জাহাঙ্গীর আলম
গত সোমবার রাজধানীর বাড্ডা লিংক রোডে এক রাইড শেয়ার চালক নিজের বাইক পুড়িয়ে দিয়েছেন। ট্রাফিক পুলিশ বারবার মামলা দেওয়ায় রাগে-ক্ষোভে-দুঃখে তিনি এমন কাজ করেছেন বলে সংবাদমাধ্যমে এসেছে। পরে জানা গেল ঘটনা এটুকুই নয়; মহামারিতে ব্যবসা গুটিয়ে ভাড়ায় বাইক চালক হয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। তাহলে ‘সামান্য’ মামলার জন্য একমাত্র অবলম্বনটি পুড়িয়ে দেওয়ার মতো ‘বোকামি’ তিনি কেন করলেন?
এই প্রশ্নের উত্তর সরল নয়। রাস্তাঘাটে মানুষের মেজাজ খেয়াল করলে সহজেই অনুমান করা যায়, মহামারির অভিঘাত ক্রমশ প্রকাশ্য!
কোভিড মহামারি সারা বিশ্বেই অর্থনীতির বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। বিপুলসংখ্যক প্রতিষ্ঠান এক দিনের নোটিশে কর্মী ছাঁটাই করেছে। অনেক দেশে এরই মধ্যে বেকার সমস্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ছোট পদে কাজ করা কর্মী, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা।
পর্যবেক্ষকেরা আশঙ্কা করছেন, মহামারি পরবর্তী অর্থনৈতিক মন্দার কারণে সৃষ্ট বেকারত্ব ২০০৮-০৯ সালের দিকের মহামন্দাকে (গ্রেট রিসেশন) ছাড়িয়ে যাবে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, বেকার সমস্যা মহামন্দার (গ্রেট ডিপ্রেশন ১৯২৯-৩৯) সময়কার চূড়া (১৯৩৩ সাল) ছুঁয়ে ফেলবে।
আগের এসব অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সঙ্গে এখনকার সংকটের অনেক পার্থক্য রয়েছে—এটা সত্য। তা সত্ত্বেও কিছু মনোবৈজ্ঞানিক গবেষণা এই আর্থিক ক্ষতির মানসিক মূল্য পরিমাপে আমাদের দারুণভাবে সহায়তা করতে পারে। যেমন—অর্থনৈতিক মন্দা ও ক্ষতি কীভাবে মানুষের আচরণগত পরিবর্তন ঘটায় এবং মানসিক স্বাস্থ্যে কেমন প্রভাব ফেলে, সেটি এই গবেষণাগুলো থেকে আঁচ করা যায়।
আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের একটি গবেষণা নিবন্ধের তথ্য অনুযায়ী, অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবে সৃষ্ট মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের মাইডাস উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মহামন্দার (গ্রেট রিসেশন) পর সাধারণ মানুষের মানসিক বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার প্রবণতা আগের সময়ের তুলনায় বেশ দ্রুত এবং টেকসই হয়েছে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে দেখতে গেলে এখানে একটি ছদ্ম অসমতার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে মন্দার সময় যারা ব্যক্তিগত জীবনে কঠিন অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে গেছেন সেটি আর্থিক, পারিবারিক বা কর্মসংস্থান সম্পর্কিত যা-ই হোক না কেন, তাঁদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান হারে অকারণ আতঙ্ক, মাত্রাতিরিক্ত উদ্বেগ, বিষণ্নতা ও ক্ষতিকর জিনিসের ব্যবহার দেখা যায়।
এই ধরনের মানসিক সমস্যাগুলো গোটা বিশ্ব মন্দা কাটিয়ে ওঠার অনেক পরে এমনকি ২০১৩ সালেও মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করতে দেখা গেছে।
সেখানে কোভিড মহামারি বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর অত্যন্ত ত্বরিত প্রভাব ফেলেছে। এর অর্থ আমরা আরেকটি বড় ধরনের বৈশ্বিক মহামন্দার দিকে ধাবিত হচ্ছি। এই গবেষণা প্রতিবেদনের সহলেখক ম্যাকারি ইউনিভার্সিটির আবেগীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মনোবিজ্ঞানবিষয়ক সিনিয়র ফেলো ড. মিরিয়াম ফোর্বস এমনটিই আশঙ্কা করছেন।
