নাজমুল ইসলাম
একটি চলন্ত বাস। বাসটির সামনের সিটে আপনি বসে আছেন। ঢাকা শহরের ব্যস্ততম রাস্তা ধরে সেটি এগিয়ে চলছে। রাস্তার পাশে সংকীর্ণ ফুটপাত। ফুটপাত ধরে সারি সারি মানুষ হাঁটছে। ফুটপাতের অধিকাংশ জায়গা দখল করে আছে হকারেরা। ফলে অনেক মানুষ ফুটপাত ছেড়ে মূল রাস্তা ধরে হাঁটতে বাধ্য হচ্ছে। বহু স্থানে ফুটপাতে পা ফেলার মতো জায়গা অবশিষ্ট নেই। রাস্তায় গাড়ির সারি। ফুটপাতের মতো এখানকার অবস্থাও প্রায় একই। মৌচাকের বাসায় মৌমাছি যেমন জড়সড় হয়ে থাকে, গাড়িগুলোও ঠিক তেমনভাবেই চলছে রাস্তায়। একটু অসাবধান হলেই এক গাড়ির সঙ্গে অন্য গাড়ির সংঘর্ষ অবধারিত। কিন্তু এর মধ্যেই কিছু বাস বেপরোয়া গতিতে চলছে। এই বেপরোয়া গতি যেকোনো মুহূর্তে যে কাউকে খুন করতে পারে। সংখ্যাটা একাধিকও হতে পারে।
এমন ঘটনা তো প্রতি দিনই হচ্ছে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে। বিষয়টি কি অস্বাভাবিক নয়? অবশ্যই অস্বাভাবিক। তাহলে এই অস্বাভাবিকতা বছরের পর বছর সহ্য করা মানুষগুলো কী স্বাভাবিক? মনে হয় না। স্বাভাবিক মানুষের সমাজে দীর্ঘ সময় ধরে অস্বাভাবিকতা চলতে পারে না। কিন্তু তাই হচ্ছে। অস্বাভাবিকতাই এখন স্বাভাবিকতায় পরিণত হয়েছে। না হলে এমন একটি বিষয়ে গোটা সমাজ কী করে নির্লিপ্ত থাকতে পারে? কিন্তু পারছে। আর পারছে বলেই এই সমাজের স্বাভাবিক বলে পরিচিতদের মানসিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যায় অনায়াসে। এ প্রশ্নের আওতার বাইরে কেউ নয়। তাহলে পুরো জাতিই কি সাইকোপ্যাথ হয়ে গেল?
সাইকোপ্যাথ কারা?
সাইকোপ্যাথের অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য আছে। তার মধ্যে একটি হলো সহানুভূতির অভাব। অন্যের দুঃখ, কষ্ট, ভীতি বা উদ্বেগকে এরা অনুভব করতে পারে না। তারা মানুষের দুর্দশা সম্পর্কে উদাসীন, এমনকি সে তার বন্ধু বা পরিবারের সদস্য হলেও। বাংলাদেশের জনপরিসরের দিকে তাকালে এই বৈশিষ্ট্যগুলো এখন ভীষণভাবে দৃশ্যমান। এখানে আহতকে পাশ কাটিয়ে নির্বিঘ্নে মানুষ চলে যেতে পারে। এখানে কারও প্রতি সাধারণ সহানুভূতির প্রকাশই এখন খবরের উপাদান হয়ে উঠেছে।
ঢাকা শহরে বাসযোগ্যতা ও যানজটের চিত্র
ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইপিইউ) ২০১৯ সালে বৈশ্বিক বাসযোগ্যতা সূচক প্রকাশ করে। এতে ১৪০টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ছিল ১৩৮ তম। ঢাকার চেয়ে খারাপ অবস্থা কেবল যুদ্ধবিধ্বস্ত শহর সিরিয়ার দামেস্ক ও নাইজেরিয়ার রাজধানী লাগোসের। বসবাসের এই অযোগ্যতার অন্যতম বড় একটি কারণ ছিল যানজট। নামবিও নামের একটি বৈশ্বিক তথ্যভান্ডারের সমীক্ষায় ২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্বের সর্বাধিক যানজটের শহর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ২০১৭-১৮ সালে ঢাকার অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। আর ২০১৬ সালে ছিল তৃতীয়।
