ইসরায়েলি সামরিক আগ্রাসনে ২০২৫ সালের প্রথম ১০ দিনে গাজা উপত্যকায় ৬ শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। হামাস শাসিত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এর ফলে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে নিহতের সংখ্যা ৪৬ হাজার ছাড়িয়েছে। তবে মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেটের গবেষণা বলছে, গাজায় নিহতের সংখ্যা কমিয়ে দেখানো হয়েছে। প্রকৃত সংখ্যা বর্তমান সংখ্যার চেয়ে অন্তত ৪০ শতাংশ বেশি।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজের প্রতিবেদনে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে যে পরিমাণ মানুষ মারা গেছেন তার অঞ্চলটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ২ শতাংশ। ১৫ মাস আগে হামাস যোদ্ধারা দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলা চালানোর পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় প্রতি মাসে গড়ে ৩ হাজার বা প্রতিদিন প্রায় ১০০ জন নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েল ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাদের দেওয়া এই পরিসংখ্যান প্রত্যাখ্যান করেছে এবং সমস্ত মৃত্যুর জন্য হামাসকে দায়ী করেছে। তাদের অভিযোগ, হামাস সাধারণ মানুষকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। তবে মেডিকেল জার্নাল দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত নতুন গবেষণায় জানানো হয়েছে, আগ্রাসনের প্রথম নয় মাসে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিহতের যে সংখ্যা হাজির করেছে তার প্রকৃত সংখ্যার চেয়ে ৪০ শতাংশ কম হতে পারে।
যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, প্রায় ৩৮ হাজার মানুষ ইসরায়েলি হামলায় মারা গেছে। কিন্তু দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত একটি পিয়ার-রিভিউড গবেষণায় বলা হয়েছে ওই সময়ে মৃতের সংখ্যা ৬৪ হাজারে বেশি ছিল। গাজা ও ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের শোকবার্তা ও অনলাইন সমীক্ষার তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এই গবেষণা করা হয়েছে।
ল্যানসেট উল্লেখ করেছে, তাদের হিসাবের মধ্যে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকা হাজারো মানুষ কিংবা খাদ্য, পানি বা চিকিৎসাসেবার অভাবে নিহতদের সংখ্যা অন্তর্ভুক্ত নয়। অর্থাৎ, এই সংখ্যা আমলে নিলে প্রকৃত সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। আনুমানিক সেটা এ লাখের কাছাকাছি হতে পারে।
সিবিএস নিউজের গাজাকেন্দ্রেকি প্রতিনিধি দলকে ২১ বছর বয়সী মাহমুদ সুক্কুর বলেন, ‘আমি ভেতর থেকে ভেঙে পড়েছি, কারণ আমি আমার পুরো পরিবার হারিয়েছি।’ যুদ্ধের প্রথম মাসেই অর্থাৎ ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজা শহরে তাদের বাড়িতে ইসরায়েলি হামলায় তাঁর মা, বাবা ও যমজ ভাইসহ পরিবারের ১৭ জন নিহত হন। পরিবারের একমাত্র জীবিত সদস্য সুক্কুর এখন মধ্য গাজার দেইর এল-বালাহে একটি ত্রাণ শিবিরে একা থাকেন।
সুক্কুর বলেন, ‘আমার কোনো চাওয়া নেই। আমি আমার পরিবারের কবর দেখতে চাই। তাদের কবর দেখাই আমার একমাত্র ইচ্ছা।’ সুক্কুরের এই ইচ্ছা মূলত, ইসরায়েলি হামলায় তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার কারণে। হামলা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, তাদের আলাদাভাবে চিহ্নিত করা যায়নি।