মিরিয়াম ফোর্বস বলছেন, অর্থনীতিতে কোভিড মহামারির প্রভাব আকস্মিক। আমরা যে আরেকটি বৈশ্বিক মহামন্দার দিকে ধাবিত হচ্ছি, এটি তারই ইঙ্গিত। বহু মানুষ চাকরি হারাচ্ছে, অর্থনৈতিক চাপের মুখে পড়েছে এবং এই পরিস্থিতিতে পারিবারিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আমাদের গবেষণা বলছে, এসব অভিজ্ঞতা মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতিকে দীর্ঘস্থায়ী করার ঝুঁকি তৈরি করছে। উৎপাদনশীলতা হ্রাস ও স্বাস্থ্যসেবা খাতের অপ্রতুল ব্যবহারের দরুন এই ঝুঁকি মন্দার অর্থনৈতিক ক্ষতিকে দীর্ঘস্থায়ী ও জটিল করতে পারে।
তবে মানসিক স্বাস্থ্যে মন্দার প্রভাব কিন্তু সবার ক্ষেত্রে সমান নয়। মাইডাসের উপাত্তগুলোর সঙ্গে ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ের পরিস্থিতির তুলনা করে দেখা গেছে, মহামন্দা পরবর্তী ২০১১ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে শারীরিক স্বাস্থ্যের মতো মানসিক স্বাস্থ্যেরও অবনতি লক্ষ্য করার মতো ছিল। পাশাপাশি আর্থসামাজিক বিষয় তো ছিলই। গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্রের লাতিন নয়—এমন শ্বেতাঙ্গদের (অ্যাংলো-আমেরিকান) আর্থসামাজিক ও মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতির দিকে নজর দেওয়া হয়। কারণ, এ গোষ্ঠীতেই ওই সময় সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা, মাত্রাতিরিক্ত মাদক সেবন ও তথাকথিত নৈরাশ্য থেকে মৃত্যু সম্পর্কিত নানা ঘটনা বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, এই গোষ্ঠীর ৭৫ শতাংশ মার্কিন শ্বেতাঙ্গের আর্থসামাজিক অবস্থার কোনো পরিবর্তন তো হয়ইনি; বরং অনেকের ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে। আর মানসিক স্বাস্থ্যের দিক বিচারে জীবন নিয়ে তুষ্টি, উন্নতি, ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রভাব এবং গুরুতর বিষণ্নতায় কোনো হেরফের হয়নি বললেই চলে। বরং উন্নতির প্রমাণ মিলেছে। আর্থসামাজিক মর্যাদার দিক থেকে যে যত নিচু শ্রেণির, তার মানসিক স্বাস্থ্যে তত অবনতি দেখা গেছে। আর এই গোষ্ঠীর ১০ শতাংশের মধ্যে মন্দার নেতিবাচক প্রভাব বৃদ্ধির লক্ষণ দেখা গেছে। বিপরীতে ইতিবাচক প্রভাবের সবচেয়ে বেশি হ্রাস এবং জীবন নিয়ে অতুষ্টিও ছিল চরম মাত্রায়। পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যেরও কোনো উন্নতি তো দূরের কথা, এর ব্যাপক অবনতি হয়েছে।
এ ছাড়া মহামন্দার পর গরিব ও কম শিক্ষিত মানুষের মধ্যে অন্যান্য স্বাস্থ্যগত উন্নতিতেও নেতিবাচক প্রভাব দেখা গেছে। বিশেষ করে যাদের শিক্ষাদীক্ষা কম, তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যেরই তুলনামূলক বেশি অবনতি দেখা গেছে।
মহামন্দার আগে ও পরে ৫৪টি দেশের আত্মহত্যা প্রবণতার উপাত্তের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০০০ ও ২০০৭ সালের মধ্যকার প্রবণতা অনুযায়ী ২০০৯ সালে যত আত্মহত্যার ঘটনা ঘটার আশঙ্কা ছিল, প্রকৃতপক্ষে এই সময়ে এসে তার চেয়ে ৪ হাজার ৮৮৪টি বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। যেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে প্রতি বছর গড়ে ৮ লাখ মানুষ আত্মহত্যা করে। ইউরোপ, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতেই আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি দেখা গেছে। এর মধ্যে আবার পুরুষের সংখ্যাই বেশি।
এ সম্পর্কিত বিভিন্ন গবেষণায় আত্মহত্যা ও বেকারত্বের মধ্যে সম্পর্ক পরিলক্ষিত হয়েছে। বিশেষ করে যেসব দেশে মহামন্দার আগে তুলনামূলক বেকারত্বের হার কম ছিল, সেখানেই এ প্রবণতা বেড়েছে। গবেষকেরা বলছেন, আত্মহত্যা হলো অর্থনৈতিক অধোগতির প্রভাবে সৃষ্ট আবেগীয় পীড়নের একটি ক্ষুদ্র অংশ। আত্মহত্যা চেষ্টার ঘটনা বিবেচনায় নিলে পরিসংখ্যানটা আরও অনেক বড় হবে।