আছে অন্য সূচকও। জাতিসংঘের বসতিসংক্রান্ত উপাত্ত অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহর। জাতিসংঘের আবাসন-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ঢাকায় জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪৪ হাজার ৫০০ জন। বাংলাদেশের জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের () তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় বর্তমানে ১ কোটি ৬৪ লাখ মানুষ বাস করছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও নিপোর্টের সাম্প্রতিক এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ঢাকা মহানগর এলাকায় প্রতিদিন ১ হাজার ৪১৮ জন মানুষ বাড়ছে। বছরে যুক্ত হচ্ছে গড়ে ৫ লাখ ১৭ হাজার ৫০০ মানুষ। (প্রথম আলো, ১৩ মে ২০১৭)
যানজটের শহরে বেপরোয়া গতি
বুয়েটের এক গবেষণায় দেখে গেছে, ঢাকা শহরে পিক আওয়ারে গণপরিবহনের গতি ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটার। মানুষের পায়ে হেঁটে চলার গতিও ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটার। ১২ বছর আগে এই গতি ছিল ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার। যানজটের কারণেই গাড়ির গতি মানুষের হাঁটার গতির সমান হয়েছে। যানজট কতটা দুঃসহ অবস্থায় পৌঁছেছে, তা শুধু এই তথ্য থেকেই বোঝা যায়।
মুশকিল হলো এই সীমাহীন যানজটের মধ্যেও বাসগুলো বেপরোয়া গতিতে চলে। ঘণ্টায় গণপরিবহনের গতি কমলেও এটি থামছে না। রাজধানীতে চলাচলকারী বাসগুলোর গায়েই রয়েছে এই বেপরোয়া গতির চিহ্ন। এই বেপরোয়া গতি আরও বেড়ে যায়, যখন একই কোম্পানির দুটো গাড়ি কাছাকাছি আসে। তখন কার আগে কে যাত্রী তুলবে—তা নিয়ে ব্যাপক প্রতিযোগিতা শুরু হয়। কিন্তু এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলার সময়েও বাসে থাকা ‘যাত্রী’ নামের প্রাণীগুলো ধীরস্থির নিশ্চুপ থাকে।
বেপরোয়া গতির প্রতি সাধারণের মনোভাব
ঢাকায় থাকার গত ৮ বছরে নিয়মিতই গণপরিবহনে উঠতে হয়েছে ও হচ্ছে। তাই ঢাকার গণপরিবহন ও তাতে চড়া যাত্রীদের সম্পর্কে কিছুটা অভিজ্ঞতা হয়েছে। সবার সঙ্গে এ অভিজ্ঞতাটি মিলবে—এমন দাবি অবশ্য করা যায় না। কিন্তু এই প্রায় এক দশকের ঢাকা-বাসে বেশির ভাগ গণপরিবহন চালককেই মনে হয়েছে বেপরোয়া। এমনকি কিছু কিছু চালক ও সহকারীদের নেশাগ্রস্তও মনে হয়েছে। কিন্তু এদের সম্পর্কে যাত্রীদের প্রায় সবাই ভীষণ নির্বিকার।
ঢাকায় দেড় কোটিরও বেশি মানুষের বসবাস। কর্মজীবী মানুষসহ শিক্ষার্থীদের প্রায় প্রতিদিনই রাস্তায় বের হতে হয়। যাদের সামর্থ্য আছে, তারা ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করে, বাকিরা গণপরিবহন। কিন্তু গত আট বছরে সাধারণ যাত্রীদের দিক থেকে এ নিয়ে বড় কোনো প্রতিবাদের দেখা পাওয়া যায়নি। দু-একজন যাত্রী এ নিয়ে কথা বলেন না, এমন নয়। কিন্তু তাঁদের এই কথা বা প্রতিবাদ অন্যদের নির্লিপ্ততার সুযোগে ও ভীষণ কোলাহলপূর্ণ শহরের হট্টগোলে হারিয়ে যায়। এই দু-একজন ভীষণভাবে ব্যতিক্রম। অধিকাংশই এ বিষয়ে রীতিমতো চোখ বুঁজে থাকে। অথচ এমন গতির কারণে যে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, তা না বোঝার মতো নির্বোধ তো তারা নয়। তাহলে? এখানেই আসে মানসিক অসুস্থতা বা জাঢ্যতার বিষয়টি। নিজের বা অন্য কারও বিষয়ে একটা নির্বিকার চরিত্র না হলে এভাবে তো রপ্ত করা সম্ভব নয়। শুরুতে যে সাইকোপ্যাথের কথা বলা হয়েছিল, সে প্রসঙ্গটি এ কারণেই আসছে। কারণ এই শহরের মানুষেরা বেপরোয়া গতির ফলে দুর্ঘটনা যে ঘটতে পারে, তা বেশ বুঝতে পারে। তবে কারও মর্মান্তিক মৃত্যু তার মনে কোনো সহানুভূতি জাগাতে পারে না।
