হোম > বিশ্ব > মধ্যপ্রাচ্য

ইয়াহিয়া সিনওয়ার: যাকে ধরার জন্য ইসরায়েলের এত আয়োজন

অনলাইন ডেস্ক

আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২৩, ১৯: ১৯

ইসরায়েলের মাটিতে হামাসের হামলার সপ্তাহ পেরোতে না পেরোতেই ইয়াহিয়া সিনওয়ারের নামটি চাউর হয়ে যায়। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের দাবি, এই সিনওয়ারের নেতৃত্বেই হামাস এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় হামলার ঘটনাটি ঘটিয়েছে। ৭ অক্টোবরের ওই হামলায় প্রায় ১ হাজার ৪০০ ইসরায়েলি নিহত হয়েছে।

হামাসের হামলার জের ধরে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় বোমাবর্ষণ করছে ইসরায়েল। এতে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা আড়াই হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আহত হয়েছে আরও অসংখ্য। তবে এখানেই থেমে নেই ইসরায়েলের অভিযান। দেশটির পদাতিক সেনারা এবার স্থল অভিযানের জন্য গাজায় প্রবেশের প্রস্তুতি নিয়েছে। এই বাহিনীর এক মুখপাত্র ঘোষণা করেছেন ইয়াহিয়া সিনওয়ার ও তাঁর সঙ্গীদের খুঁজে বের করতেই স্থল অভিযান পরিচালনা করা হবে।

যেখান থেকে সিনওয়ারের উত্থান
বর্তমানে ইসরায়েলের মোস্ট ওয়ান্টেড হামাস নেতা সিনওয়ারের জন্ম ১৯৬২ সালে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস শহরে। সেই সময়ে খান ইউনিস ছিল মিসরের দখলে। জন্মসূত্রেই ইসরায়েলে সেনারা সিনওয়ারকে ‘খান ইউনিসের কসাই’ বলে চিহ্নিত করে। বিভিন্ন প্রতিবেদনের সূত্রে জানা যায়, সিনওয়ারের জন্মের আগে তাঁর পরিবার অ্যাশকেলোন শহরে বসবাস করত। বর্তমানে দক্ষিণ ইসরায়েলের অংশ ওই শহরটি ছেড়ে ১৯৪৮ সালে গাজায় চলে এসেছিল সিনওয়ারের পরিবার। গাজায় অবস্থিত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকেই অ্যারাবিক স্টাডিজ বিষয়ে সিনওয়ার তাঁর স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন।

২৪ বছর ছিলেন ইসরায়েলের কারাগারে
বর্তমানে ৬১ বছর বয়সী ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ২৪ বছরই কেটেছে ইসরায়েলের কারাগারে। বিধ্বংসী কার্যকলাপের অভিযোগে ১৯৮২ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে তিনি প্রথমবারের মতো গ্রেপ্তারের শিকার হয়েছিলেন। পরবর্তী বছরগুলোতে ফিলিস্তিনি মুভমেন্টে ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের প্রতিহত করার জন্য সালাহ শেহাদির সঙ্গে এক হয়ে একটি ইউনিট গঠন করেন তিনি। ২০০২ সালে হামাসের সামরিক শাখার প্রধান থাকা অবস্থায় ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হন শেহাদি। 

 ১৯৮৭ সালে হামাস প্রতিষ্ঠিত হলে এর সঙ্গে একীভূত হয়ে যায় শেহাদি ও সিনওয়ারের গঠিত ওই ইউনিট। ১৯৮৮ সালে দুই ইসরায়েলি সেনাকে হত্যা ও ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে চার ফিলিস্তিনিকে হত্যার অভিযোগে সিনওয়ারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর বহু বছর ধরে ইসরায়েলের কারাগারে ছিলেন তিনি। 

ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তি
২০০৬ সালে একটি সুড়ঙ্গ ব্যবহার করে ইসরায়েলের ভেতরে প্রবেশ করে হামাসের সামরিক শাখা ইজ আদ-দিন আল-কাসেম ব্রিগেডের কিছু যোদ্ধা। তাঁরা ইসরায়েলি আর্মির একটি চেকপোস্টে হামলা চালান এবং দুই সেনাকে হত্যা করেন। এ ঘটনায় আহত হয় আরও বেশ কয়েকজন সৈনিক।