অর্থাৎ, ধারণা করা যায়, মহামারির অভিঘাত নানাভাবে প্রকাশ পেতে থাকবে। তীব্র হতাশা, ক্ষোভ, ক্রোধ থেকে সহিংস আচরণ; একা হাঁটতে হাঁটতে বিড়বিড় করে কথা বলা; পাগলামি; প্রতারণা; নৃশংসতা ইত্যাদি আচরণগত সমস্যার বাড়বাড়ন্ত হয়তো সামনে আরও ভাবিয়ে তুলবে।
অবশ্য বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, মহামারি বা অন্যান্য কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট থেকে যে মানসিক সংকট তৈরি হয়, সেটি মোকাবিলা খুব কঠিন কাজ নয়। মনোবিদেরা এটিকে একটি হালকা চ্যালেঞ্জ বলেই মনে করেন। কারণ, মানুষের মানসিক অবস্থা বেশ স্থিতিস্থাপক। অনেকে বলছেন, করোনাভাইরাস সংকট একটা প্যারাডক্সের (ধাঁধা) মধ্যে ফেলে দিয়েছে। অনেকের জন্য এখানে জীবনের নতুন মানে খুঁজে পাওয়ারও একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে। এই অভিজ্ঞতা থেকে সামাজিক দায়গুলোকে চিহ্নিত ও অনুসরণ করাটা খুব জরুরি।
গত সোমবার রাজধানীর বাড্ডা লিংক রোডে এক রাইড শেয়ার চালক নিজের বাইক পুড়িয়ে দিয়েছেন। ট্রাফিক পুলিশ বারবার মামলা দেওয়ায় রাগে-ক্ষোভে-দুঃখে তিনি এমন কাজ করেছেন বলে সংবাদমাধ্যমে এসেছে। পরে জানা গেল ঘটনা এটুকুই নয়; মহামারিতে ব্যবসা গুটিয়ে ভাড়ায় বাইক চালক হয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। তাহলে ‘সামান্য’ মামলার জন্য একমাত্র অবলম্বনটি পুড়িয়ে দেওয়ার মতো ‘বোকামি’ তিনি কেন করলেন?
এই প্রশ্নের উত্তর সরল নয়। রাস্তাঘাটে মানুষের মেজাজ খেয়াল করলে সহজেই অনুমান করা যায়, মহামারির অভিঘাত ক্রমশ প্রকাশ্য!
কোভিড মহামারি সারা বিশ্বেই অর্থনীতির বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। বিপুলসংখ্যক প্রতিষ্ঠান এক দিনের নোটিশে কর্মী ছাঁটাই করেছে। অনেক দেশে এরই মধ্যে বেকার সমস্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ছোট পদে কাজ করা কর্মী, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা।
পর্যবেক্ষকেরা আশঙ্কা করছেন, মহামারি পরবর্তী অর্থনৈতিক মন্দার কারণে সৃষ্ট বেকারত্ব ২০০৮-০৯ সালের দিকের মহামন্দাকে (গ্রেট রিসেশন) ছাড়িয়ে যাবে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, বেকার সমস্যা মহামন্দার (গ্রেট ডিপ্রেশন ১৯২৯-৩৯) সময়কার চূড়া (১৯৩৩ সাল) ছুঁয়ে ফেলবে।
আগের এসব অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সঙ্গে এখনকার সংকটের অনেক পার্থক্য রয়েছে—এটা সত্য। তা সত্ত্বেও কিছু মনোবৈজ্ঞানিক গবেষণা এই আর্থিক ক্ষতির মানসিক মূল্য পরিমাপে আমাদের দারুণভাবে সহায়তা করতে পারে। যেমন—অর্থনৈতিক মন্দা ও ক্ষতি কীভাবে মানুষের আচরণগত পরিবর্তন ঘটায় এবং মানসিক স্বাস্থ্যে কেমন প্রভাব ফেলে, সেটি এই গবেষণাগুলো থেকে আঁচ করা যায়।
আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের একটি গবেষণা নিবন্ধের তথ্য অনুযায়ী, অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবে সৃষ্ট মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের মাইডাস উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মহামন্দার (গ্রেট রিসেশন) পর সাধারণ মানুষের মানসিক বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার প্রবণতা আগের সময়ের তুলনায় বেশ দ্রুত এবং টেকসই হয়েছে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে দেখতে গেলে এখানে একটি ছদ্ম অসমতার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে মন্দার সময় যারা ব্যক্তিগত জীবনে কঠিন অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে গেছেন সেটি আর্থিক, পারিবারিক বা কর্মসংস্থান সম্পর্কিত যা-ই হোক না কেন, তাঁদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান হারে অকারণ আতঙ্ক, মাত্রাতিরিক্ত উদ্বেগ, বিষণ্নতা ও ক্ষতিকর জিনিসের ব্যবহার দেখা যায়।
