প্রথমবারের মতো সিরিয়া সফরে গিয়েছিলেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানালেনা বেয়ারবক ও ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাঁ-নোয়েল বারো। দামেস্কে তাদের স্বাগত জানান সিরিয়ার ডি-ফ্যাক্টো শাসক ও হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) প্রধান আহমদ আল-শারা ওরফে আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি। এ সময় আল-শারা ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে হাত মেলালেও বেয়ারবকের সঙ্গে হাত মেলাননি।
জার্মান সংবাদমাধ্যম বিল্ডের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকোর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, তিনি (বেয়ারবক) নারী ও সংখ্যালঘুদের অধিকারের পক্ষে কথা বলতে এসেছিলেন। অথচ তিনি হাত মেলানো ছাড়াই ফিরে গেলেন (জার্মানিতে)।
অবশ্য সিরিয়া সফরে অভ্যর্থনার সময় আল-শারার পক্ষ থেকে হাত মেলানোর প্রস্তাব না দেওয়ার বিষয়টি প্রত্যাশিত ছিল বলেই উল্লেখ করেছেন জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানালেনা বেয়ারবক। তবে এ ঘটনাটি অনলাইনে বিশ্ব রাজনীতির অভ্যর্থনার প্রোটোকল নিয়ে তুমুল বিতর্ক উসকে দিয়েছে।
বেয়ারবক বলেন, ‘আমি যখন সেখানে যাচ্ছিলাম, তখন আমার কাছে স্পষ্ট ছিল যে স্বাভাবিকভাবেই হাত মেলানোর ঘটনা ঘটবে না। কিন্তু এটি একইভাবে স্পষ্ট ছিল, শুধু আমি নই, ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও এই বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করতেন। সে অনুযায়ী, ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও তাঁর হাত (আল-শারার দিকে) বাড়াননি।’
জার্মান দৈনিক বিল্ড এই ঘটনাটিকে ‘হ্যান্ডশেক কেলেঙ্কারি’ আখ্যা দিয়েছে। কারণ, বেয়ারবকের সফরসঙ্গী ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাঁ-নোয়েল বারো হাত মেলানোর প্রস্তাব দেওয়া হলেও বেয়ারবককে দেওয়া হয়নি।
গত ডিসেম্বরে বিদ্রোহীদের হাতে সিরিয়ার দীর্ঘদিনের শাসক বাশার আল-আসাদের সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশটি সফর করা প্রথম ইউরোপীয় ইউনিয়নের মন্ত্রীদ্বয় হলেন বেয়ারবক ও বারো। তাঁরা দামেস্কে পৌঁছালে তাঁদের স্বাগত জানান আহমেদ আল-শারা। তিনি বারোকে হাত মেলানোর প্রস্তাব দেন, কিন্তু বেয়ারবককে দেননি।
অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, বারো তাঁর হাত বাড়ানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, কিন্তু পরে হাত বাড়ানো থেকে বিরত থাকেন। এরপর আল-শারা ঘুরে দাঁড়িয়ে দুই মন্ত্রীকে নিয়ে এগিয়ে যান।
আল-শারা বাশার বিরোধী আন্দোলনের প্রধান বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) প্রধান। এটি একসময় আল কায়েদার সহযোগী ছিল এবং যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য গোষ্ঠীটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। গোষ্ঠীটির অতীত ইতিহাসের কারণে এইচটিএসের ক্ষমতায় আসা সিরিয়ায় নারী ও সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষার বিষয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে। জার্মানি ও ফ্রান্সের শীর্ষ কূটনীতিকদের এই সপ্তাহের সফরের মূল লক্ষ্য ছিল এই বিষয়টি।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বারো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, নতুন সিরিয়ার কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তারা রাজনৈতিক রূপান্তরে বিশেষ করে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন।
জার্মানির অর্থমন্ত্রী ও উপ-চ্যান্সেলর রবার্ট হ্যাবেক তাঁর সহকর্মীর দামেস্ক সফরকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখেছেন। তিনি এই সফরকে ‘সমন্বিত ইউরোপীয় পররাষ্ট্রনীতির একটি শক্তিশালী বার্তা’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘দশকের পর দশক ধরে সহিংসতা ও অবিচারের পর সিরিয়া এখন নতুন পথ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।’
একই সময়ে হ্যাবেক বলেন, ‘আমরা যদি কেবল সেই সরকারগুলোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতাম যারা আমাদের মতো ভাবনায় বিশ্বাস করে, তাহলে আমরা প্রায় একাই থাকতাম।’
হ্যান্ডশেকের এই ঘটনা ‘সোফাগেট’ বিতর্কের কথা মনে করিয়ে দেয়। ২০২১ সালে তুরস্ক সফরের সময় ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভ্যান ডার লেয়নকে নেতাদের চেয়ার দেওয়া হয়নি। বসতে দেওয়া হয়েছিল একটি সোফায়। পরে ভ্যান ডার লেয়ন বলেন, তিনি ‘আঘাতপ্রাপ্ত’ ও ‘একা’ অনুভব করেছিলেন। এই ঘটনার জন্য তিনি স্পষ্টতই লিঙ্গবৈষম্যকে দায়ী করেছিলেন।