নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
৩৫ বছর আগে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীতে চাঞ্চল্যকর সগিরা মোর্শেদকে হত্যার দায়ে দুই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রায়ে তিনজনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। আজ বুধবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ (বিশেষ দায়রা জজ আদালত) বিচারক আলী হোসাইন এই রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডিত আসামিরা হলেন নিহত সগিরা মোর্শেদের ভাশুর ডা. হাসান আলী চৌধুরীর শ্যালক আনাস মাহমুদ ওরফে রেজওয়ান ও ভাড়াটে খুনি মারুফ রেজা। খালাস পেয়েছেন ড. হাসান, তাঁর স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা ওরফে শাহীন ও মিন্টু ওরফে মন্টু।
গত ২৫ জানুয়ারি আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে আদালত রায়ের তারিখ ধার্য করেন। ডা. হাসান, তাঁর স্ত্রী ও মিন্টু জামিনে থেকে আদালতে উপস্থিত ছিলেন। অন্য দুজনকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। রায় শেষে সাজা পরোয়ানাসহ দুজনকে কারাগারে পাঠানো হয়।
বিষয়টি আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেছেন ওই আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রফিক উদ্দিন।
বিচার চলাকালীন মামলায় মোট ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। এর আগে ২০২০ সালের ১৬ জানুয়ারি ঢাকার আদালতে সগিরার ভাশুরসহ চারজনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম। এরপর একই বছরের ৯ মার্চ ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ পিবিআইয়ের দেওয়া অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন।
২০২১ সালের ২ ডিসেম্বর সগিরা মোর্শেদের ভাশুরসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন একই আদালত। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৩১ বছর পর এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার কাজ শুরু হয়।
১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই সিদ্ধেশ্বরীর ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সামনে সগিরা মোর্শেদকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় রমনা থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন সগিরার স্বামী সালাম চৌধুরী।
প্রত্যক্ষদর্শী রিকশাচালক ঘটনায় জড়িত দুজনের কথা বললেও মন্টু নামের একজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ১৯৯১ সালের ১৭ জানুয়ারি মন্টুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনও হয়েছিল।
এরপর হাইকোর্টের আদেশে মামলাটি দীর্ঘদিন ঝুলে ছিল। পরে হাইকোর্ট ৬০ দিনের মধ্যে মামলার অধিকতর তদন্ত করতে পিবিআইকে নির্দেশ দেন।
২০১৯ সালের ১৭ আগস্ট মামলাটি তদন্ত শুরু করে পিবিআই। তদন্ত করতে গিয়ে দেখা যায়, সগিরা মোর্শেদের ভাশুর ডা. হাসান আলী পরিবারের অন্য সদস্যদের যোগসাজশে পারিবারিক কলহের জেরে ভাড়াটে খুনি দ্বারা খুনটি করান।
তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, সগিরা মোর্শেদের পরিবারের সঙ্গে আসামি সায়েদাতুল মাহমুদা ওরফে শাহীনের বিভেদ তৈরি হয়েছিল। এ ছাড়া শাশুড়ি সগিরাকে অপছন্দ করতেন এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে সগিরা-শাহীনের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। সম্বোধন করা নিয়েও ছিল পারিবারিক দ্বন্দ্ব।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, একদিন সগিরার গৃহকর্মীকে মারধর করেন আসামি ডা. হাসান আলী চৌধুরী। এ নিয়ে পারিবারিক বৈঠকে সগিরাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন ভাশুরের স্ত্রী শাহীন। আসামিরা নিজেদের বাসায় বসে সগিরাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ডা. হাসান আলী তাঁর চেম্বারে অন্য আসামি মারুফ রেজার সঙ্গে ২৫ হাজার টাকায় হত্যার চুক্তি করেন। পরে তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