ব্যক্তি থেকে সমষ্টি
আপনি যে বাসে বসে আছেন সেখানে আপনার মতো হয়তো আরও ৫০ জন বসে আছে। ধরুন, ঢাকা শহরে ২০০ বাস আছে (প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি)। ২০০ বাসের প্রতিটিতে ৫০ জন করে মানুষ আছে। মোট হবে ১০ হাজার। এই দশ হাজার মানুষকে নিয়ে ২০০টি বাস বেপরোয়া গতিতে এগিয়ে চলছে। এই ১০ হাজার মানুষের কেউ কেউ ফেসবুকে মগ্ন, কেউ গান শুনছে, কেউ বন্ধুর সঙ্গে কথা বলছে, কেউ উদাসীন হয়ে বসে আছে। ২০০ জন বেপরোয়া বাস চালক তাদের কাজ নিষ্ঠার সঙ্গে করে যাচ্ছে। তারা বেপরোয়া গতিতে বাস চালিয়ে যাচ্ছে। আগেই বলেছি, এই বেপরোয়া গতির প্রতি কারওই তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। ১০ হাজার থেকে যদি ১০ কোটি কিংবা ১৬ কোটি মানুষের কথা বিবেচনা করি? তাহলে কী কোনো ভিন্ন চিত্র দেখতে পাব? মনে হয় না। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে বাঙালের মধ্যে তেমন বড় কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। তবে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের কথা এখানে একটু বলে রাখা দরকার। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে এটা মোটামুটি বড় একটি আন্দোলন, যা বছরের পর বছর চললেও এখনো তেমন কোনো অর্জন এনে দিতে পারেনি। উল্লেখ করতে হয় এই একই দাবিতে হওয়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কথাও। কিন্তু এ আন্দোলনেরও অপমৃত্যু হয়েছে। আর এদিকে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের মতে, ২০২০ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ হাজার ৪৩১ জন মানুষ মারা যায়। সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের হিসাবমতে, প্রতিদিন সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ৩০ জন প্রাণ হারান। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে বছরে ১২ হাজার মানুষ মারা যান। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, এ সংখ্যা ২০ হাজার। বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এআরআই) ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতি বছর ১২ হাজার মানুষ মারা যান। এই অসংখ্য অপমৃত্যু একটা জাতিকে চমকে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়? অবশ্যই যথেষ্ট। তবে এটা সাইকোপ্যাথদের চমকে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়।
একটি চলন্ত বাস। বাসটির সামনের সিটে আপনি বসে আছেন। ঢাকা শহরের ব্যস্ততম রাস্তা ধরে সেটি এগিয়ে চলছে। রাস্তার পাশে সংকীর্ণ ফুটপাত। ফুটপাত ধরে সারি সারি মানুষ হাঁটছে। ফুটপাতের অধিকাংশ জায়গা দখল করে আছে হকারেরা। ফলে অনেক মানুষ ফুটপাত ছেড়ে মূল রাস্তা ধরে হাঁটতে বাধ্য হচ্ছে। বহু স্থানে ফুটপাতে পা ফেলার মতো জায়গা অবশিষ্ট নেই। রাস্তায় গাড়ির সারি। ফুটপাতের মতো এখানকার অবস্থাও প্রায় একই। মৌচাকের বাসায় মৌমাছি যেমন জড়সড় হয়ে থাকে, গাড়িগুলোও ঠিক তেমনভাবেই চলছে রাস্তায়। একটু অসাবধান হলেই এক গাড়ির সঙ্গে অন্য গাড়ির সংঘর্ষ অবধারিত। কিন্তু এর মধ্যেই কিছু বাস বেপরোয়া গতিতে চলছে। এই বেপরোয়া গতি যেকোনো মুহূর্তে যে কাউকে খুন করতে পারে। সংখ্যাটা একাধিকও হতে পারে।
