উপকূলীয় এলাকায় স্কুলছাত্রীদের বাল্যবিবাহের হিড়িক

মীর মো. মহিব্বুল্লাহ, পটুয়াখালী
প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৪: ২৬
আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৪: ৪২

করোনা শুরুর পর পটুয়াখালীসহ উপকূলীয় এলাকায় আশঙ্কাজনক হারে বাল্যবিবাহ বেড়েছে। করোনার ছুটিতে এত বেশি বাল্যবিবাহ হয়েছে যে বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ের ক্লাসে ছাত্রীসংখ্যা অনেক কমে গেছে। বিয়ে হওয়া শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফেরাতে শিক্ষকেরা কাজ করলেও সরকারিভাবে এখনো পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। 

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, পটুয়াখালীতে মোট ২৯৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ২৬১টি মাদ্রাসা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বালিকা বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের বাল্যবিবাহ বেশি হয়েছে। তবে কতসংখ্যক শিক্ষার্থীর বাল্যবিবাহ হয়েছে, সে সম্পর্কিত কোনো তথ্য এখন পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয়নি।

জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা যায়, শহরের চেয়ে শহরতলীর বা গ্রামের স্কুলের বাল্যবিবাহের ঘটনা আরও বেশি। কোনো কোনো বিদ্যালয়ে ৩০ থেকে ৪০ জন শিক্ষার্থী বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে। এদের অনেকে সপ্তম থেকে দশম শ্রেণিতে অধ্যয়ন করত। পারিবারিক অসচ্ছলতা ছাড়া প্রেমের সম্পর্কেও অনেকের বিয়ে হয়েছে। 

পটুয়াখালী পৌর শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত ডোনাভান মাধ্যমিক বিদ্যালয়। স্থানীয়ভাবে ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী, দশম ও নবম শ্রেণি মিলে গত দেড় বছরে মোট ২৫ জনের বিয়ে হয়েছে। গত ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল খুললেও এদের অধিকাংশই ক্লাসে ফেরেনি। 

এদিকে রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমন্তাজ এ ছাত্তার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছয়জন, দশম শ্রেণির পাঁচজন এবং নবম শ্রেণির পাঁচজনের বাল্যবিবাহ হয়েছে। একই উপজেলার ছোট বাইশদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আট ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে। 

এ ছাড়া কলাপাড়া উপজেলার বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় বেশির ভাগ বিদ্যালয়ের ২৫ থেকে ৩০ জন ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে। ধুলাশ্বার ইউনিয়নের চরচাপলি ইসলামিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং একই ইউনিয়নের ধুলাশ্বার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৪০ জনের বেশি শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়েছে। এভাবে জেলার অধিকাংশ বিদ্যালয়েও বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটেছে। 

নবম শ্রেণির এক ছাত্রীর বাবা বলেন, ‘স্কুল বন্ধ থাকায় মেয়ে অনেক দিন বাড়িতে। স্কুলও খুলতে ছিল না। মেয়ে নিয়ে কোনো বদনাম হওয়ার আগেই তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দিয়েছি।’ নবম শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থীর বাবা জসিম মোল্লা বলেন, ‘মেয়ে বড় হয়েছে। বাড়ির পাশে ভালো সম্বন্ধ পেয়েছি ,তাই বিয়ে দিয়েছি। আর কোনো কারণ নেই।’ 

তবে এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বলছেন, বিবাহিত শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে কাজ করে যাচ্ছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। এ লক্ষ্যে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের কাজও চলমান রয়েছে। 

রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমন্তাজ এ ছাত্তার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শাহিদা বেগম বলেন, ‘আমাদের স্কুলে ১৬ জনের বেশি ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গেছে। এদের অনেকেই ঝরে পড়েছে। তাদের স্কুলে ফেরাতে আমরা অনেক চেষ্টা করেছি।’ 

কলাপাড়ার চরচাপলি ইসলামি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গাজী আলী আহম্মেদ বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ের সপ্তম থেকে দশম শ্রেণি পড়ুয়া ৩৫ থেকে ৪০ জন ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে। আমার স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থী মানবিক বিভাগের ১ রোলধারীকে বিয়ে না দেওয়ার জন্য ওর বাবার কাছে অনেক অনুরোধ করেছি; তার পরও বিয়ে দিয়েছে।’ 

পটুয়াখালী শেরেবাংলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রহিমা সরোয়ার বলেন, ‘বিয়ে হওয়া অনেক ছাত্রী ক্লাস করে। দূরে থাকা অনেকেই অ্যাসাইনমেন্ট পাঠাচ্ছে।’ 

এদিকে জেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক শাহিদা বেগম বলেন, ‘করোনার বন্ধে বাল্যবিয়ে বেড়েছে। আমরা সব সময় মনিটরিং করছি। যখনই খবর পাচ্ছি বাল্যবিবাহ বন্ধ করছি। গত মাসে পাঁচটি বাল্যবিবাহ বন্ধ করেছি।’ 

এ বিষয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘কতসংখ্যক বিদ্যালয় শিক্ষার্থীর বাল্যবিবাহ হয়েছে, সে বিষয়ে আমাদের কাছে তথ্য নেই। সে বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

শেখ হাসিনাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে এম সাখাওয়াতের বিস্ফোরক মন্তব্য, কী বলেছেন এই উপদেষ্টা

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, আহত ৩

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত