হোম > বিশ্ব > মধ্যপ্রাচ্য

দুর্নীতির মামলায় হাজিরা দিলেন নেতানিয়াহু

অনলাইন ডেস্ক

আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০: ০৩
আজ মঙ্গলবার তেল আবিব জেলা আদালতে দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা মামলার শুনানিতে অংশ নেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।

দুর্নীতির মামলায় প্রথমবারের মত আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ২০১৭ সালে ঘুষ, জালিয়াতি এবং আস্থা ভঙ্গের অভিযোগে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে ইসরায়েলের পুলিশ। এরপর ২০১৯ সালে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। আজ মঙ্গলবার প্রায় ৫ বছর পর আদালতে হাজিরা দেন নেতানিয়াহু।

যুক্তরাজ্য ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই-এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে মোট তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। একটি মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি তাঁর ধনকুবের বন্ধুদের কাছ থেকে উপহার নিয়েছেন এবং তাঁদের পক্ষে ইতিবাচক সংবাদ প্রচারের বিনিময়ে মিডিয়া টাইকুনদের বিশেষ সুবিধা দিয়েছেন। তবে নেতানিয়াহু এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, এগুলো তার বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’।

অন্য আরেকটি মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয়, নেতানিয়াহু ও তাঁর স্ত্রী হলিউডের প্রযোজক ও ব্যবসায়ী আর্নন মিলচানের কাছ থেকে প্রায় দুই লাখ মার্কিন ডলারের চুরুট, শ্যাম্পেন এবং অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী নিয়েছেন।

আদালত থেকে জানানো হয়েছে ঘুষ, জালিয়াতি এবং আস্থা ভঙ্গের অভিযোগে অভিযুক্ত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে প্রতি সপ্তাহে তিন দিন আদালতে সাক্ষ্য দিতে হবে।

নেতানিয়াহুর সাক্ষ্য গ্রহণ শুরুর আগে তার আইনজীবী অমিত হাদাদ বিচারকদের জানান, এই মামলার ভিত্তিতে মৌলিক ত্রুটি রয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, ‘প্রসিকিউটররা কোনো অপরাধের তদন্ত করেননি বরং একজন ব্যক্তির পেছনে ছুটেছেন।’

সাক্ষ্য দেওয়ার সময় নেতানিয়াহু বলেন, ‘সত্য বলার জন্য—আমি আট বছর ধরে অপেক্ষা করছি।’

তিনি সমালোচকদের উদ্দেশে বলেন, ‘এই অভিযোগ আমাকে হতবাক করেছে। আমি একজন প্রধানমন্ত্রী, একটি দেশ পরিচালনা করছি এবং দেশকে রক্ষায় যুদ্ধের নেতৃত্ব দিচ্ছি। আমি আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত নই বরং ইসরায়েলের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।’

নেতানিয়াহুর সমালোচকদের মতে, এই বিচার ইসরায়েলের গণতন্ত্রের একটি পরীক্ষা। তাঁরা দেখতে চান, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে কোনো অপরাধ করলে তিনি জবাবদিহি করতে বাধ্য হন কিনা।

অন্যদিকে নেতানিয়াহুর সমর্থকদের মতে, এটি গণতন্ত্রের ওপর আক্রমণ। তাঁরা অভিযোগ করেন, বিচার ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে উদারপন্থী গোষ্ঠী নেতানিয়াহুকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করছে।

নেতানিয়াহুর সমর্থনে উপস্থিত একজন আইনপ্রণেতা তালি গোতলিভ আদালতে চিৎকার করে বলেন, ‘এটি লজ্জাজনক।’ অপর একজন মন্ত্রী ইতমার বেন-গভির নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে ‘নির্যাতন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

এদিকে গাজায় ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধ, লেবাননের ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি এবং সিরিয়ায় সামরিক অভিযান সামগ্রিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলি হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪ হাজার ৭৫৮ জন। তবে রক্তক্ষয়ী এই সংঘাত থামার কোনো লক্ষণ এখনো দেখা যাচ্ছে না।

সম্প্রতি, নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গালান্তের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। তবে নেতানিয়াহু নিজের বিরুদ্ধে আইসিসির জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানাকে ‘অ্যান্টি-সেমিটিক’ বা ইহুদিবিরোধী বলেছেন।

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে মামলা ইসরায়েলি সমাজকে তীব্রভাবে বিভক্ত করেছে। তার বিচারিক প্রক্রিয়া এবং সাম্প্রতিক যুদ্ধ পরিস্থিতি ইসরায়েলের রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতাকেও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই বিচারটি দীর্ঘ সময় ধরে চলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যা ইসরায়েলের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশে গভীর প্রভাব ফেলবে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা factcheck@ajkerpatrika.com

দুই পর্যায়ের যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা, হামাসের ইতিবাচক সাড়া

গাজায় নিহত ছাড়াল ৪৬ হাজার, প্রকৃত সংখ্যা ৪০ শতাংশ বেশি বলছে গবেষণা

সিরিয়াকে বিভক্ত করার পরিকল্পনা ইসরায়েলের

সেনাপ্রধানকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করল লেবানন