কচি কাঁধে সংসারের জোয়াল, খোঁজ মিলছে না ১২ বছরের হাছনাইনের

চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১১ জুলাই ২০২১, ১৬: ৩৮
আপডেট : ১১ জুলাই ২০২১, ১৭: ৪৯

১২ বছরের শিশু হাছনাইন গত বুধবার তাঁর বাবাকে জানিয়েছিলেন কারখানা থেকে ছয় দিন পর বেতন পেলে ঈদে করতে বাড়ি আসবে। সবার সঙ্গে ঈদ করবে সে। ওই দিন রাতে বাবা ফজলুর রহমানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে শেষ এই কথাগুলো হয়েছে শিশু হাছনাইনের।

গত বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকায় হাশেম ফুডস লিমিটেডে এর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর থেকে তার মোবাইলটি বন্ধ। তিন দিন ধরে হাছনাইনের খোঁজ না পেয়ে বাবা-মা ধরে নিয়েছেন সে আর বেঁচে নেই। মা শাহানাজ বেগম ছেলের লাশ পাওয়ার আশায় আজ রোববার ঘটনাস্থলের উদ্দেশে বাড়ি ছেড়েছেন।

আজ রোববার সকালে হাছনাইনের চরফ্যাশন উপজেলার আবদুল্লাহপুরের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়িতে স্বজনদের আহাজারি। বাড়ি ভর্তি লোকজন। তার মৃত্যুর ঘটনায় তার বাড়ি ও এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। বাড়ির উঠানে বসে বিলাপ করছেন তার দুই বোন।

হাছনাইন (১২) ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার আবদুল্লাহপুর ইউনিয়নের ফজলুর রহমানের ছেলে। তিন ভাই বোনের মধ্যে হাছনাইন সবার ছোট। তার বড় দুই বোনের বিয়ে হয়েছে তিন বছর আগে। সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম বাবা টিবি রোগে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী। আর এ কারণে ছোট হয়েও হাছনাইন অসুস্থ বাবার চিকিৎসাসহ সংসারের খরচ জোগাতে চাকরি নিয়েছেন রূপগঞ্জের হাশেম ফুডস লিমিটেড করখানায়।

হাছনাইনের স্বজনরা জানিয়েছে, ওই প্রতিষ্ঠানে পূর্ব থেকে চাকরিরত চাচাতো ভাই রাকিবের মাধ্যমে দুই মাস আগে চাকরি নেন হাছনাইন। এ ঘটনার পর থেকে রাকিবকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁর মোবাইল নম্বরটিও বন্ধ রয়েছে। রাকিব (২০) একই এলাকার কবির হোসেন এর ছেলে।

রাকিবের ফুফু নিলুফা বেগম জানান, পাঁচ বছর আগে ফ্যাশনের আবদুল্লাহপুর ইউনিয়ন থেকে তাঁরা সপরিবারে ঢাকার গাজীপুর চলে যান। রিকশা চালক বাবা কবির হোসেনের সঙ্গে অভাবের সংসারের খরচ জোগাতে রাকিব পাঁচ বছর আগে কারখানাটিতে শ্রমিক পদে চাকরি নেন। ঘটনার দিন সকালে কারখানায় গেলেও অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে রাকিবকেও খুঁজে পাওয়া যায়নি।

শিশু হাছনাইনের বোন সাথী বেগম বলেন, ‘আমার ভাইয়ের মোবাইল বন্ধ। ভাই আর বাঁইচা নাই। আগুনে পুড়ে অনেক কষ্ট পাইয়া মারা গেছে।’ এ কথা বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন বোন সাথী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনায় নিখোঁজ হাছনাইন ও রাকিব ছাড়াও চরফ্যাশন উপজেলার আরও পাঁচজনের কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁরা হলেন, চরমাদ্রাজ ইউনিয়নের তাজউদ্দিনের ছেলে রাকিব (১৯), আছলামপুর ইউনিয়নের জনতা বাজার এলাকার গোলাম হোসেনের ছেলে মহিউদ্দিন (২৫), এওয়াজপুর ইউনিয়নের আবদুল মান্নানের ছেলে নোমান মিয়া (২২), দক্ষিণ আইচা চর মানিকা ইউনিয়নের মো. ফখরুল ইসলামের ছেলে শামিম (১৯), জিন্নাগড় ইউনিয়নের দাসকান্দি এলাকার আবু তাহেরের মেয়ের জামাই মো. শাকিল (২৩)।

চরফ্যাশন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনির হোসেন মিয়া জানান, এখন পর্যন্ত থানায় নিখোঁজ শ্রমিকদের কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। মর্গে নিহতদের পরিচয় শনাক্ত হলে নিখোঁজের সংখ্যা সঠিক ভাবে নির্ধারণ করা যাবে।

চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন জানান, এ পর্যন্ত তিনজনের নাম পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁদের বাড়ি চরফ্যাশন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে। তাঁরা ওই কারখানার শ্রমিক ছিলেন। এ ব্যাপারে ঢাকায় সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

শেখ হাসিনাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে এম সাখাওয়াতের বিস্ফোরক মন্তব্য, কী বলেছেন এই উপদেষ্টা

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, আহত ৩

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত