অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজায় প্রায় তিন সপ্তাহের বিধ্বংসী বিমান হামলার পর আজ বৃহস্পতিবার রাতভর স্থল অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েল। পূর্ণ স্থল অভিযানের আগে ইসরায়েলি সৈন্য ও ট্যাংক বহর গাজায় একটি সংক্ষিপ্ত অভিযান চালিয়েছে বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সম্প্রচার মাধ্যম আল জাজিরা।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর বরাত দিয়ে আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাতে অভিযানের ভিডিওতে সাঁজোয়া যানগুলোকে একটি বালুকাময় সীমান্ত অঞ্চল দিয়ে অগ্রসর হতে দেখা গেছে। একটি বুলডোজার ব্যাংকের ভগ্নাংশ গুঁড়িয়ে দিয়েছে এবং বিধ্বস্ত ভবনগুলো লক্ষ্য করে ট্যাংক থেকে গোলাবর্ষণ এবং বিস্ফোরণ ঘটাতে দেখা গেছে।
আজ এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, পূর্ণ স্থল অভিযানের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে আইডিএফ উত্তর গাজা উপত্যকায় ট্যাংক নিয়ে অভিযান চালায়। কাজ শেষ করে সেনারা এলাকা ছেড়ে চলে এসেছে।
ইসরায়েলের আর্মি রেডিওর দাবি অনুসারে, গত আড়াই সপ্তাহে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর বেশ কিছু সীমিত অগ্রগতি হয়েছে। তবে চলমান যুদ্ধে গতকাল বুধবারই ছিল সবচেয়ে বড় আকারের অনুপ্রবেশ।
অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেম থেকে আল জাজিরার প্রতিনিধি অ্যালান ফিশার বলেছেন, অতীতেও গাজায় প্রবেশ করে এ ধরনের হামলা হয়েছে। তবে প্রথমবারের মতো গতকালের অভিযানেই ট্যাংক ব্যবহার করতে দেখা গেছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মতে, তারা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তু মাথায় রেখে প্রবেশ করেছে। তারা অনেক হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করেছে। সেই সঙ্গে ব্যবহার করতে পারে এমন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আল জাজিরার সংবাদদাতা বলেছেন, ট্যাংক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের জন্য স্থাপন করা উৎক্ষেপণ কেন্দ্রগুলোই লক্ষ্য ছিল বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এটি স্পষ্টত পরবর্তী পর্যায়ের অভিযানের একটি প্রস্তুতি।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গতকাল সন্ধ্যায় বলেছেন, ‘গাজায় ভারী গোলা বর্ষণের পাশাপাশি আমরা স্থল আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
আল জাজিরার ফিশার বলেছেন, ‘নেতানিয়াহু উল্লেখ করেছেন, তাদের প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এবং কখন অভিযান শুরু হবে সে বিষয়ে ইসরায়েলি যুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রিসভা সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেবে।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক এলিজাহ ম্যাগনিয়ার আল জাজিরাকে বলেন, ‘ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের প্রস্তুতি এবং সক্ষমতা পরীক্ষা করার জন্য রাতের বেলা সংক্ষিপ্ত অভিযান ইসরায়েলের কৌশলের অংশ। আমরা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর একটি নতুন কৌশল দেখতে পাচ্ছি—কয়েক ঘণ্টা অবস্থানের পরই সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করা হচ্ছে।’
তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘ইরাকে যুক্তরাষ্ট্র যা করত: অভিযান চালালে কেমন প্রতিরোধ আসতে পারে সেটি পরখ করার জন্য খুব সংক্ষিপ্ত ছোট অভিযান পরিচালনা করা হয়। বড় আক্রমণের জন্য প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন অংশ থেকে অভিযান চলে।’
সাধারণত, যথেষ্ট পরিমাণ গোয়েন্দা তথ্যের অভাব থেকে এই ধরনের কৌশল নেওয়া হয়। এলিজাহ ম্যাগনিয়ার বলেন, ‘হাজার হাজার হামাস এবং (ফিলিস্তিনি) ইসলামিক জিহাদ যোদ্ধা তাদের জন্য যে অপেক্ষা করছে, এটা ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানে। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধের প্রস্তুতি কেমন, কী ধরনের সে বিষয়ে তাদের যথেষ্ট গোয়েন্দা তথ্য নেই।’