এমন ঘটনা তো প্রতি দিনই হচ্ছে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে। বিষয়টি কি অস্বাভাবিক নয়? অবশ্যই অস্বাভাবিক। তাহলে এই অস্বাভাবিকতা বছরের পর বছর সহ্য করা মানুষগুলো কী স্বাভাবিক? মনে হয় না। স্বাভাবিক মানুষের সমাজে দীর্ঘ সময় ধরে অস্বাভাবিকতা চলতে পারে না। কিন্তু তাই হচ্ছে। অস্বাভাবিকতাই এখন স্বাভাবিকতায় পরিণত হয়েছে। না হলে এমন একটি বিষয়ে গোটা সমাজ কী করে নির্লিপ্ত থাকতে পারে? কিন্তু পারছে। আর পারছে বলেই এই সমাজের স্বাভাবিক বলে পরিচিতদের মানসিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যায় অনায়াসে। এ প্রশ্নের আওতার বাইরে কেউ নয়। তাহলে পুরো জাতিই কি সাইকোপ্যাথ হয়ে গেল?
সাইকোপ্যাথ কারা?
সাইকোপ্যাথের অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য আছে। তার মধ্যে একটি হলো সহানুভূতির অভাব। অন্যের দুঃখ, কষ্ট, ভীতি বা উদ্বেগকে এরা অনুভব করতে পারে না। তারা মানুষের দুর্দশা সম্পর্কে উদাসীন, এমনকি সে তার বন্ধু বা পরিবারের সদস্য হলেও। বাংলাদেশের জনপরিসরের দিকে তাকালে এই বৈশিষ্ট্যগুলো এখন ভীষণভাবে দৃশ্যমান। এখানে আহতকে পাশ কাটিয়ে নির্বিঘ্নে মানুষ চলে যেতে পারে। এখানে কারও প্রতি সাধারণ সহানুভূতির প্রকাশই এখন খবরের উপাদান হয়ে উঠেছে।
ঢাকা শহরে বাসযোগ্যতা ও যানজটের চিত্র
ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইপিইউ) ২০১৯ সালে বৈশ্বিক বাসযোগ্যতা সূচক প্রকাশ করে। এতে ১৪০টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ছিল ১৩৮ তম। ঢাকার চেয়ে খারাপ অবস্থা কেবল যুদ্ধবিধ্বস্ত শহর সিরিয়ার দামেস্ক ও নাইজেরিয়ার রাজধানী লাগোসের। বসবাসের এই অযোগ্যতার অন্যতম বড় একটি কারণ ছিল যানজট। নামবিও নামের একটি বৈশ্বিক তথ্যভান্ডারের সমীক্ষায় ২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্বের সর্বাধিক যানজটের শহর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ২০১৭-১৮ সালে ঢাকার অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। আর ২০১৬ সালে ছিল তৃতীয়।
আছে অন্য সূচকও। জাতিসংঘের বসতিসংক্রান্ত উপাত্ত অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহর। জাতিসংঘের আবাসন-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ঢাকায় জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪৪ হাজার ৫০০ জন। বাংলাদেশের জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের () তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় বর্তমানে ১ কোটি ৬৪ লাখ মানুষ বাস করছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও নিপোর্টের সাম্প্রতিক এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ঢাকা মহানগর এলাকায় প্রতিদিন ১ হাজার ৪১৮ জন মানুষ বাড়ছে। বছরে যুক্ত হচ্ছে গড়ে ৫ লাখ ১৭ হাজার ৫০০ মানুষ। (প্রথম আলো, ১৩ মে ২০১৭)
যানজটের শহরে বেপরোয়া গতি