এই ধরনের মানসিক সমস্যাগুলো গোটা বিশ্ব মন্দা কাটিয়ে ওঠার অনেক পরে এমনকি ২০১৩ সালেও মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করতে দেখা গেছে।
সেখানে কোভিড মহামারি বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর অত্যন্ত ত্বরিত প্রভাব ফেলেছে। এর অর্থ আমরা আরেকটি বড় ধরনের বৈশ্বিক মহামন্দার দিকে ধাবিত হচ্ছি। এই গবেষণা প্রতিবেদনের সহলেখক ম্যাকারি ইউনিভার্সিটির আবেগীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মনোবিজ্ঞানবিষয়ক সিনিয়র ফেলো ড. মিরিয়াম ফোর্বস এমনটিই আশঙ্কা করছেন।
মিরিয়াম ফোর্বস বলছেন, অর্থনীতিতে কোভিড মহামারির প্রভাব আকস্মিক। আমরা যে আরেকটি বৈশ্বিক মহামন্দার দিকে ধাবিত হচ্ছি, এটি তারই ইঙ্গিত। বহু মানুষ চাকরি হারাচ্ছে, অর্থনৈতিক চাপের মুখে পড়েছে এবং এই পরিস্থিতিতে পারিবারিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আমাদের গবেষণা বলছে, এসব অভিজ্ঞতা মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতিকে দীর্ঘস্থায়ী করার ঝুঁকি তৈরি করছে। উৎপাদনশীলতা হ্রাস ও স্বাস্থ্যসেবা খাতের অপ্রতুল ব্যবহারের দরুন এই ঝুঁকি মন্দার অর্থনৈতিক ক্ষতিকে দীর্ঘস্থায়ী ও জটিল করতে পারে।
তবে মানসিক স্বাস্থ্যে মন্দার প্রভাব কিন্তু সবার ক্ষেত্রে সমান নয়। মাইডাসের উপাত্তগুলোর সঙ্গে ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ের পরিস্থিতির তুলনা করে দেখা গেছে, মহামন্দা পরবর্তী ২০১১ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে শারীরিক স্বাস্থ্যের মতো মানসিক স্বাস্থ্যেরও অবনতি লক্ষ্য করার মতো ছিল। পাশাপাশি আর্থসামাজিক বিষয় তো ছিলই। গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্রের লাতিন নয়—এমন শ্বেতাঙ্গদের (অ্যাংলো-আমেরিকান) আর্থসামাজিক ও মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতির দিকে নজর দেওয়া হয়। কারণ, এ গোষ্ঠীতেই ওই সময় সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা, মাত্রাতিরিক্ত মাদক সেবন ও তথাকথিত নৈরাশ্য থেকে মৃত্যু সম্পর্কিত নানা ঘটনা বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, এই গোষ্ঠীর ৭৫ শতাংশ মার্কিন শ্বেতাঙ্গের আর্থসামাজিক অবস্থার কোনো পরিবর্তন তো হয়ইনি; বরং অনেকের ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে। আর মানসিক স্বাস্থ্যের দিক বিচারে জীবন নিয়ে তুষ্টি, উন্নতি, ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রভাব এবং গুরুতর বিষণ্নতায় কোনো হেরফের হয়নি বললেই চলে। বরং উন্নতির প্রমাণ মিলেছে। আর্থসামাজিক মর্যাদার দিক থেকে যে যত নিচু শ্রেণির, তার মানসিক স্বাস্থ্যে তত অবনতি দেখা গেছে। আর এই গোষ্ঠীর ১০ শতাংশের মধ্যে মন্দার নেতিবাচক প্রভাব বৃদ্ধির লক্ষণ দেখা গেছে। বিপরীতে ইতিবাচক প্রভাবের সবচেয়ে বেশি হ্রাস এবং জীবন নিয়ে অতুষ্টিও ছিল চরম মাত্রায়। পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যেরও কোনো উন্নতি তো দূরের কথা, এর ব্যাপক অবনতি হয়েছে।
এ ছাড়া মহামন্দার পর গরিব ও কম শিক্ষিত মানুষের মধ্যে অন্যান্য স্বাস্থ্যগত উন্নতিতেও নেতিবাচক প্রভাব দেখা গেছে। বিশেষ করে যাদের শিক্ষাদীক্ষা কম, তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যেরই তুলনামূলক বেশি অবনতি দেখা গেছে।
