২০২৩ সালে নারীদের স্বাধীনতা নিয়ে আন্দোলনকে সরকার সহিংসভাবে দমনের পরও ইরানি নারীরা প্রকাশ্যে হিজাব খুলে গান ও নাচের মাধ্যমে প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছেন। সোমবার ইরান ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, বিগত তিন সপ্তাহে অন্তত তিনজন বিশিষ্ট নারী শিল্পী এ প্রতিরোধের অংশ হিসেবে প্রকাশ্যে হিজাব উন্মোচন করেছেন।
জানা গেছে, গত ৩০ ডিসেম্বর ৬২ বছর বয়সী বিখ্যাত ভিজ্যুয়াল আর্টিস্ট বিটা ফায়াজি তেহরানের নায়াভারান কালচারাল সেন্টারে একটি সরকারি শিল্প প্রদর্শনী উদ্বোধনের সময় তাঁর স্কার্ফ গলায় বেঁধে চুল খোলা রাখেন। এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত আরও কিছু তরুণী হিজাব না পরা ছিলেন।
সিরামিক আর্ট বিয়েনাল নামে পরিচিত এ প্রদর্শনী ইরানের সংস্কৃতি ও ইসলামিক গাইডেন্স মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তা বা অন্য কেউ ওই হিজাব খুলে রাখার প্রতিবাদ করেননি। পদক্ষেপটি পূর্বপরিকল্পিত প্রতিবাদ ছিল কি না, তা স্পষ্ট করেননি ফায়াজি।
এর আগে গত ২৬ ডিসেম্বর বিশিষ্ট লেখক ও অনুবাদক গোলি ইমামি তেহরানের ইভান-ই-শামস হলে একটি সাহিত্য পুরস্কার গ্রহণের সময় কোনো হিজাব না পরে মঞ্চে ওঠেন। ৮২ বছর বয়সী ইমামি দর্শকদের কাছ থেকে দাঁড়িয়ে অভিবাদন পান।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ইরানের নীতি পুলিশের হেফাজতে মাশা আমিনির মৃত্যুর পর থেকে দেশটির নারীদের মধ্যে বাধ্যতামূলক হিজাবের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যায়, কুম ও মাশহাদের মতো রক্ষণশীল ধর্মীয় শহরেও এখন মাঝেমধ্যে হিজাববিহীন নারীদের দেখা যাচ্ছে।
ইরানি নারীদের জন্য গান গাওয়া এবং প্রকাশ্যে নাচ দীর্ঘ চার দশক ধরে নিষিদ্ধ। তবে এই নিষেধাজ্ঞা অমান্যের সাহসী পদক্ষেপ নিচ্ছেন অনেকে।
গত ১২ ডিসেম্বর গায়িকা পরস্তু আহমাদি ইউটিউবে সরাসরি সম্প্রচারিত একটি হিজাববিহীন কনসার্ট করেন। এতে তিনি শুধু মাথার হিজাব খুলে ফেলেননি, বরং খোলা কাঁধসহ একটি কালো গাউন পরেছিলেন। তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলেও পরে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়।
নারীদের স্বাধীনতা নিয়ে আন্দোলনের শুরু থেকে নারী সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা বাধ্যতামূলক হিজাববিরোধী আন্দোলনের অগ্রভাগে রয়েছেন। এ আন্দোলনের জন্য তাঁদের কারাবাস, কর্মজীবন নিষিদ্ধ হওয়া এবং পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত হওয়ার মতো পরিণতি ভোগ করতে হয়েছে।