গাজায় অবরুদ্ধদের নিরাপদে সরে যেতে ও জরুরি ত্রাণ সরবরাহের জন্য স্বল্প মেয়াদে যুদ্ধবিরতি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করবেন বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। তবে আন্তর্জাতিক চাপ থাকা সত্ত্বেও যুদ্ধবিরতি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন তিনি।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসকে নির্মূল করার জন্য ঘনবসতিপূর্ণ গাজা শহরকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলছে, তারা গাজার ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গগুলোতে আত্মগোপনে থাকা যোদ্ধাদের আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুত।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) গাজার দক্ষিণাঞ্চলের শহর খান ইউনিস ও রাফায় ইসরায়েলের দুটি পৃথক বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ২৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। খান ইউনিসেই নিহত হয়েছে ১১ জন।
খান ইউনিসে ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার হওয়া এক ব্যক্তি বলেছেন, ‘ইসরায়েলকে কঠিন শিক্ষা দেওয়া হবে।’ আহমেদ আয়েশ নামের ওই ব্যক্তি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটাই তথাকথিত ইসরায়েলের সাহস। তারা নিরস্ত্র নাগরিক, শিশু ও বয়স্কদের বিরুদ্ধে তাদের অস্ত্র ও শক্তি প্রয়োগ করে।’
এক মাস আগে নিজেদের ভূখণ্ডে ঢুকে হামাস যোদ্ধারা হামলা চালানোর পর থেকেই গাজা উপত্যকায় বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ৪০০ জন নিহত হয়েছে। হামাস যোদ্ধারা জিম্মি করেছে ২৪০ জনকে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত ১০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ৪ হাজার ১০০টিই শিশু।
এই যুদ্ধ থামানোর সব প্রয়াস নাকচ করে আসছে দুই পক্ষই। ইসরায়েলের দাবি, আগে তাদের বন্দীদের মুক্তি দিতে হবে। হামাস বলছে, গাজায় যুদ্ধ না থামানো পর্যন্ত বন্দীদের মুক্তি দেওয়া হবে না।
নেতানিয়াহু বলছেন, যুদ্ধবিরতি দিলে ইসরায়েলের প্রচেষ্টা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবে পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে মানবিক কারণে যুদ্ধ স্থগিত করা যেতে পারে। যুদ্ধ স্থগিত করার ধারণাটি সমর্থন করছে ইসরায়েলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্রও।
সোমবার নেতানিয়াহু সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজকে বলেন, ‘এক ঘণ্টা করে কৌশলগত ছোট বিরতি আমরা আগেও দিয়েছি। আমরা পরিস্থিতি বিবেচনা করে ত্রাণ সরবরাহের জন্য, মানবিক সহায়তার জন্য ও জিম্মিদের আনা নেওয়ার জন্য ছোট বিরতি দিতে পারি।’ তিনি বলেন, ‘তবে কোনো যুদ্ধবিরতি দেওয়া হবে বলে আমার মনে হয় না।’
সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ফোনালাপে যুদ্ধে সাময়িক বিরতি ও সম্ভাব্য বন্দী মুক্তি নিয়ে আলোচনা করেন নেতানিয়াহু। আলাপে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন বাইডেন। তবে তিনি বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করার ওপর জোর দেন।
ইসরায়েলের মতো যুক্তরাষ্ট্রেরও ধারণা, যুদ্ধবিরতির সুযোগ নিয়ে হামাস আবার সংগঠিত হবে।
গাজায় জরুরি যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে সোমবার জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘গাজা শিশুদের গোরস্থানে পরিণত হচ্ছে।’