বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তিত্ব ইলন মাস্ক হামাস নির্মূল করার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি, এরপর গাজাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে জার্মানি ও জাপানের সঙ্গে আচরণ করেছিল, দেশ দুটিকে গড়ে তুলেছিল, সেভাবে পরিচালনা ও গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার জার্মানির অলটারনেটিভ ফুর ডয়েচল্যান্ড (এএফডি) পার্টির নেতা অ্যালিস ওয়েইডেলের সঙ্গে ভারচুয়াল এক আলাপে এ কথা বলে মাস্ক।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ইলন ক্লিপস নামের একটি ভেরিফায়েড হ্যান্ডেল থেকে মাস্ক একটি অডিও ক্লিপ শেয়ার করেন। সেখানেই মাস্ককে এই বক্তব্য দিতে শোনা যায়। এই হ্যান্ডেল সাধারণত মাস্কের বিভিন্ন অডিও-ভিডিও শেয়ার করে থাকে।
অ্যালিস ওয়েইডেলের সঙ্গে মাস্কের ভার্চুয়াল কথোপকথনে গাজা ও ইসরায়েলের পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। মাস্কের মতে, ইসরায়েল রক্ষায় তিনটি ধাপ জরুরি। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল রাষ্ট্রকে ধ্বংস করতে চায় এমন লোকদের নির্মূল করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই এবং এই ধ্বংস কামনাকারীরা মূলত হামাস। এরপর দ্বিতীয় ধাপে শিক্ষাব্যবস্থা ঠিক করতে হবে যাতে ফিলিস্তিনিদের ছোটবেলা থেকেই ইসরায়েলের প্রতি ঘৃণা ও ধ্বংস কামনা শেখানো না হয়। সুতরাং শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার অপরিহার্য।’
মাস্ক আরও বলেন, ‘তৃতীয় ধাপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এটি হলো—ফিলিস্তিনি এলাকাগুলো সমৃদ্ধ করা। এই তৃতীয় ধাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি সম্ভবত সবচেয়ে কঠিন ধাপ। কিন্তু এই ধাপ অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। আপনাকে সমৃদ্ধি আনতে হবে এবং পুনর্গঠনে সহায়তা করতে হবে।’
মাস্কের মতে, তিনি ইসরায়েলের অনেক মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন, যারা জিজ্ঞাসা করেছিলেন—কখন এমন পদক্ষেপ অতীতে কার্যকর হয়েছে। এর জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ভার্সাই চুক্তি জার্মানির জন্য অত্যন্ত অন্যায় ছিল এবং এটি বিশাল পরিমাণ ক্ষোভ সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি ও জাপান পরাজিত হওয়ার পর অতীত থেকে শিক্ষা নেওয়া হয়েছিল।
মার্কিন এই ধনকুবের আরও বলেন, ‘তখন যুক্তরাষ্ট্র আসলে জাপান ও জার্মানিকে পুনর্গঠনে সহায়তা করেছিল, আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছিল। আর এখন জাপান ও জার্মানি আমাদের মিত্র। সেই দেশগুলোর সঙ্গে আর কোনো যুদ্ধ হয়নি এবং গাজার ক্ষেত্রেও একই কাজ করা উচিত।’
এদিকে, গাজায় এক বছরের বেশি সময় ধরে চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনের ফলে ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ দেশটির অর্থনৈতিক ক্ষতি প্রায় ২৫০ বিলিয়ন শেকেল বা ৬৭ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার। ইসরায়েলের বাণিজ্যবিষয়ক সংবাদপত্র ক্যালকালিস্টের বরাত দিয়ে এ তথ্য প্রকাশ করেছে তুরস্কের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা খাত নিয়ে গঠিত পরামর্শক কমিটি নাগেল কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরবর্তী এক দশকে প্রতিরক্ষার জন্য অতিরিক্ত ২৭৫ বিলিয়ন শেকেল (৭৪ বিলিয়ন ডলার) এবং প্রতি বছর ২৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন শেকেল বা ৭ বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কমিটি ইসরায়েলের বহুস্তরবিশিষ্ট আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা শক্তিশালী করার প্রস্তাব দিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে আয়রন ডোম এবং সদ্য কার্যকর হওয়া লেজার-ব্যবস্থা, পাশাপাশি জর্দান উপত্যকার সীমান্তকে একটি ভারী সুরক্ষিত ব্যারিয়ার দিয়ে সংহত করার পরিকল্পনা।
অন্যদিকে, ইসরায়েলি সামরিক আগ্রাসনে ২০২৫ সালের প্রথম ১০ দিনে গাজা উপত্যকায় ৬ শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। হামাস শাসিত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এর ফলে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে নিহতের সংখ্যা ৪৬ হাজার ছাড়িয়েছে। তবে মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেটের গবেষণা বলছে, গাজায় নিহতের সংখ্যা কমিয়ে দেখানো হয়েছে। প্রকৃত সংখ্যা বর্তমান সংখ্যার চেয়ে অন্তত ৪০ শতাংশ বেশি।