বুয়েটের এক গবেষণায় দেখে গেছে, ঢাকা শহরে পিক আওয়ারে গণপরিবহনের গতি ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটার। মানুষের পায়ে হেঁটে চলার গতিও ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটার। ১২ বছর আগে এই গতি ছিল ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার। যানজটের কারণেই গাড়ির গতি মানুষের হাঁটার গতির সমান হয়েছে। যানজট কতটা দুঃসহ অবস্থায় পৌঁছেছে, তা শুধু এই তথ্য থেকেই বোঝা যায়।
মুশকিল হলো এই সীমাহীন যানজটের মধ্যেও বাসগুলো বেপরোয়া গতিতে চলে। ঘণ্টায় গণপরিবহনের গতি কমলেও এটি থামছে না। রাজধানীতে চলাচলকারী বাসগুলোর গায়েই রয়েছে এই বেপরোয়া গতির চিহ্ন। এই বেপরোয়া গতি আরও বেড়ে যায়, যখন একই কোম্পানির দুটো গাড়ি কাছাকাছি আসে। তখন কার আগে কে যাত্রী তুলবে—তা নিয়ে ব্যাপক প্রতিযোগিতা শুরু হয়। কিন্তু এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলার সময়েও বাসে থাকা ‘যাত্রী’ নামের প্রাণীগুলো ধীরস্থির নিশ্চুপ থাকে।
বেপরোয়া গতির প্রতি সাধারণের মনোভাব
ঢাকায় থাকার গত ৮ বছরে নিয়মিতই গণপরিবহনে উঠতে হয়েছে ও হচ্ছে। তাই ঢাকার গণপরিবহন ও তাতে চড়া যাত্রীদের সম্পর্কে কিছুটা অভিজ্ঞতা হয়েছে। সবার সঙ্গে এ অভিজ্ঞতাটি মিলবে—এমন দাবি অবশ্য করা যায় না। কিন্তু এই প্রায় এক দশকের ঢাকা-বাসে বেশির ভাগ গণপরিবহন চালককেই মনে হয়েছে বেপরোয়া। এমনকি কিছু কিছু চালক ও সহকারীদের নেশাগ্রস্তও মনে হয়েছে। কিন্তু এদের সম্পর্কে যাত্রীদের প্রায় সবাই ভীষণ নির্বিকার।
ঢাকায় দেড় কোটিরও বেশি মানুষের বসবাস। কর্মজীবী মানুষসহ শিক্ষার্থীদের প্রায় প্রতিদিনই রাস্তায় বের হতে হয়। যাদের সামর্থ্য আছে, তারা ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করে, বাকিরা গণপরিবহন। কিন্তু গত আট বছরে সাধারণ যাত্রীদের দিক থেকে এ নিয়ে বড় কোনো প্রতিবাদের দেখা পাওয়া যায়নি। দু-একজন যাত্রী এ নিয়ে কথা বলেন না, এমন নয়। কিন্তু তাঁদের এই কথা বা প্রতিবাদ অন্যদের নির্লিপ্ততার সুযোগে ও ভীষণ কোলাহলপূর্ণ শহরের হট্টগোলে হারিয়ে যায়। এই দু-একজন ভীষণভাবে ব্যতিক্রম। অধিকাংশই এ বিষয়ে রীতিমতো চোখ বুঁজে থাকে। অথচ এমন গতির কারণে যে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, তা না বোঝার মতো নির্বোধ তো তারা নয়। তাহলে? এখানেই আসে মানসিক অসুস্থতা বা জাঢ্যতার বিষয়টি। নিজের বা অন্য কারও বিষয়ে একটা নির্বিকার চরিত্র না হলে এভাবে তো রপ্ত করা সম্ভব নয়। শুরুতে যে সাইকোপ্যাথের কথা বলা হয়েছিল, সে প্রসঙ্গটি এ কারণেই আসছে। কারণ এই শহরের মানুষেরা বেপরোয়া গতির ফলে দুর্ঘটনা যে ঘটতে পারে, তা বেশ বুঝতে পারে। তবে কারও মর্মান্তিক মৃত্যু তার মনে কোনো সহানুভূতি জাগাতে পারে না।
ব্যক্তি থেকে সমষ্টি
আপনি যে বাসে বসে আছেন সেখানে আপনার মতো হয়তো আরও ৫০ জন বসে আছে। ধরুন, ঢাকা শহরে ২০০ বাস আছে (প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি)। ২০০ বাসের প্রতিটিতে ৫০ জন করে মানুষ আছে। মোট হবে ১০ হাজার। এই দশ হাজার মানুষকে নিয়ে ২০০টি বাস বেপরোয়া গতিতে এগিয়ে চলছে। এই ১০ হাজার মানুষের কেউ কেউ ফেসবুকে মগ্ন, কেউ গান শুনছে, কেউ বন্ধুর সঙ্গে কথা বলছে, কেউ উদাসীন হয়ে বসে আছে। ২০০ জন বেপরোয়া বাস চালক তাদের কাজ নিষ্ঠার সঙ্গে করে যাচ্ছে। তারা বেপরোয়া গতিতে বাস চালিয়ে যাচ্ছে। আগেই বলেছি, এই বেপরোয়া গতির প্রতি কারওই তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। ১০ হাজার থেকে যদি ১০ কোটি কিংবা ১৬ কোটি মানুষের কথা বিবেচনা করি? তাহলে কী কোনো ভিন্ন চিত্র দেখতে পাব? মনে হয় না। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে বাঙালের মধ্যে তেমন বড় কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। তবে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের কথা এখানে একটু বলে রাখা দরকার। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে এটা মোটামুটি বড় একটি আন্দোলন, যা বছরের পর বছর চললেও এখনো তেমন কোনো অর্জন এনে দিতে পারেনি। উল্লেখ করতে হয় এই একই দাবিতে হওয়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কথাও। কিন্তু এ আন্দোলনেরও অপমৃত্যু হয়েছে। আর এদিকে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের মতে, ২০২০ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ হাজার ৪৩১ জন মানুষ মারা যায়। সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের হিসাবমতে, প্রতিদিন সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ৩০ জন প্রাণ হারান। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে বছরে ১২ হাজার মানুষ মারা যান। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, এ সংখ্যা ২০ হাজার। বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এআরআই) ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতি বছর ১২ হাজার মানুষ মারা যান। এই অসংখ্য অপমৃত্যু একটা জাতিকে চমকে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়? অবশ্যই যথেষ্ট। তবে এটা সাইকোপ্যাথদের চমকে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়।
ড. ইউনূস যখন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন পুরো জাতি তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিল। তবে তাঁকে পরিষ্কারভাবে এই পরিকল্পনা প্রকাশ করতে হবে যে, তিনি কীভাবে দেশ শাসন করবেন এবং ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।
৪ ঘণ্টা আগেসম্প্রতি দুই বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন ডলারনির্ভর বন্ড বিক্রি করেছে চীন। গত তিন বছরের মধ্যে এবারই প্রথম দেশটি এমন উদ্যোগ নিয়েছে। ঘটনাটি বিশ্লেষকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাঁরা মনে করছেন, এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি বার্তা দিয়েছে চীন।
১ দিন আগেএকটা সময় ইসরায়েলের ছোট ও সুসংহত সমাজকে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে প্রায় অপ্রতিরোধ্য বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এখন বিষয়টি কার্যত বদলে গেছে। বর্তমান সংঘাত, ইসরায়েলে উগ্র ডানপন্থার উত্থান এবং নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ২০২৩ সালের বিচার বিভাগ সংস্কারের মতো বিষয়গুলো দেশটির সমাজে বিদ্যমান সূক্ষ্ম বিভাজনগুলো
১ দিন আগেট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রূপ এবং যুদ্ধ ও বাণিজ্য সম্পর্কের পরিবর্তন নিয়ে বিশ্লেষণ। চীন, রাশিয়া ও ইউরোপের সাথে নতুন কৌশল এবং মার্কিন আধিপত্যের ভবিষ্যৎ।
৩ দিন আগে