কর্মক্ষেত্রে অকাজে কত সময় যায়? 

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০২২, ১৩: ৫২
আপডেট : ১২ জুলাই ২০২২, ১৪: ০৩

বিভিন্ন কার্যক্রমে একজন মানুষ তাঁর জীবনের কতটা সময় ব্যয় করে, তার হিসাব রীতিমতো বিস্ময়কর। যেমন—আপনি আপনার জীবনের এক-তৃতীয়াংশ সময় ঘুমিয়ে পার করেন। প্রায় এক দশক চলে যায় ফোনের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে। স্ট্রিমিং সাইটগুলোতে কী দেখবেন, সেই সিদ্ধান্ত নিতে ব্যয় হয় চার মাস।

মেরিল্যান্ড অ্যান্ড ডেলাওয়্যার এন্টারপ্রাইজ ইউনিভার্সিটি পার্টনারশিপের (মেডআপ) শিক্ষাবিদদের করা এক নতুন গবেষণায় কর্মক্ষেত্রে সময় ব্যয়ের দিকটি উঠে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ৫ হাজার কর্মী নিয়ে একটি জরিপ পরিচালনা করেন গবেষকেরা। তাতে প্রতিটি কর্মদিবসে অর্থহীন কার্যকলাপে একজন ব্যক্তি কত মিনিট সময় নষ্ট করেন, তা চিহ্নিত করা হয়। তবে গবেষণায় মিটিংয়ের বিষয়টি বাদ দেওয়া হয়। কারণ মিটিং সব সময় বা সবার জন্য সময়ের অপচয় নয়।

গবেষকেরা জরিপে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে একটি ‘চাপিয়ে দেওয়া নিরর্থক’ সময়ের হিসাব তুলে ধরেন। তাঁদের মতে, এই সময় আরও ভালোভাবে ব্যয় করা যেতে পারে।

গবেষণার ফলাফল ছিল আক্ষরিক অর্থেই অবিশ্বাস্য। টাইপো সংশোধন করতে প্রতিটি ঊর্ধ্বতন কর্মী দিনে গড়ে ২০ মিনিট সময় ব্যয় করেন, যা একজনের ৪৫ বছরের ক্যারিয়ারের হিসাবে ১৮০ দিন বা অর্ধেক বছরের সমান। 

পাসওয়ার্ড মনে রাখতে, ভুলভাবে সিস্টেমে ঢোকা বা আপডেট করার চেষ্টায় কয়েক মাস নষ্ট হয়ে যায়। ছবিটি প্রতীকী। কিছু শব্দ ঘন ঘন ভুল টাইপ করেও কর্মী একটি দিন নষ্ট করতে পারেন। গবেষণায় ইংরেজিভাষী বিশ্বের সবচেয়ে অহেতুক শব্দ চিহ্নিত করা হয় ‘Thnaks’, এর পরে ‘teh’, ‘yuo’ ও ‘remeber’। অধিকাংশ কর্মী ‘বেস্ট উইশ’ লিখে যে পরিমাণ সময় ব্যয় করেন, তা কয়েক দিনের সমান। 

একটি ছাগলের গর্ভধারণের সময়কাল প্রায় ১৪৫ দিন। এই পরিমাণ সময় কর্মীরা কেবল লগ ইন করতে ব্যয় করেন। নিরাপত্তাসংক্রান্ত উদ্বেগ থেকে এভাবে অনেক সময়ের অপচয় হচ্ছে। পাসওয়ার্ড মনে রাখতে, ভুলভাবে সিস্টেমে ঢুকতে বা সিস্টেম আপডেট করার চেষ্টায় কয়েক মাস নষ্ট হয়ে যায়। 

আবার একটি খালি স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থেকেও সময় ব্যয় হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অফিসের কাস্টমাইজড সিস্টেমে ঢুকতে অনেক সময় নষ্ট হয়। তাই অনেকে সেগুলো বন্ধ করে দেয়। হেল্প উইন্ডো ও টুল-টিপ বক্স বাদ দেওয়ার বিষয়টি কর্মজীবন থেকে অনেক সময় নিয়ে নেয়। অপারেটিং সিস্টেমে আপডেটের সময়সূচি ঠিক করার জন্য বারবার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা এমন আরেকটি বিষয়। এই সময় আপনি কখনোই ফিরে পাবেন না। 

পপ-আপ বিজ্ঞাপন জ্যাপ করা বা স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলা ভিডিও পস দেওয়ার চেষ্টায় যে সময় নষ্ট হয়, তা বুনন শিখতে বা মাচুপিচুতে ঘুরে আসতে ব্যয় করা যেতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞরা।

