লেবাননের সেনাপ্রধান জোসেফ খলিল আউন দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার লেবাননের পার্লামেন্টের সদস্যরা তাঁকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করেন। তাঁর নির্বাচন দেশটিতে প্রায় দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা ক্ষমতার শূন্যতার অবসান ঘটিয়েছে। তিনি লেবাননের ১৪তম প্রেসিডেন্ট। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার খবর থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
আজ বিকেলে দ্বিতীয় দফার ভোটে তিনি ১২৮ আসনের পার্লামেন্টে ৯৯ ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি এমন একসময়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন যার কয়েক দিন আগেই ইসরায়েল ও লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর মধ্যে ১৪ মাস ধরে চলা সংঘর্ষ শেষে একটি নাজুক অস্ত্রবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়েছে। দেশটি পুনর্গঠনের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা পাওয়ার চেষ্টা করছে।
পার্লামেন্টে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়া পর জেনারেল আউন বলেন, ‘আজ থেকে লেবাননের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় শুরু হলো।’ এর আগে, লেবাননের পার্লামেন্ট ১২ বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালায়। জেনারেল আউন তাঁর পূর্বসূরি মিশেল আউনের স্থলাভিষিক্ত হলেন। সাবেক জেনারেল ও প্রেসিডেন্ট মিশেল আউনের মেয়াদ ২০২২ সালের অক্টোবরে শেষ হয়।
ভূমধ্যসাগরীয় এই দেশটি ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে প্রেসিডেন্ট শূন্য ছিল। হিজবুল্লাহ এবং তার বিরোধীদের মধ্যে উত্তেজনার কারণে আগের এক ডজন ভোট ব্যর্থ হয়। আউনের সামনে এখন অস্ত্রবিরতি পর্যবেক্ষণ এবং আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের দাবি পূরণে সংস্কার পরিচালনার জন্য একজন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়ার মতো কঠিন চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যা দেশটির ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকট লাঘব করতে পারে।
আউনকে যুক্তরাষ্ট্র এবং আঞ্চলিক শক্তি সৌদি আরবের পছন্দের প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছিল। লেবাননে মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিসা জনসন আজ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের অধিবেশনে যোগ দিতে লেবাননের পার্লামেন্টে গিয়েছিলেন। তিনি মন্তব্য করেন, তিনি আউনের নির্বাচনে ‘খুবই খুশি’।
সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান এবং যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান আউনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বলে জানানো হয়েছে সৌদি রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে। বৈরুতে ইরানের দূতাবাসও আউনের নির্বাচনকে স্বাগত জানিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে শেয়ার করা পোস্টে তারা জানিয়েছে, তারা একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যাশা করছে এবং আশা করছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা হবে যা দুই দেশের যৌথ স্বার্থে সহায়ক হবে।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ক্রিস্টোফ লেমোইন এই ফলাফলকে লেবাননের জন্য একটি নতুন অধ্যায় বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আউনের নির্বাচনের পর একটি শক্তিশালী সরকার গঠিত হওয়া উচিত। যা লেবাননের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে সক্ষম।’
লেবাননে জাতিসংঘের বিশেষ সমন্বয়কারী জিনিন হেনিস-প্লাসচার্ট এই নির্বাচনের বিষয়টি ‘লেবাননের রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শূন্যতা দূরীকরণে একটি দীর্ঘ প্রতীক্ষিত প্রথম পদক্ষেপ’ বলে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘একজন প্রধানমন্ত্রী মনোনীত করতে হবে এবং অবিলম্বে একটি সরকার গঠন করতে হবে।’
জোসেফ আউন লেবাননের পঞ্চম সেনাপ্রধান, যিনি প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। তাঁর আগে আরও তিন সেনাপ্রধান টানা দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট মিশেল আউনও সেনাপ্রধান ছিলেন। তবে এই দুই আউনের মধ্যে কোনো সরাসরি সম্পর্ক নেই।