এই মামলায় ডা. হাসান, তার স্ত্রী, হাসানের শ্যালক ও ভাড়াটিয়া মারুফ তদন্ত চলাকালে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করেন।
আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে আসামি হাসান আলী চৌধুরী বলেছেন, তিনি ইস্কাটনে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতেন। আসামি মারুফ রেজা তার রোগী ছিলেন। তিনি শহরে মাস্তানি করতেন। সগিরা মোর্শেদকে শায়েস্তার জন্য তিনি তাঁকে ঠিক করেন। তাঁর সঙ্গে ২৫ হাজার টাকায় চুক্তি হয়। কিন্তু তিনি সগিরা মোর্শেদকে চিনতেন না। এ জন্য তার শ্যালক আনাস মাহমুদকে দায়িত্ব দেন সগিরা মোর্শেদকে চিনিয়ে দিতে। ঘটনার দিন, ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই।
এর এক দিন আগে ২৪ জুলাই সগিরা মোর্শেদের মেজো বোন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঢাকায় আসেন। এ জন্য সগিরা মোর্শেদ ও আব্দুস সালাম তাদের রাজারবাগের বাসায় অনুষ্ঠানে সগিরা মোর্শেদের ভাই ডা. নেওয়াজ অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি। নেওয়াজকে খাবার পৌঁছে দেওয়ার জন্য সগিরা মোর্শেদ পরদিন ২৫ জুলাই বড় মেয়েকে ভিকারুননিসা নূন স্কুলে নামিয়ে দিয়ে মেজ মেয়ে ও ছোট মেয়েকে নিয়ে ধানমন্ডি বাবার বাসায় যান।
সেখান থেকে বিকেল ৪টার দিকে সগিরা মোর্শেদ রাজারবাগে স্বামীর বাসায় ফিরে আসেন। সগিরা মোর্শেদের বড় মেয়ে সিদ্ধেশ্বরী ভিকারুননিসা স্কুলের ডে শিফটে (দুপুর) দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত। তার স্কুল ছিল দুপুর সোয়া ১টা থেকে। তিনি বড় মেয়েকে রিকশায় আনা-নেওয়া করতেন। বিষয়টি হাসান আলী চৌধুরী, তার স্ত্রী শাহীন ও শ্যালক আনাস মাহমুদ জানতেন। সেই অনুযায়ী হাসান আলী চৌধুরী দুপুর দেড়টা থেকে ২টার মধ্যে আনাসকে মৌচাকে গিয়ে মারুফ রেজাকে যেন সগিরা মোর্শেদকে চিনিয়ে দেন সে বিষয়ে অবহিত করেন।
সান আলী চৌধুরীর কাছ থেকে বিস্তারিত টেলিফোনে জেনে মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে বের হয়ে প্রথমে বাসে, পরে টেম্পোতে করে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মৌচাকে পৌঁছান আনাস। সেখানে পৌঁছানোর প্রায় ১৫-২০ মিনিট পর মারুফ রেজা মোটরসাইকেলে পৌঁছান।
মোটরসাইকেলে করে তাঁরা দুজনে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের দিকে যান। তারা ভিকারুননিসা নূন স্কুলের গেটের একটু দূরে মোটরসাইকেলে বসে সগিরা মোর্শেদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।
এরপর বিকেল পৌনে ৫টার দিকে বড় মেয়েকে স্কুল থেকে আনার জন্য বাসা থেকে বের হন সগিরা মোর্শেদ। চার টাকা ভাড়ায় ছালাম মোল্লা নামে এক চালকের রিকশা নিয়ে স্কুলের দিকে রওনা দেন। মালিবাগ মোড় পেট্রল পাম্পের সামনে দিয়ে মৌচাকের গলির ভেতরে দিয়ে রিকশাটি সিদ্ধেশ্বরীর মাঝামাঝি অতিক্রমকালে ওত পেতে থাকা আনাস মাহমুদ আঙুল দিয়ে সগিরা মোর্শেদকে চিনিয়ে দেন। মারুফ রেজা তাৎক্ষণিকভাবে মোটরসাইকেলে কিছুক্ষণ রিকশা ফলো করেন। পরে রিকশার সামনে গিয়ে মোটরসাইকেল দাঁড় করান। এ সময় তারা মোটরসাইকেল থেকে নেমে পড়েন। মারুফ রেজা সগিরা মোর্শেদের হাতের ব্যাগ ছিনিয়ে নেন। সঙ্গে থাকা স্বর্ণালংকার টানা-হেঁচড়া করতে থাকেন।
এ সময় সগিরা মোর্শেদ সামান্য চিৎকার-চেঁচামেচি করেন এবং আনাস মাহমুদকে চিনে ফেলেন। বলেন, ‘তুমি তো রেজওয়ান, তোমাকে আমি চিনি। তুমি এখানে কেন?’ এই কথা বলার পরপরই মারুফ রেজা রিভলবার বের করে এক রাউন্ড গুলি করেন। প্রথম গুলিটি সগিরা মোর্শেদের ডান হাতের কনুইয়ের নিচে লাগে। এরপর মারুফ আরেক রাউন্ড গুলি করেন। দ্বিতীয় গুলি সগিরা মোর্শেদের বুক ভেদ করে পিঠ দিয়ে বের হয়ে যায়। বুকে গুলি লাগার সঙ্গে সঙ্গে রিকশা থেকে পড়ে যান সগিরা মোর্শেদ।
আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে আনাস মাহমুদ বলেন, বুকে গুলি লাগার সঙ্গে সঙ্গে রিকশার বাম দিকে হেলে পড়েন সগিরা মোর্শেদ। পুরো রিকশা রক্তাক্ত হয়ে যায়। সগিরা মোর্শেদকে দ্বিতীয় গুলি করার পর আনাস মাহমুদ মারুফ রেজাকে বলেন, চলো পালাই। এ সময় ভীতি ছড়ানোর জন্য মারুফ রেজা ফাঁকা গুলি ছোড়েন। এরপর হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের সামনে দিয়ে পালিয়ে যান তাঁরা। এ সময় সগিরা মোর্শেদকে বহনকারী রিকশাচালক ছালাম মোল্লা ইট হাতে হাইজ্যাকার, হাইজ্যাকার বলে ধাওয়া করতে থাকেন। শান্তিনগরের কাছে হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের সামনে আনাস মাহমুদকে মারুফ রেজা মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে দেন। রিকশাচালক ফিরে এসে দেখেন সগিরা মোর্শেদ নেই। রক্তাক্ত রিকশা পড়ে আছে। পরে তিনি বিষয়টি রমনা থানায় জানান।
মন্টুকে যেভাবে জড়ানো হয়েছিল:
এই মামলাটির তদন্ত শেষে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গত ১৯৯০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ছিনতাইকারী মিন্টু ওরফে মন্টুর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
সগিরা মোর্শেদকে খুনের ছক আসামিরা এমনভাবে সাজিয়েছিলেন যে, কাজটা ছিনতাইকারীরা করেছে। পেছনে থেকে তারা তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তাকে প্রভাবিত করে মিন্টু ওরফে মন্টুর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করান।
৩৫ বছর আগে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীতে চাঞ্চল্যকর সগিরা মোর্শেদকে হত্যার দায়ে দুই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রায়ে তিনজনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। আজ বুধবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ (বিশেষ দায়রা জজ আদালত) বিচারক আলী হোসাইন এই রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডিত আসামিরা হলেন নিহত সগিরা মোর্শেদের ভাশুর ডা. হাসান আলী চৌধুরীর শ্যালক আনাস মাহমুদ ওরফে রেজওয়ান ও ভাড়াটে খুনি মারুফ রেজা। খালাস পেয়েছেন ড. হাসান, তাঁর স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা ওরফে শাহীন ও মিন্টু ওরফে মন্টু।
গত ২৫ জানুয়ারি আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে আদালত রায়ের তারিখ ধার্য করেন। ডা. হাসান, তাঁর স্ত্রী ও মিন্টু জামিনে থেকে আদালতে উপস্থিত ছিলেন। অন্য দুজনকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। রায় শেষে সাজা পরোয়ানাসহ দুজনকে কারাগারে পাঠানো হয়।
বিষয়টি আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেছেন ওই আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রফিক উদ্দিন।
বিচার চলাকালীন মামলায় মোট ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। এর আগে ২০২০ সালের ১৬ জানুয়ারি ঢাকার আদালতে সগিরার ভাশুরসহ চারজনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম। এরপর একই বছরের ৯ মার্চ ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ পিবিআইয়ের দেওয়া অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন।
২০২১ সালের ২ ডিসেম্বর সগিরা মোর্শেদের ভাশুরসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন একই আদালত। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৩১ বছর পর এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার কাজ শুরু হয়।
১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই সিদ্ধেশ্বরীর ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সামনে সগিরা মোর্শেদকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় রমনা থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন সগিরার স্বামী সালাম চৌধুরী।
প্রত্যক্ষদর্শী রিকশাচালক ঘটনায় জড়িত দুজনের কথা বললেও মন্টু নামের একজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ১৯৯১ সালের ১৭ জানুয়ারি মন্টুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনও হয়েছিল।
এরপর হাইকোর্টের আদেশে মামলাটি দীর্ঘদিন ঝুলে ছিল। পরে হাইকোর্ট ৬০ দিনের মধ্যে মামলার অধিকতর তদন্ত করতে পিবিআইকে নির্দেশ দেন।
২০১৯ সালের ১৭ আগস্ট মামলাটি তদন্ত শুরু করে পিবিআই। তদন্ত করতে গিয়ে দেখা যায়, সগিরা মোর্শেদের ভাশুর ডা. হাসান আলী পরিবারের অন্য সদস্যদের যোগসাজশে পারিবারিক কলহের জেরে ভাড়াটে খুনি দ্বারা খুনটি করান।
তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, সগিরা মোর্শেদের পরিবারের সঙ্গে আসামি সায়েদাতুল মাহমুদা ওরফে শাহীনের বিভেদ তৈরি হয়েছিল। এ ছাড়া শাশুড়ি সগিরাকে অপছন্দ করতেন এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে সগিরা-শাহীনের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। সম্বোধন করা নিয়েও ছিল পারিবারিক দ্বন্দ্ব।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, একদিন সগিরার গৃহকর্মীকে মারধর করেন আসামি ডা. হাসান আলী চৌধুরী। এ নিয়ে পারিবারিক বৈঠকে সগিরাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন ভাশুরের স্ত্রী শাহীন। আসামিরা নিজেদের বাসায় বসে সগিরাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ডা. হাসান আলী তাঁর চেম্বারে অন্য আসামি মারুফ রেজার সঙ্গে ২৫ হাজার টাকায় হত্যার চুক্তি করেন। পরে তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
এই মামলায় ডা. হাসান, তার স্ত্রী, হাসানের শ্যালক ও ভাড়াটিয়া মারুফ তদন্ত চলাকালে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করেন।
আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে আসামি হাসান আলী চৌধুরী বলেছেন, তিনি ইস্কাটনে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতেন। আসামি মারুফ রেজা তার রোগী ছিলেন। তিনি শহরে মাস্তানি করতেন। সগিরা মোর্শেদকে শায়েস্তার জন্য তিনি তাঁকে ঠিক করেন। তাঁর সঙ্গে ২৫ হাজার টাকায় চুক্তি হয়। কিন্তু তিনি সগিরা মোর্শেদকে চিনতেন না। এ জন্য তার শ্যালক আনাস মাহমুদকে দায়িত্ব দেন সগিরা মোর্শেদকে চিনিয়ে দিতে। ঘটনার দিন, ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই।
এর এক দিন আগে ২৪ জুলাই সগিরা মোর্শেদের মেজো বোন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঢাকায় আসেন। এ জন্য সগিরা মোর্শেদ ও আব্দুস সালাম তাদের রাজারবাগের বাসায় অনুষ্ঠানে সগিরা মোর্শেদের ভাই ডা. নেওয়াজ অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি। নেওয়াজকে খাবার পৌঁছে দেওয়ার জন্য সগিরা মোর্শেদ পরদিন ২৫ জুলাই বড় মেয়েকে ভিকারুননিসা নূন স্কুলে নামিয়ে দিয়ে মেজ মেয়ে ও ছোট মেয়েকে নিয়ে ধানমন্ডি বাবার বাসায় যান।
সেখান থেকে বিকেল ৪টার দিকে সগিরা মোর্শেদ রাজারবাগে স্বামীর বাসায় ফিরে আসেন। সগিরা মোর্শেদের বড় মেয়ে সিদ্ধেশ্বরী ভিকারুননিসা স্কুলের ডে শিফটে (দুপুর) দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত। তার স্কুল ছিল দুপুর সোয়া ১টা থেকে। তিনি বড় মেয়েকে রিকশায় আনা-নেওয়া করতেন। বিষয়টি হাসান আলী চৌধুরী, তার স্ত্রী শাহীন ও শ্যালক আনাস মাহমুদ জানতেন। সেই অনুযায়ী হাসান আলী চৌধুরী দুপুর দেড়টা থেকে ২টার মধ্যে আনাসকে মৌচাকে গিয়ে মারুফ রেজাকে যেন সগিরা মোর্শেদকে চিনিয়ে দেন সে বিষয়ে অবহিত করেন।
সান আলী চৌধুরীর কাছ থেকে বিস্তারিত টেলিফোনে জেনে মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে বের হয়ে প্রথমে বাসে, পরে টেম্পোতে করে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মৌচাকে পৌঁছান আনাস। সেখানে পৌঁছানোর প্রায় ১৫-২০ মিনিট পর মারুফ রেজা মোটরসাইকেলে পৌঁছান।
মোটরসাইকেলে করে তাঁরা দুজনে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের দিকে যান। তারা ভিকারুননিসা নূন স্কুলের গেটের একটু দূরে মোটরসাইকেলে বসে সগিরা মোর্শেদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।
এরপর বিকেল পৌনে ৫টার দিকে বড় মেয়েকে স্কুল থেকে আনার জন্য বাসা থেকে বের হন সগিরা মোর্শেদ। চার টাকা ভাড়ায় ছালাম মোল্লা নামে এক চালকের রিকশা নিয়ে স্কুলের দিকে রওনা দেন। মালিবাগ মোড় পেট্রল পাম্পের সামনে দিয়ে মৌচাকের গলির ভেতরে দিয়ে রিকশাটি সিদ্ধেশ্বরীর মাঝামাঝি অতিক্রমকালে ওত পেতে থাকা আনাস মাহমুদ আঙুল দিয়ে সগিরা মোর্শেদকে চিনিয়ে দেন। মারুফ রেজা তাৎক্ষণিকভাবে মোটরসাইকেলে কিছুক্ষণ রিকশা ফলো করেন। পরে রিকশার সামনে গিয়ে মোটরসাইকেল দাঁড় করান। এ সময় তারা মোটরসাইকেল থেকে নেমে পড়েন। মারুফ রেজা সগিরা মোর্শেদের হাতের ব্যাগ ছিনিয়ে নেন। সঙ্গে থাকা স্বর্ণালংকার টানা-হেঁচড়া করতে থাকেন।
এ সময় সগিরা মোর্শেদ সামান্য চিৎকার-চেঁচামেচি করেন এবং আনাস মাহমুদকে চিনে ফেলেন। বলেন, ‘তুমি তো রেজওয়ান, তোমাকে আমি চিনি। তুমি এখানে কেন?’ এই কথা বলার পরপরই মারুফ রেজা রিভলবার বের করে এক রাউন্ড গুলি করেন। প্রথম গুলিটি সগিরা মোর্শেদের ডান হাতের কনুইয়ের নিচে লাগে। এরপর মারুফ আরেক রাউন্ড গুলি করেন। দ্বিতীয় গুলি সগিরা মোর্শেদের বুক ভেদ করে পিঠ দিয়ে বের হয়ে যায়। বুকে গুলি লাগার সঙ্গে সঙ্গে রিকশা থেকে পড়ে যান সগিরা মোর্শেদ।
আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে আনাস মাহমুদ বলেন, বুকে গুলি লাগার সঙ্গে সঙ্গে রিকশার বাম দিকে হেলে পড়েন সগিরা মোর্শেদ। পুরো রিকশা রক্তাক্ত হয়ে যায়। সগিরা মোর্শেদকে দ্বিতীয় গুলি করার পর আনাস মাহমুদ মারুফ রেজাকে বলেন, চলো পালাই। এ সময় ভীতি ছড়ানোর জন্য মারুফ রেজা ফাঁকা গুলি ছোড়েন। এরপর হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের সামনে দিয়ে পালিয়ে যান তাঁরা। এ সময় সগিরা মোর্শেদকে বহনকারী রিকশাচালক ছালাম মোল্লা ইট হাতে হাইজ্যাকার, হাইজ্যাকার বলে ধাওয়া করতে থাকেন। শান্তিনগরের কাছে হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের সামনে আনাস মাহমুদকে মারুফ রেজা মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে দেন। রিকশাচালক ফিরে এসে দেখেন সগিরা মোর্শেদ নেই। রক্তাক্ত রিকশা পড়ে আছে। পরে তিনি বিষয়টি রমনা থানায় জানান।
মন্টুকে যেভাবে জড়ানো হয়েছিল:
এই মামলাটির তদন্ত শেষে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গত ১৯৯০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ছিনতাইকারী মিন্টু ওরফে মন্টুর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
সগিরা মোর্শেদকে খুনের ছক আসামিরা এমনভাবে সাজিয়েছিলেন যে, কাজটা ছিনতাইকারীরা করেছে। পেছনে থেকে তারা তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তাকে প্রভাবিত করে মিন্টু ওরফে মন্টুর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করান।
নিজেদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এসব পরিবারের নারীরা প্রশিক্ষণ নিয়ে বসতবাড়ির আশপাশে শাকসবজি চাষ করেন। তা ছাড়া ভেড়া, হাঁস-মুরগি পালন করে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন তাঁরা। এসব নারীর উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড দেখে অন্যরাও উৎসাহী হচ্ছেন। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা ফ্রেন্ডশিপ এই এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ক
৯ মিনিট আগেছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে যে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি, এর মূল কারিগরই ছিলেন ছাত্র ও শিক্ষকেরা। বিএনপি সরকার গঠন করলে শিক্ষকদের ন্যায়সংগত সকল দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়া হবে...
১৯ মিনিট আগেজগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সহকারী প্রক্টর ও ভাস্কর্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাহিদুল হককে গুলি করে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব দপ্তরের কর্মকর্তা সালাউদ্দিন মোল্লার বিরুদ্ধে...
২ ঘণ্টা আগেগাজীপুরের শ্রীপুরে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) পিকনিকের দোতলা বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে তিন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের উদয়খালি গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আরও তিন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
২ ঘণ্টা আগে