হোম > বিশ্ব > যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা

লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানল: অগ্নিনির্বাপণে ১০০০ হাজতি নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক

অনলাইন ডেস্ক

আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯: ৫৮
হাজতিদের দিয়ে আগুন নেভানোর কাজ করানো বরাবরই বিতর্কে বিষয় হয়ে রয়েছে। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে ভয়াবহ দাবানলে বিপুলসংখ্যক ঘরবাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। বিখ্যাত হলিউড এলাকা হিসেবে পরিচিত এই এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে অনেকেই শোবিজ ইন্ডাস্ট্রির সেলিব্রিটি। বিপুল অর্থবিত্তের মানুষ এখানে বসবাস করেন।

গত মঙ্গলবার ছড়িয়ে পড়া দাবানল এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় এই ভয়াবহতম দাবানলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সামনের সারিতে নামানো হয়েছে প্রায় ১ হাজার হাজতি নারী ও পুরুষকে।

সম্মুখসারিতে থেকে আগুন নিয়ন্ত্রণ কাজ করছেন এমন হাজতির সংখ্যা এখন ৯৩৯। তাঁরা ক্যালিফোর্নিয়া ডিপার্টমেন্ট অব কারেকশনস অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন (সিডিসিআর)–এর নেতৃত্বাধীন একটি দীর্ঘমেয়াদি স্বেচ্ছাসেবী কর্মসূচির অংশ।

অগ্নিনির্বাপণ কর্মী হিসেবে হাজতির সংখ্যা বাড়তে থাকে গত মঙ্গলবার থেকেই। এ দিন থেকেই প্রাণঘাতী দাবানল লস অ্যাঞ্জেলেসে অনিয়ন্ত্রিতভাবে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।

এখন পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে এবং ৩৭ হাজার একর জমির সবকিছু পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে। হাজার হাজার জরুরি সেবা কর্মী আগুন নেভানোর জন্য লস অ্যাঞ্জেলেস এলাকায় কাজ করছেন।

এই দাবানলে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১১ জনের প্রাণহানির কথা জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

হাজতি অগ্নিনির্বাপকদের এই দলটি ৩৫টি কনজারভেশন ফায়ার ক্যাম্প থেকে নিয়োগ করা হয়েছে। এগুলো রাজ্য সরকার পরিচালিত মিনিমাম-সিকিউরিটি ফ্যাসিলিটির আওতাধীন। এসব স্থানে বন্দীরা তাঁদের সাজা খাটার পাশাপাশি প্রশিক্ষণও পান। এর মধ্যে দুটি ক্যাম্প নারী বন্দীদের জন্য।

৯০০–এরও বেশি বন্দী অগ্নিনির্বাপণের কাজে নেমে পড়েছেন। যেখানে এই প্রকল্পের অধীনে ১ হাজার ৮৭০ জন বন্দীকে অগ্নিনির্বাপক হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

মাঠে তাঁরা ক্যালিফোর্নিয়া ডিপার্টমেন্ট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড ফায়ার প্রোটেকশন–এর সদস্যদের সঙ্গে কমলা রঙের জাম্পসুট পরে আগুন নেভানোর কাজ করছেন।

সিডিসিআর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, হাজতি অগ্নিনির্বাপকেরা সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁরা আগুন ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে তৎপর রয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন কাঠামো থেকে দাহ্য বস্তু সরিয়ে আগুনের গতি ধীর করছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে হাজতিদের অগ্নিনির্বাপক হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়ার এই কর্মসূচি শুরু হয়েছে ১৯৪৬ সালে। এই কর্মসূচি নিয়ে নাগরিক সমাজের মধ্যে বিভক্তি রয়েছে। কেউ কেউ এটিকে শোষণমূলক বলে মনে করেন। আবার কেউ এটিকে পুনর্বাসনমূলক উদ্যোগে হিসেবে দেখেন।

এই প্রকল্পে হাজতিরা প্রতিদিন ৫ দশমিক ৮০ থেকে ১০ দশমিক ২৪ ডলার পান। আর জরুরি অবস্থার সময় তাঁরা দৈনিক অতিরিক্ত ১ ডলার উপার্জন করেন।

কিন্তু এই মজুরি ক্যালিফোর্নিয়ার সাধারণ নাগরিক অগ্নিনির্বাপকদের বেতনের তুলনায় অনেক কম। নাগরিক অগ্নিনির্বাপকেরা বছরে ১ লাখ ডলারের বেশি উপার্জন করতে পারেন।

সাবেক হাজতি অগ্নিনির্বাপক এবং অলাভজনক সংস্থা ফরেস্ট্রি অ্যান্ড ফায়ার রিক্রুটমেন্ট প্রোগ্রামের সহ–প্রতিষ্ঠাতা রয়্যাল রেমি বিবিসিকে বলেন, ‘আপনি অন্যদের তুলনায় সামান্য পয়সা পান। এটা শুধু সস্তা শ্রম, আর কিছু নয়।’

রেমি বলেন, ‘যদি আপনি দাবানল নেভানোর সময় মারা যান, আপনি (পরিবার) এর জন্য কোনো সুবিধা পাবেন না।’

এরপরও এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য কারাগারগুলোর তুলনায় ভালো বিকল্প হিসেবেই দেখতে চান রেমি। এ প্রশিক্ষণ ক্যাম্পগুলোতে ভালো খাবার দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে এর মাধ্যমে সাজা কমানোর সুযোগও রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

হাজতি অগ্নিনির্বাপকেরা মুক্তি পাওয়ার পর প্রায়ই চাকরির জন্য আবেদন করতে পারেন না। রেমি বলেন, ‘ফায়ার ফাইটার মানেই পরিচ্ছন্ন, বীরোচিত চেহারা, একজন বন্দী নয়।’

তিনি তাঁর সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা করেছেন, যাতে মুক্তি পাওয়া কয়েদি অগ্নিনির্বাপকেরা এই প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে পারেন। সেই সঙ্গে ক্যালিফোর্নিয়ার দীর্ঘমেয়াদি অগ্নিনির্বাপক সংকট মোকাবিলায় সহায়তা করাও তাঁর উদ্দেশ্য।

বর্তমানে লস অ্যাঞ্জেলেস এলাকায় পাঁচটি দাবানল সমানতালে জ্বলছে। এরই মধ্যে এতে ৫০ বিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়ে গেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। ইতিহাসের অন্যতম বিধ্বংসী দাবানল হতে যাচ্ছে এটি।

ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট কী, যুক্তরাষ্ট্রে এর সূচনা হয় কীভাবে

বিদায়ের আগে ৯ লাখের বেশি অভিবাসীর সুরক্ষায় বাইডেন প্রশাসনের বিশেষ উদ্যোগ

লস অ্যাঞ্জেলেসের ভয়াবহ দাবানলের তদন্ত চলছে, সর্বশেষ যা জানা গেল