মিয়ানমারে চলমান সংকট নিরসনে চলতি সপ্তাহেই দুটি আঞ্চলিক সম্মেলনের আয়োজন করবে থাইল্যান্ড। গতকাল সোমবার থাইল্যান্ড জানিয়েছে, দেশটি এ সপ্তাহে মিয়ানমার-সংকট নিরসনে দুটি আঞ্চলিক বৈঠকের আয়োজন করবে। এসব সম্মেলনের একটিতে জান্তা সরকারের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। এদিকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, মিয়ানমারকে পুনরায় আসিয়ানের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ফিরিয়ে আনতে প্রচেষ্টা চলছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুসারে, থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিস সাংগিয়ামপংসা ১৯ ও ২০ ডিসেম্বর দুটি পৃথক আলোচনা সভার আয়োজন করবেন। থাইল্যান্ড গত অক্টোবর মাসে এই সংকট থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজে বের করার জন্য অনানুষ্ঠানিক আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিল। ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমার গভীর সংকটে নিমজ্জিত।
আগামী বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বৈঠকে মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নিকর্নদেজ বালানকুরা। তিনি জানিয়েছেন, এটি হবে সীমান্ত নিরাপত্তা ও আন্তদেশীয় অপরাধ বিষয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা। মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী দেশ—চীন, ভারত, বাংলাদেশ, লাওস ও থাইল্যান্ডের প্রতিনিধিরা এই বৈঠকে অংশ নেবেন।
নিকর্নদেজ বালানকুরা আরও জানিয়েছেন, আগামী শুক্রবার মিয়ানমার নিয়ে আসিয়ানের ‘পাঁচ দফা ঐকমত্য’ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনায় আগ্রহী সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের একটি বৈঠক হবে। তবে, মিয়ানমারের কোনো প্রতিনিধি সেই বৈঠকে অংশ নেবেন কি না এবং অংশ নিলে কোন স্তরের প্রতিনিধি থাকবেন তা এখনো পরিষ্কার নয়।
সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে আসিয়ান মিয়ানমারের সামরিক নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনসহ অন্যান্য বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো থেকে বিরত রয়েছে। এ ধরনের বৈঠকগুলোতে মিয়ানমার থেকে কেবল অরাজনৈতিক প্রতিনিধিদেরই আমন্ত্রণ জানানো হয়।
এদিকে, আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালে আসিয়ানের সভাপতিত্ব করবেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। তিনি সোমবার জানিয়েছেন, আসিয়ানের শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই পরিকল্পনার ঘোষণা অভ্যুত্থানের পর অর্থাৎ ২০২১ সালের এপ্রিলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর খুব সামান্যই অগ্রগতি হয়েছে।
কুয়ালালামপুরে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পায়েটংটার্ন সিনাওয়াত্রার সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আনোয়ার বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন স্তরে অনানুষ্ঠানিক সংলাপের মাধ্যমে মিয়ানমারের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এবং মিয়ানমারকে পুনরায় আসিয়ানের কেন্দ্রবিন্দুতে ফিরিয়ে আনতে পদক্ষেপ নিচ্ছি।’ তবে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি। ইন্দোনেশিয়া জানিয়েছে, তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ২০ ডিসেম্বরের বৈঠকে অংশ নেবেন।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারে যে বিশৃঙ্খলা চলছে, তা গৃহযুদ্ধে রূপ নিয়েছে। গত অক্টোবরে একটি সম্মেলনে আসিয়ান মিয়ানমারে সহিংসতা ‘তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ’ এবং ‘মানবিক সহায়তা পৌঁছানো ও অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় সংলাপের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি’র আহ্বান জানায়।