সেই হামলার সময় গিলাদ শালিত নামে এক ইসরায়েলি সেনাকেও বন্দী করে নিয়ে আসেন হামাস যোদ্ধারা। এই গিলাদ শালিত প্রায় পাঁচ বছর হামাসের আস্তানায় বন্দী ছিলেন। পরে একটি বন্দী বিনিময় চুক্তির আওতায় তাঁকে ২০১১ সালে মুক্তি দেওয়া হয়।

গিলাদ শালিতের মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েল ১ হাজার ২৭ জন ফিলিস্তিনি ও আরব বন্দীকে ছেড়ে দেয়। ইসরায়েলের কাছ থেকে মুক্ত হওয়া এসব বন্দীর একজন ছিলেন সিনওয়ার। ২২ বছরের বন্দী জীবন শেষে গাজায় ফিরে আসেন তিনি।

হামাসে উত্থান
ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে গাজায় ফিরে আসার পর থেকেই হামাসে সিনওয়ারের উত্থান ঘটতে থাকে। বিশেষ করে সংগঠনটির সামরিক শাখায় তাঁর প্রভাব বাড়তে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের একটি তালিকায় সিনওয়ারকে যুক্ত করে আমেরিকা। দুই বছর পর ২০১৭ সালে হামাসের শীর্ষ নেতা নির্বাচন করা হয় সিনওয়ারকে।

পদমর্যাদার দিক থেকে সিনওয়ার হলেন হামাসের দ্বিতীয় শীর্ষ ব্যক্তিত্ব। তাঁর ওপরে আছেন সংগঠনটির রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়া। তবে হানিয়া স্বেচ্ছা নির্বাসনে অন্য দেশে অবস্থান করায় গাজার অঘোষিত শাসক হয়ে ওঠেন সিনওয়ার। তাঁর ইশারাতেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে হামাসের হামলা পরিচালিত হয়ে আসছে।

সিনওয়ারকে আপসহীন নেতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অগ্নিগর্ভ বক্তব্য ও ভাষণের জন্য তিনি সুপরিচিত। হামাসের নেতৃত্বে থাকা অন্য নেতারা তাঁকে সমীহ করে চলতে বাধ্য ছিলেন। সংগঠনটির কোনো নেতা কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত হলে সিনওয়ার নিশ্চিতভাবেই তাঁকে কঠোর শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতেন। এ প্রসঙ্গে হামাস কমান্ডার মাহমুদ ইশতিবির উদাহরণ টানা যায়। ২০১৫ সালে তাঁকে অর্থ আত্মসাৎ ও নৈতিক অবক্ষয়ের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। কথিত আছে ইশতিবির বিরুদ্ধে সমকামিতার অভিযোগও ছিল।

মোস্ট ওয়ান্টেড
সর্বশেষ ইসরায়েলে হামাসের হামলাও সংঘটিত হয়েছে সিনওয়ারের নির্দেশনায়। হামলার পর তাঁর সম্পর্কে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র রিচার্ড হেচ বলেন, ‘ইয়াহিয়া সিনওয়ার শয়তানের প্রতিরূপ। তিনি এই হামলার মাস্টারমাইন্ড, যেমনটি ওসামা বিন করেছিলেন নাইন-ইলেভেনে।’

হেচ আরও বলেন, ‘ইসরায়েল সিনওয়ারকে ছেড়ে দেবে না। তিনি এবং তাঁর সঙ্গীরা আমাদের নজরের মধ্যে রয়েছেন। আমরা তাঁকে ধরবই।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা factcheck@ajkerpatrika.com

সেনাপ্রধানকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করল লেবানন

তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করছে ভারত

নেতানিয়াহুকে ‘কুচকুচে কালো কুকুরছানা’ বলে গালি দেওয়ার ভিডিও শেয়ার ট্রাম্পের

ভিনদেশে আইনি পদক্ষেপের মুখোমুখি হচ্ছে সৈন্যরা, নতুন বিধিনিষেধ ইসরায়েলের