পাকিস্তান বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে আরও ৪০ বিলিয়ন ডলার ঋণসহায়তার আশা করছে। এর মধ্যে সরকারি খাতে ২০ বিলিয়ন ডলার এবং বেসরকারি খাতে বাকি ২০ বিলিয়ন ডলার ঋণের আশা করছে দেশটি। বিষয়টি নিয়ে বিশ্বের ব্যাংকের আলোচনায় জড়িত দলের এক সদস্য ও পাকিস্তান সরকারের শীর্ষ এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১০ বছর মেয়াদের মধ্যে এই ঋণ কিস্তিতে কিস্তিতে ছাড় করা হতে পারে। এই সহায়তা প্যাকেজ পাকিস্তানের প্রকল্পগুলোকে রাজনৈতিক প্রভাবের হাত থেকে রক্ষা করবে এবং ছয়টি নির্দিষ্ট খাতে মনোযোগ দেবে। প্যাকেজটির নাম ‘পাকিস্তান কান্ট্রি পার্টনারশিপ ফ্রেমওয়ার্ক ২০২৫-৩৫’। এর লক্ষ্য, দেশের সবচেয়ে অবহেলিত কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে সামাজিক উন্নতি সাধন করা।
বিশ্বব্যাংকের এই ঋণসহায়তা প্যাকেজ বিশেষভাবে শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধি, শিক্ষার অভাব দূর করা, জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে সাহায্য করা, পরিবেশ থেকে কার্বন নির্গমন কমানো, রাজস্ব বৃদ্ধি এবং বেসরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার জন্য কাজ করবে।
এসব ক্ষেত্রে স্থানীয় ও জাতীয় রাজনৈতিক নেতাদের সমর্থন থাকায় আশা করা হচ্ছে, সরকার পরিবর্তনের ফলে এই প্রকল্পগুলোর প্রভাব কমবে না। পাকিস্তানে ২০২৫ থেকে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত অন্তত তিনটি সাধারণ নির্বাচন হতে পারে, কিন্তু এই প্রকল্পগুলো সরকারের পরিবর্তনের বাইরে থাকবে।
বিষয়টির সঙ্গে জড়িত এক পাকিস্তানি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানিয়েছে, বিশ্বব্যাংক আগামী ১৪ জানুয়ারি এই ঋণ কৌশলটি অনুমোদন করতে পারে এবং পরে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজার ইসলামাবাদ সফর করবেন। বিশ্বব্যাংক আশা করছে, দেশটির অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হবে না। সরকার পরিবর্তন হলে যা কিছু অগ্রাধিকারভিত্তিতে পরিবর্তিত হয়, তার কারণে যেসব সমস্যা দেখা দেয়, এখন তার বিপরীতে একটি স্থিতিশীল কাঠামো তৈরি হবে।
বিশ্বব্যাংক প্রথম দেশ হিসেবে পাকিস্তানে ১০ বছর মেয়াদি কৌশলটি বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। এই প্যাকেজের আওতায় ২০ বিলিয়ন ডলারের ঋণ দেওয়া হবে। যার মধ্যে ১৪ বিলিয়ন ডলার দেওয়া হবে বিশ্বব্যাংকের সাশ্রয়ী শাখা ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন বা আইডিএ থেকে এবং বাকি ৬ বিলিয়ন ডলার দেওয়া হবে আরেক শাখা ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক ফর রিকনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বা আইবিআরডি থেকে।
এ ছাড়া, বিশ্বব্যাংক ২০ বিলিয়ন ডলারের সরকারি ঋণের পাশাপাশি আরও ২০ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে চাচ্ছে বেসরকারি খাতে। এই ২০ বিলিয়ন ডলারের ঋণ বিশ্বব্যাংকের অন্য দুটি শাখা ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) এবং মাল্টিলেটারাল ইনভেস্টমেন্ট গ্যারান্টি এজেন্সি (এমআইজিএ) থেকে দেওয়া হতে পারে। অর্থাৎ, মোট ঋণ প্যাকেজের পরিমাণ দাঁড়াবে ৪০ বিলিয়ন ডলার, কিন্তু সরকারি ঋণ থাকবে ২০ বিলিয়ন ডলার।
এই নতুন পরিকল্পনায় ছয়টি ক্ষেত্রের দিকে মনোযোগ দেওয়ার পাশাপাশি ১০টি কম প্রভাবশালী খাত থেকে ঋণ ধীরে ধীরে বন্ধ করা হবে। যেমন পরিবহন, জ্বালানি স্থানান্তর, টেলিকম, স্বাস্থ্যসেবা এবং উচ্চ শিক্ষা। বিশ্বব্যাংক এখন বড় এবং স্থিতিশীল প্রকল্পগুলোতে বেশি মনোযোগ দেবে, যা দীর্ঘ মেয়াদে দেশের উন্নয়নে সাহায্য করবে। এভাবে, ছোট এবং এককালীন প্রকল্পগুলোর পরিবর্তে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হবে।
এই কৌশলটি বাস্তবায়নের জন্য দুই বছরের একটি রোলিং ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তৈরি হবে। যা উভয় পক্ষ একসঙ্গে নির্ধারণ করবে। এর মাধ্যমে, সরকারের পরিবর্তন হলেও, প্রকল্পের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিরাপদ এবং স্থিতিশীল থাকবে।