‘পরিপাটি’ কার্যকলাপ নিশ্চিতে কর্মীর জীবনের চার মাসের বেশি সময় চলে যায়। ই-মেইল ডিলিট করার কাজ আপনার জীবন থেকে প্রায় ছয় সপ্তাহ সময় নিয়ে নেয়। প্রতিষ্ঠানের কিছু বার্তা, যা আপনার জন্য প্রয়োজনীয় নয়, তা দেখা বা আপনার ফোনের কিছু নোটিফিকেশন ক্লিয়ার করা, যা আপনি কখনোই দেখবেন না—এসব কাজ আপনার বেশ কয়েক দিন খেয়ে ফেলে। 

বিভিন্ন ধরনের ফরম্যাটিং টাস্ক অনেক সময় কেড়ে নেয়। ওয়ার্ড ফাইল বা গুগল ডকুমেন্টে মার্জিন পরিবর্তন করার প্রচেষ্টা বা ভাঙা স্প্রেডশিটে অনুপস্থিত বন্ধনীটি ঠিক কোথায় রাখতে হবে, তা খুঁজে বের করার চেষ্টায় ব্যয় করা সময়ের কথা চিন্তা করুন। শেক্‌সপিয়ার ‘কিং লেয়ার’ লিখতে যে সময় নিয়েছেন, অতটা সময় একজন অফিস কর্মী তাঁর কর্মজীবনে কম্পিউটারে ফন্টের আকার পরিবর্তন করে ব্যয় করেন। 

প্রতীকী ছবি।আপনি যে কাজটি সেভ করতে পারেননি, তা পুনরায় করা এবং এর কারণে যে মনস্তাত্ত্বিক চাপে পড়ছেন, এটিও গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যদিও এই সমস্যাটি এখন অনেকটা কমেছে প্রোগ্রামে অটো কারেকশন ও অটোসেভ অন্তর্ভুক্তির কারণে। তবে পুরোপুরি সমাধান হয়নি। গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে এখনো ব্যাটারি ফুরিয়ে যায় কিংবা ইন্টারনেট সংযোগ নিরবচ্ছিন্ন হয় না। 

একটি গুগল ডকুতে মন্তব্যের তালিকা করা, সেভ করতে না পারা বা পরে সবকিছু বন্ধ করে দেওয়া একটি বিশেষ ধরনের হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শত শত অ্যারো ও টেক্সট বক্সসহ একটি অর্গ চার্ট তৈরি করে হয়তো দেখলেন, আপনি কোনোটি মিস করে গেছেন। 

একজন কর্মীর জীবনে নিয়মিত সময় অপচয়ের অনেকগুলো ক্ষেত্রের মধ্যে এগুলো অন্যতম। এ ছাড়া মিটিংয়ের জন্য সমন্বয়কারী ডায়েরি, যা পরে বাতিল করা হবে, এতে নষ্ট হয় গড়ে এক মাস। অন্যের ভুলের পুনরাবৃত্তি ধরিয়ে দিতে অপেক্ষা করে আরও দুই সপ্তাহ সময় চলে যায়। একটি ইমেইল তৈরি করার জন্য ঘণ্টা ব্যয় করে তারপর তা ড্রাফট ফোল্ডারে রেখে দেওয়ায় দুই দিন, আর প্রিন্টারে বিভিন্ন ফ্ল্যাপ খোলা ও বন্ধ করায় একটি দিন নষ্ট হয়। 

মেরিল্যান্ড অ্যান্ড ডেলাওয়্যার এন্টারপ্রাইজ ইউনিভার্সিটি পার্টনারশিপের গবেষণায় দেখা যায়, এই সময় অপচয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে প্রযুক্তি। আবার এ থেকে উত্তরণে প্রযুক্তিই সাহায্য করতে পারে। ডায়েরি সিঙ্ক আপ ও অটো কারেকশনের মতো সুবিধা ইতিমধ্যেই কার্যকর হয়েছে। নিঃসন্দেহে পাসওয়ার্ড লগইনের জায়গা নিয়েছে এখন ফেসিয়াল রিকগনিশন ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট। এভাবে সময় বাঁচানো যায়। আর বেঁচে যাওয়া সময়কে আরও ফলপ্রসূ কাজে ব্যয় করা যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। 

দ্য ইকোনমিস্ট থেকে অনুবাদ করেছেন তামান্না-ই-জাহান

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

ভারতের পাল্টা আক্রমণে দিশেহারা অস্ট্রেলিয়া

ঢাকা কলেজে সংঘর্ষকালে বোমা বিস্ফোরণে ছিটকে পড়েন সেনাসদস্য—ভাইরাল ভিডিওটির প্রকৃত ঘটনা

ঐশ্বরিয়ার বিচ্ছেদের খবরে মুখ খুললেন অমিতাভ

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত