থাইল্যান্ডে নিখোঁজ হয়েছিলেন এক চীনা অভিনেতা। পরে তাঁর প্রেমিকা এই বিষয়ে সাহায্য চেয়ে অনলাইনে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন। সেই পোস্টেই শেষ পর্যন্ত বেঁচে গেলেন অভিনেতা।
বিবিসি জানিয়েছে, ৩১ বছর বয়সী চীনা অভিনেতা ওয়াং শিং গত ৩ জানুয়ারি থাইল্যান্ডের সীমান্ত শহর মা সোত থেকে নিখোঁজ হন। দুই দিন পর, তাঁর প্রেমিকা চীনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ওয়েইবোতে সাহায্যের আশায় একটি পোস্ট দেন। পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমাদের আর কোনো উপায় নেই, তাই ইন্টারনেটের সাহায্য নিতে হচ্ছে।’
এই পোস্টটি ভাইরাল হয়ে যায় এবং চীনের জনপ্রিয় তারকা লে ঝাং ও কুইন লানের মতো সেলিব্রিটিরা এটি শেয়ার করলে তা আরও ছড়িয়ে পড়ে।
এ অবস্থায় গত ৭ জানুয়ারি মিয়ানমারের সীমান্তে অবস্থিত একটি স্ক্যাম সেন্টার থেকে ওয়াংকে উদ্ধার করা হয়। চীনের পাশাপাশি থাইল্যান্ড সরকারের সহায়তায় এই উদ্ধার অভিযান চালানো হয়।
এদিকে ওয়াং শিংকে দ্রুত উদ্ধার করা হলেও এখন নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে, সেই স্ক্যাম সেন্টারে আটকে থাকা অন্যদের ভাগ্য নিয়ে। স্ক্যাম সেন্টারগুলোতে মূলত শত শত মানুষকে আটকে রেখে সাইবার অপরাধে বাধ্য করা হয়।
উদ্ধারের পর ওয়াং জানান, একটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাবে তিনি থাইল্যান্ড গিয়েছিলেন। ২০১৮ সালে থাইল্যান্ডে কাজের অভিজ্ঞতা থাকায় তিনি প্রস্তাবটি নিয়ে কোনো সন্দেহ করেননি। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর পর তাঁকে একটি গাড়িতে তুলে মিয়ানমারে নিয়ে যাওয়া হয়।
মিয়ানমারে নিয়ে ওয়াংয়ের মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া হয় এবং স্ক্যামিং-এর জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বিশেষ করে তাঁকে ফোন কলের মাধ্যমে মানুষকে প্রতারণা করার পদ্ধতি শিখতে বাধ্য করা হয়।
জানা গেছে, ঘটনার শুরুর দিকে থাই পুলিশ বা চীনা দূতাবাস থেকে ওয়াংয়ের পরিবারকে বিশেষ সহায়তা দেওয়া হয়নি। কিন্তু বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর চীনের পুলিশ মামলা নেয় এবং থাই পুলিশ উদ্ধার কাজে সক্রিয় হয়।
একটি যৌথ অভিযানের মাধ্যমে থাই ও চীনা কর্মকর্তারা ওয়াংকে উদ্ধার করেন। তবে মিয়ানমারের কোন জায়গা থেকে এবং কীভাবে তাঁকে উদ্ধার করা হয়েছে সেই বিষয়টি এখনো অজানা।
বিবিসি জানিয়েছে, মিয়ানমারের শান প্রদেশে এই ধরনের স্ক্যাম সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হলেও নতুন আরও অসংখ্য স্ক্যাম কমপ্লেক্স তৈরি হচ্ছে থাইল্যান্ড সীমান্তের কাছে। মিয়াওয়াডি শহরের দক্ষিণে এ রকম নতুন স্ক্যাম সেন্টারগুলোতে জোরপূর্বক শ্রম এবং অন্যান্য নির্যাতনের ঘটনাও ঘটছে।
ওয়াংকে উদ্ধার করা হলেও সেখানে আটক থাকা অন্যদের ভাগ্যে কী ঘটছে, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেকে।
এই ঘটনাগুলো পর্যটন শিল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে উদ্বিগ্ন থাই সরকার। কিন্তু তারা জোর দিয়ে বলছে, থাইল্যান্ড একটি নিরাপদ গন্তব্য। উদ্ধারের পর ওয়াংও জানিয়েছেন, থাইল্যান্ডের ভ্রমণ নিয়ে তাঁর মাঝে কোনো ভয় নেই। তিনি আবারও দেশটিতে ঘুরতে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।