মহামন্দার আগে ও পরে ৫৪টি দেশের আত্মহত্যা প্রবণতার উপাত্তের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০০০ ও ২০০৭ সালের মধ্যকার প্রবণতা অনুযায়ী ২০০৯ সালে যত আত্মহত্যার ঘটনা ঘটার আশঙ্কা ছিল, প্রকৃতপক্ষে এই সময়ে এসে তার চেয়ে ৪ হাজার ৮৮৪টি বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। যেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে প্রতি বছর গড়ে ৮ লাখ মানুষ আত্মহত্যা করে। ইউরোপ, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতেই আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি দেখা গেছে। এর মধ্যে আবার পুরুষের সংখ্যাই বেশি।
এ সম্পর্কিত বিভিন্ন গবেষণায় আত্মহত্যা ও বেকারত্বের মধ্যে সম্পর্ক পরিলক্ষিত হয়েছে। বিশেষ করে যেসব দেশে মহামন্দার আগে তুলনামূলক বেকারত্বের হার কম ছিল, সেখানেই এ প্রবণতা বেড়েছে। গবেষকেরা বলছেন, আত্মহত্যা হলো অর্থনৈতিক অধোগতির প্রভাবে সৃষ্ট আবেগীয় পীড়নের একটি ক্ষুদ্র অংশ। আত্মহত্যা চেষ্টার ঘটনা বিবেচনায় নিলে পরিসংখ্যানটা আরও অনেক বড় হবে।
অর্থাৎ, ধারণা করা যায়, মহামারির অভিঘাত নানাভাবে প্রকাশ পেতে থাকবে। তীব্র হতাশা, ক্ষোভ, ক্রোধ থেকে সহিংস আচরণ; একা হাঁটতে হাঁটতে বিড়বিড় করে কথা বলা; পাগলামি; প্রতারণা; নৃশংসতা ইত্যাদি আচরণগত সমস্যার বাড়বাড়ন্ত হয়তো সামনে আরও ভাবিয়ে তুলবে।
অবশ্য বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, মহামারি বা অন্যান্য কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট থেকে যে মানসিক সংকট তৈরি হয়, সেটি মোকাবিলা খুব কঠিন কাজ নয়। মনোবিদেরা এটিকে একটি হালকা চ্যালেঞ্জ বলেই মনে করেন। কারণ, মানুষের মানসিক অবস্থা বেশ স্থিতিস্থাপক। অনেকে বলছেন, করোনাভাইরাস সংকট একটা প্যারাডক্সের (ধাঁধা) মধ্যে ফেলে দিয়েছে। অনেকের জন্য এখানে জীবনের নতুন মানে খুঁজে পাওয়ারও একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে। এই অভিজ্ঞতা থেকে সামাজিক দায়গুলোকে চিহ্নিত ও অনুসরণ করাটা খুব জরুরি।
ড. ইউনূস যখন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন পুরো জাতি তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিল। তবে তাঁকে পরিষ্কারভাবে এই পরিকল্পনা প্রকাশ করতে হবে যে, তিনি কীভাবে দেশ শাসন করবেন এবং ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।
৪ ঘণ্টা আগেসম্প্রতি দুই বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন ডলারনির্ভর বন্ড বিক্রি করেছে চীন। গত তিন বছরের মধ্যে এবারই প্রথম দেশটি এমন উদ্যোগ নিয়েছে। ঘটনাটি বিশ্লেষকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাঁরা মনে করছেন, এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি বার্তা দিয়েছে চীন।
১ দিন আগেএকটা সময় ইসরায়েলের ছোট ও সুসংহত সমাজকে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে প্রায় অপ্রতিরোধ্য বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এখন বিষয়টি কার্যত বদলে গেছে। বর্তমান সংঘাত, ইসরায়েলে উগ্র ডানপন্থার উত্থান এবং নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ২০২৩ সালের বিচার বিভাগ সংস্কারের মতো বিষয়গুলো দেশটির সমাজে বিদ্যমান সূক্ষ্ম বিভাজনগুলো
১ দিন আগেট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রূপ এবং যুদ্ধ ও বাণিজ্য সম্পর্কের পরিবর্তন নিয়ে বিশ্লেষণ। চীন, রাশিয়া ও ইউরোপের সাথে নতুন কৌশল এবং মার্কিন আধিপত্যের ভবিষ্যৎ।
৩ দিন আগে