকারীরাই এই তালিকার শীর্ষে।

গত বছরের ডিসেম্বরের ১১ তারিখে শীর্ষ ৫০০ ধনী ব্যক্তির সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ সর্বোচ্চ শীর্ষে পৌঁছায়। পরে ৩০ ডিসেম্বর এই পরিমাণ সামান্য কমে ৯ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ডলারে এসে দাঁড়ায়। তবে এই অঙ্কও এতটাই বিশাল যে এটি জার্মানি, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়া তিন দেশের সম্মিলিত জিডিপি তথা মোট অর্থ সম্পদের পরিমাণের সমান।

২০২৪ সালে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন প্রযুক্তি খাতের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্বরা। ইলন মাস্ক, মার্ক জাকারবার্গ এবং এনভিডিয়ার সিইও জেনসেন হুয়াং তাদের সম্পদ বৃদ্ধি দিয়ে নজর কেড়েছেন। এদের সঙ্গে তালিকায় রয়েছেন ওরাকল প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি এলিসন, অ্যামাজনের জেফ বেজোস, ডেলের মাইকেল ডেল এবং গুগলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ ও সের্গেই ব্রিন।

এই আটজন গত বছর ৬০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি সম্পদ বাড়িয়েছেন। ইনডেক্সে তালিকাভুক্ত ৫০০ ধনী ব্যক্তির সম্পদ গত বছরে বেড়েছে মোট ১.৫ ট্রিলিয়ন বা দেড় লাখ কোটি ডলার এবং এই বৃদ্ধির ৪৩ শতাংশই নিয়ে গেছেন উল্লিখিত ৮ জন।

ইলন মাস্কের জন্য ২০২৪ ছিল এক অসাধারণ বছর। টেসলা ও স্পেসএক্সের সিইও হিসেবে তাঁর সম্পদ বছরের শুরু থেকে দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে ৪৪২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। প্রযুক্তি দুনিয়ায় আরেকটি বড় নাম মার্ক জাকারবার্গ। মেটা প্ল্যাটফর্মসের এই প্রতিষ্ঠাতা তাঁর সম্পদের পরিমাণ নিয়ে গেছের ২১৯ বিলিয়ন ডলারে এবং বিশ্বের শীর্ষ তিন ধনী ব্যক্তির একজন হয়ে উঠেছেন।

অন্যদিকে, এনভিডিয়ার সিইও জেনসেন হুয়াংয়ের কোম্পানির শেয়ারের দাম প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। ফলে তাঁর সম্পদও ৭৬ বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রযুক্তি খাতের এই উত্থান স্পষ্টতই প্রমাণ করে যে, ভবিষ্যতের আর্থিক লড়াই প্রযুক্তি ঘিরেই আবর্তিত হবে।

মার্কিন শেয়ারবাজারের উত্থান ধনী ব্যক্তিদের সম্পদ বৃদ্ধির পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ইনডেক্স এ বছর ২৪ শতাংশ বেড়েছে। বিশেষ করে ‘ম্যাগনিফিসেন্ট-৭’ নামে পরিচিত সাতটি কোম্পানি—অ্যাপল, মেটা, অ্যামাজন, অ্যালফাবেট, টেসলা, মাইক্রোসফট এবং এনভিডিয়া—এই বৃদ্ধির অর্ধেকেরও বেশি অবদান রেখেছে।

এ ছাড়া, ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয় শেয়ারবাজার ও ডিজিটাল সম্পদে বাড়তি চাঙ্গা ভাব নিয়ে আসে। নির্বাচনের পর মাত্র পাঁচ সপ্তাহে শীর্ষ ৫০০ ধনী ব্যক্তির সম্পদ ৫০৫ বিলিয়ন ডলার বেড়েছে।

তবে প্রযুক্তি খাত ছাড়াও বিলাসবহুল পণ্য ও বিনিয়োগ জগৎ থেকে শীর্ষ তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন বের্নার্ড আর্নল্ট এবং ওয়ারেন বাফেট। লুই ভিতোঁর প্রতিষ্ঠাতা বের্নার্ড আর্নল্ট বিলাসবহুল পণ্য জগতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিনিধি, আর বিনিয়োগ গুরু ওয়ারেন বাফেট প্রমাণ করেছেন যে, বিনিয়োগের সঠিক কৌশলে এখনও বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে।

২০২৪ সালের এই বিশাল সম্পদ বৃদ্ধির পরিসংখ্যান শুধু আর্থিক লাভের কথা নয়, বরং বৈশ্বিক অর্থনীতিতে প্রযুক্তির অগ্রগতির শক্তিশালী প্রভাবও তুলে ধরে।