মিনহাজ তুহিন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির। আড়াই বছর আগে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া এই কমিটি প্রায় প্রতি সপ্তাহেই নতুন নতুন বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে। গ্রুপিং, সংঘর্ষ, ছাত্রী হেনস্তা, সাংবাদিক হেনস্তা, যৌন হয়রানির মতো বিভিন্ন ঘটনার পর এবার আলোচনায় দুই নেতাকে দিয়ে সভাপতির পা টেপানোর ছবি।
দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীদের দাবি, হল-অনুষদ কমিটি গঠন করতে না পারা, সাড়ে তিন বছরে একটি বর্ধিত সভাও না করাসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়ানো এই কমিটি পদে পদে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তাই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত করে যেন শিগগিরই নতুন কমিটি গঠন করা হয়। তবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বলছে, সাংগঠনিক গতি বাড়াতে যা করণীয় তাই করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই শাখা ছাত্রলীগের দুই সদস্যের কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কমিটিতে পরিসংখ্যান বিভাগের ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষের রেজাউল হক রুবেলকে সভাপতি ও মার্কেটিং বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের ইকবাল হোসেন টিপুকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এঁদের মধ্যে সভাপতি কমিটি গঠনের ছয় বছর আগে ২০১৩ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক স্নাতক সম্পন্ন করেন কমিটি গঠনের তিন বছর আগে ২০১৬ সালে। এরপর তিনি স্নাতকোত্তর আর সম্পন্ন করেননি। তবে ছাত্রত্ব না থাকলেও দুজনই একটি করে কক্ষ দখল করে আবাসিক হলে থাকছেন।
অন্যদিকে এক বছরের জন্য গঠিত এই কমিটি সাড়ে তিন বছর ধরে রয়েছে বহাল তবিয়তে। কমিটি গঠনের পর দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন, বগি রাজনীতির সংস্কৃতি বন্ধ করে হলভিত্তিক রাজনীতি চালু করা, অনুষদ কমিটি গঠনসহ ভূরি ভূরি প্রতিশ্রুতি দেন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। তবে এসব প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে না পারলেও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে এই কমিটি পত্রিকার শিরোনাম হয়েছে নিয়মিত। সাড়ে তিন বছরে সংঘর্ষে জড়িয়েছে অন্তত ১৫০ বার।
নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, সাড়ে তিন বছরে একটিও বর্ধিত সভা করতে পারেনি এই কমিটি। হল ও অনুষদ কমিটির আশ্বাস দিয়ে পার করছে বছরের পর বছর। শিক্ষার্থীবান্ধব কোনো কর্মসূচি গ্রহণ না করে উল্টো শিক্ষার্থীদের কাছে সংগঠনকে খারাপভাবে তুলে ধরেছে এই কমিটি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে দুই ধারায় বিভক্ত। প্রতিটি ধারা আবার বিভিন্ন উপদলে বিভক্ত। এর মধ্যে একটি ধারার নেতা-কর্মীরা নিজেদের শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচয় দেন। অন্য ধারার নেতা-কর্মীরা সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী বলে পরিচয় দেন। এই দুটি ধারা আবার ১১টি উপদলে বিভক্ত। ক্যাম্পাস ছাত্র শিবিরের নিয়ন্ত্রণে থাকাকালীন শাটল ট্রেনের বিভিন্ন বগিকে কেন্দ্র করে গ্রুপগুলো গড়ে ওঠে।
সাড়ে তিন বছরে ১৫০ বার সংঘর্ষ: পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন, হল দখল, আধিপত্য বিস্তার, টেন্ডারের টাকা ভাগবাঁটোয়ারাসহ বিভিন্ন ঠুনকো অজুহাতে গত সাড়ে তিন বছরে অন্তত দেড় শবার সংঘর্ষে জড়িয়েছে শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপ। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন কয়েক শতাধিক নেতা-কর্মী। আবার বহিষ্কারও হয়েছেন অর্ধ শতাধিক নেতা-কর্মী। যদিও বহিষ্কারাদেশ কখনোই পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়ন করেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
হল কমিটির প্রতিশ্রুতি কাগজে-কলমেই: কমিটি গঠনের পরপরই শীর্ষ দুই নেতা ঘোষণা দিয়েছিলেন বগিভিত্তিক রাজনীতির সংস্কৃতি বিলুপ্ত করে শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতি হলভিত্তিক করবেন। যে জন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে হল কমিটি ঘোষণা করবেন। তবে হল কমিটি ঘোষণার দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি সাড়ে তিন বছরেও চোখে পড়েনি। নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, নিজেদের একক কর্তৃত্ব ধরে রাখতে হল কমিটি দিচ্ছেন না শীর্ষ দুই নেতা।
পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে বিতর্ক: দুই সদস্যের কমিটি গঠনের তিন বছরের পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করেন শীর্ষ দুই নেতা। তবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পরপরই পদবাণিজ্য, অছাত্র, বিবাহিতদের কমিটিতে রাখার অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন পদবঞ্চিতরা। পরবর্তী সময়ে তাঁরা কমিটি পুনর্বিন্যাসের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ডাক দেন। ফলে দুই দিন কার্যত অচল থাকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
বর্ধিত সভা হয়নি একটিও: ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বলেন, কমিটির মেয়াদ সাড়ে তিন বছর হলেও সব গ্রুপকে নিয়ে কোনো বর্ধিত সভা হয়নি। এমনকি পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদপ্রাপ্ত নেতাদের নিয়ে কোনো মিছিল, সভা বা কোনো অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়নি। বিভিন্ন জাতীয় ও সাংগঠনিক অনুষ্ঠান সব গ্রুপ দূরের কথা, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকও সব সময় এক হয়ে পালন করতে পারেননি।
শোকজ করেই দায় সারছে কেন্দ্র: ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দাবি, বারবার বিতর্কে জড়ানোর পেছনে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নিষ্ক্রিয়তা অনেকাংশেই দায়ী। বারবার সংঘর্ষ, বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ঘটলেও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বরং শোকজ করেই দায় সারছে তারা।
যা বলছেন বিভিন্ন গ্রুপের নেতারা:
শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও বাংলার মুখের নেতা আবু বকর তোহা আজকের পত্রিকাকে বলেন, এক বছরের কমিটির মেয়াদ চার বছর ছুঁই ছুঁই। পূর্ণাঙ্গ কমিটি বিশাল আকারে করলেও বেশির ভাগ যোগ্য কর্মীকে মূল্যায়ন করা হয়নি। যে কারণে দুই নেতার ওপর কর্মীদের আস্থা নেই। এত বছর দায়িত্ব পালন করেও তাঁরা সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কোনো মিটিং-মিছিলের আয়োজন করতে পারেননি। এ ছাড়া সভাপতিকে নিয়ে দফায় দফায় যেসব কথা উঠে আসছে, এগুলো তো সত্য। ওনার বয়সের সঙ্গে তৃণমূলের নেতাদের বয়সের অনেক পার্থক্য। এগুলো তৃণমূলের রাজনীতিতে প্রভাব রাখে। তাই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্রতি আমাদের দাবি থাকবে, সব বিষয় বিবেচনা করে যেন নতুন কমিটি দেওয়া হয়।
বর্তমান কমিটিকে পুরোপুরি ব্যর্থ আখ্যা দিয়ে শাখা ছাত্রলীগের আরেক সহসভাপতি ও ভার্সিটি এক্সপ্রেস গ্রুপের নেতা প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয় বলেন, কমিটি হওয়ার পর থেকে অধিকাংশ জাতীয় অনুষ্ঠান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নিজেরাই একসঙ্গে করতে পারেননি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পর পদপ্রাপ্ত সবাইকে নিয়ে গঠনতান্ত্রিক যে বর্ধিত সভা বা কর্মিসভা হয়, তা আজ পর্যন্ত হয়নি। সাংগঠনিকভাবে চিন্তা করলে এই কমিটি পুরোপুরি ব্যর্থ। ছাত্রবান্ধব কোনো কর্মসূচিও তারা গ্রহণ করতে পারেনি, যেগুলোর জন্য তারা প্রশংসা পাবে। বরং সাম্প্রতিক সময়ে দুই নেতাকে দিয়ে পা টেপানোসহ বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে ছাত্রলীগকে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরেছে। তাঁদের নেতৃত্বের অযোগ্যতা বারবার ফুটে উঠেছে। তাই যোগ্যদের হাতে নতুন কমিটি তুলে দেওয়ার জন্য কেন্দ্রের প্রতি আমাদের অনুরোধ।
এই কমিটি যত দ্রুত বিলুপ্ত করা হবে ছাত্রলীগের জন্য ততই মঙ্গল জানিয়ে শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক ও বিজয় গ্রুপের নেতা মোহাম্মদ ইলিয়াস বলেন, এই কমিটি পদে পদে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। বারবার সভাপতি বিরূপ প্রতিক্রিয়ার শিকার হয়েছেন। এমন কোনো কুকর্ম নেই, যা সভাপতি করেননি।
শীর্ষ দুই নেতা যা বলছেন:
শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, ‘আমরা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলে শিগগিরই হল ও অনুষদ কমিটি দিয়ে দেব। রমজানে ইফতার মাহফিলের মাধ্যমে একটি বর্ধিত সভা করার পরিকল্পনা আমাদের আছে।’
রেজাউল হক রুবেল আরও বলেন, আগের প্রক্টর নিজের স্বার্থে বিভিন্ন গ্রুপকে দিয়ে সংঘর্ষ বাঁধিয়ে দিতেন। যে কারণে প্রক্টরকে পদত্যাগও করতে হয়েছে। এখন ছাত্রলীগ অনেকটা শৃঙ্খলার মধ্যে আছে।’
তবে হল কমিটি না হওয়ার জন্য হলে প্রশাসন আসন বরাদ্দ না দেওয়া ও বগিভিত্তিক গ্রুপগুলোকে দায়ী করেন শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু। তিনি বলেন, ‘হল ও অনুষদ কমিটি গঠন করতে আমরা কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েছি। তবে প্রশাসনের আসন বরাদ্দ না দেওয়া ও বগিভিত্তিক গ্রুপগুলোর অপরাজনীতির কারণে তা সম্ভব হয়নি। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইববাল হোসেন টিপু বলেন, ‘কাজ করলে সমালোচনা হবেই। আমরা গঠনমূলক সমালোচনাকে স্বাগত জানাই।’
যা বলছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ:
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান আজকের পত্রিকাকে বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংগঠনিক গতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী সংসদ অতি দ্রুত যথাযথ সাংগঠনিক প্রস্তুতি গ্রহণ করবে। এটা নতুন কমিটি দেওয়ার আভাস কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সাংগঠনিক গতি আনার জন্য যা যা করণীয়, আমরা সব করব।’
বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির। আড়াই বছর আগে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া এই কমিটি প্রায় প্রতি সপ্তাহেই নতুন নতুন বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে। গ্রুপিং, সংঘর্ষ, ছাত্রী হেনস্তা, সাংবাদিক হেনস্তা, যৌন হয়রানির মতো বিভিন্ন ঘটনার পর এবার আলোচনায় দুই নেতাকে দিয়ে সভাপতির পা টেপানোর ছবি।
দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীদের দাবি, হল-অনুষদ কমিটি গঠন করতে না পারা, সাড়ে তিন বছরে একটি বর্ধিত সভাও না করাসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়ানো এই কমিটি পদে পদে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তাই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত করে যেন শিগগিরই নতুন কমিটি গঠন করা হয়। তবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বলছে, সাংগঠনিক গতি বাড়াতে যা করণীয় তাই করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই শাখা ছাত্রলীগের দুই সদস্যের কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কমিটিতে পরিসংখ্যান বিভাগের ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষের রেজাউল হক রুবেলকে সভাপতি ও মার্কেটিং বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের ইকবাল হোসেন টিপুকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এঁদের মধ্যে সভাপতি কমিটি গঠনের ছয় বছর আগে ২০১৩ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক স্নাতক সম্পন্ন করেন কমিটি গঠনের তিন বছর আগে ২০১৬ সালে। এরপর তিনি স্নাতকোত্তর আর সম্পন্ন করেননি। তবে ছাত্রত্ব না থাকলেও দুজনই একটি করে কক্ষ দখল করে আবাসিক হলে থাকছেন।
অন্যদিকে এক বছরের জন্য গঠিত এই কমিটি সাড়ে তিন বছর ধরে রয়েছে বহাল তবিয়তে। কমিটি গঠনের পর দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন, বগি রাজনীতির সংস্কৃতি বন্ধ করে হলভিত্তিক রাজনীতি চালু করা, অনুষদ কমিটি গঠনসহ ভূরি ভূরি প্রতিশ্রুতি দেন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। তবে এসব প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে না পারলেও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে এই কমিটি পত্রিকার শিরোনাম হয়েছে নিয়মিত। সাড়ে তিন বছরে সংঘর্ষে জড়িয়েছে অন্তত ১৫০ বার।
নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, সাড়ে তিন বছরে একটিও বর্ধিত সভা করতে পারেনি এই কমিটি। হল ও অনুষদ কমিটির আশ্বাস দিয়ে পার করছে বছরের পর বছর। শিক্ষার্থীবান্ধব কোনো কর্মসূচি গ্রহণ না করে উল্টো শিক্ষার্থীদের কাছে সংগঠনকে খারাপভাবে তুলে ধরেছে এই কমিটি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে দুই ধারায় বিভক্ত। প্রতিটি ধারা আবার বিভিন্ন উপদলে বিভক্ত। এর মধ্যে একটি ধারার নেতা-কর্মীরা নিজেদের শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচয় দেন। অন্য ধারার নেতা-কর্মীরা সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী বলে পরিচয় দেন। এই দুটি ধারা আবার ১১টি উপদলে বিভক্ত। ক্যাম্পাস ছাত্র শিবিরের নিয়ন্ত্রণে থাকাকালীন শাটল ট্রেনের বিভিন্ন বগিকে কেন্দ্র করে গ্রুপগুলো গড়ে ওঠে।
সাড়ে তিন বছরে ১৫০ বার সংঘর্ষ: পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন, হল দখল, আধিপত্য বিস্তার, টেন্ডারের টাকা ভাগবাঁটোয়ারাসহ বিভিন্ন ঠুনকো অজুহাতে গত সাড়ে তিন বছরে অন্তত দেড় শবার সংঘর্ষে জড়িয়েছে শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপ। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন কয়েক শতাধিক নেতা-কর্মী। আবার বহিষ্কারও হয়েছেন অর্ধ শতাধিক নেতা-কর্মী। যদিও বহিষ্কারাদেশ কখনোই পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়ন করেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
হল কমিটির প্রতিশ্রুতি কাগজে-কলমেই: কমিটি গঠনের পরপরই শীর্ষ দুই নেতা ঘোষণা দিয়েছিলেন বগিভিত্তিক রাজনীতির সংস্কৃতি বিলুপ্ত করে শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতি হলভিত্তিক করবেন। যে জন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে হল কমিটি ঘোষণা করবেন। তবে হল কমিটি ঘোষণার দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি সাড়ে তিন বছরেও চোখে পড়েনি। নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, নিজেদের একক কর্তৃত্ব ধরে রাখতে হল কমিটি দিচ্ছেন না শীর্ষ দুই নেতা।
পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে বিতর্ক: দুই সদস্যের কমিটি গঠনের তিন বছরের পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করেন শীর্ষ দুই নেতা। তবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পরপরই পদবাণিজ্য, অছাত্র, বিবাহিতদের কমিটিতে রাখার অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন পদবঞ্চিতরা। পরবর্তী সময়ে তাঁরা কমিটি পুনর্বিন্যাসের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ডাক দেন। ফলে দুই দিন কার্যত অচল থাকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
বর্ধিত সভা হয়নি একটিও: ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বলেন, কমিটির মেয়াদ সাড়ে তিন বছর হলেও সব গ্রুপকে নিয়ে কোনো বর্ধিত সভা হয়নি। এমনকি পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদপ্রাপ্ত নেতাদের নিয়ে কোনো মিছিল, সভা বা কোনো অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়নি। বিভিন্ন জাতীয় ও সাংগঠনিক অনুষ্ঠান সব গ্রুপ দূরের কথা, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকও সব সময় এক হয়ে পালন করতে পারেননি।
শোকজ করেই দায় সারছে কেন্দ্র: ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দাবি, বারবার বিতর্কে জড়ানোর পেছনে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নিষ্ক্রিয়তা অনেকাংশেই দায়ী। বারবার সংঘর্ষ, বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ঘটলেও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বরং শোকজ করেই দায় সারছে তারা।
যা বলছেন বিভিন্ন গ্রুপের নেতারা:
শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও বাংলার মুখের নেতা আবু বকর তোহা আজকের পত্রিকাকে বলেন, এক বছরের কমিটির মেয়াদ চার বছর ছুঁই ছুঁই। পূর্ণাঙ্গ কমিটি বিশাল আকারে করলেও বেশির ভাগ যোগ্য কর্মীকে মূল্যায়ন করা হয়নি। যে কারণে দুই নেতার ওপর কর্মীদের আস্থা নেই। এত বছর দায়িত্ব পালন করেও তাঁরা সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কোনো মিটিং-মিছিলের আয়োজন করতে পারেননি। এ ছাড়া সভাপতিকে নিয়ে দফায় দফায় যেসব কথা উঠে আসছে, এগুলো তো সত্য। ওনার বয়সের সঙ্গে তৃণমূলের নেতাদের বয়সের অনেক পার্থক্য। এগুলো তৃণমূলের রাজনীতিতে প্রভাব রাখে। তাই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্রতি আমাদের দাবি থাকবে, সব বিষয় বিবেচনা করে যেন নতুন কমিটি দেওয়া হয়।
বর্তমান কমিটিকে পুরোপুরি ব্যর্থ আখ্যা দিয়ে শাখা ছাত্রলীগের আরেক সহসভাপতি ও ভার্সিটি এক্সপ্রেস গ্রুপের নেতা প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয় বলেন, কমিটি হওয়ার পর থেকে অধিকাংশ জাতীয় অনুষ্ঠান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নিজেরাই একসঙ্গে করতে পারেননি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের পর পদপ্রাপ্ত সবাইকে নিয়ে গঠনতান্ত্রিক যে বর্ধিত সভা বা কর্মিসভা হয়, তা আজ পর্যন্ত হয়নি। সাংগঠনিকভাবে চিন্তা করলে এই কমিটি পুরোপুরি ব্যর্থ। ছাত্রবান্ধব কোনো কর্মসূচিও তারা গ্রহণ করতে পারেনি, যেগুলোর জন্য তারা প্রশংসা পাবে। বরং সাম্প্রতিক সময়ে দুই নেতাকে দিয়ে পা টেপানোসহ বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে ছাত্রলীগকে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরেছে। তাঁদের নেতৃত্বের অযোগ্যতা বারবার ফুটে উঠেছে। তাই যোগ্যদের হাতে নতুন কমিটি তুলে দেওয়ার জন্য কেন্দ্রের প্রতি আমাদের অনুরোধ।
এই কমিটি যত দ্রুত বিলুপ্ত করা হবে ছাত্রলীগের জন্য ততই মঙ্গল জানিয়ে শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক ও বিজয় গ্রুপের নেতা মোহাম্মদ ইলিয়াস বলেন, এই কমিটি পদে পদে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। বারবার সভাপতি বিরূপ প্রতিক্রিয়ার শিকার হয়েছেন। এমন কোনো কুকর্ম নেই, যা সভাপতি করেননি।
শীর্ষ দুই নেতা যা বলছেন:
শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, ‘আমরা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলে শিগগিরই হল ও অনুষদ কমিটি দিয়ে দেব। রমজানে ইফতার মাহফিলের মাধ্যমে একটি বর্ধিত সভা করার পরিকল্পনা আমাদের আছে।’
রেজাউল হক রুবেল আরও বলেন, আগের প্রক্টর নিজের স্বার্থে বিভিন্ন গ্রুপকে দিয়ে সংঘর্ষ বাঁধিয়ে দিতেন। যে কারণে প্রক্টরকে পদত্যাগও করতে হয়েছে। এখন ছাত্রলীগ অনেকটা শৃঙ্খলার মধ্যে আছে।’
তবে হল কমিটি না হওয়ার জন্য হলে প্রশাসন আসন বরাদ্দ না দেওয়া ও বগিভিত্তিক গ্রুপগুলোকে দায়ী করেন শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু। তিনি বলেন, ‘হল ও অনুষদ কমিটি গঠন করতে আমরা কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েছি। তবে প্রশাসনের আসন বরাদ্দ না দেওয়া ও বগিভিত্তিক গ্রুপগুলোর অপরাজনীতির কারণে তা সম্ভব হয়নি। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইববাল হোসেন টিপু বলেন, ‘কাজ করলে সমালোচনা হবেই। আমরা গঠনমূলক সমালোচনাকে স্বাগত জানাই।’
যা বলছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ:
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান আজকের পত্রিকাকে বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংগঠনিক গতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী সংসদ অতি দ্রুত যথাযথ সাংগঠনিক প্রস্তুতি গ্রহণ করবে। এটা নতুন কমিটি দেওয়ার আভাস কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সাংগঠনিক গতি আনার জন্য যা যা করণীয়, আমরা সব করব।’
রাজধানীর বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপসসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী এক ব্যক্তি। ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণের কথা মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
৪ ঘণ্টা আগেযশোর টেকনিক্যাল অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কলেজকে পারিবারিক প্রতিষ্ঠান বানিয়ে নজিরবিহীন অনিয়ম-দুর্নীতি করার অভিযোগ উঠেছে অধ্যক্ষ জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে। ১৪ বছর ধরে কর্মস্থলে না গিয়ে একই সঙ্গে দুটি প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হিসেবে বেতন ভাতা উত্তোলন করেছেন। স্ত্রীকে হিসাব সহকারী পদে নিয়োগ দিয়ে প্রায় ১৪ বছর ধরে
৫ ঘণ্টা আগে২ মার্চকে ‘জাতীয় পতাকা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ২ মার্চ পতাকা দিবস ঘোষণার দাবিতে ‘হৃদয়ে পতাকা ২ মার্চ’ আয়োজিত প্রতিবাদী সমাবেশে তিনি এই আহ্বা
৬ ঘণ্টা আগেদেশের বিশিষ্ট সম্পাদক এবং প্রবীণ সাংবাদিক নূরুল কবীর সম্প্রতি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছে অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রেস উইং।
৬ ঘণ্টা আগে