নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী ও ‘রিয়াজ বাহিনী’-এর প্রধান রিয়াজুল ইসলাম ওরফে ‘শুটার’ রিয়াজ ও তাঁর চার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন, রিয়াজুল ইসলাম ওরফে শুটার রিয়াজ (২২) এবং তাঁর সহযোগী মো. জাহিদুল ইসলাম ওরফে কালা ভাগিনা (২৩), মারুফ হোসেন মুন্না (২৩), মো. সেলিম (২৩) ও মো. মাহবুব মিয়া (২৩)। এ সময় তাদের কাছ থেকে তিনটি বিদেশি পিস্তল, তিনটি ম্যাগাজিন, ১২ রাউন্ড গুলি, পাঁচটি ধারালো দেশীয় অস্ত্র, একটি মোটরসাইকেল ও ৬০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। 

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব জানায়, শুটার রিয়াজ হত্যাসহ ১৫টি মামলার আসামি। এ ছাড়া জমি দখল, চাঁদাবাজি, মার্কেট ও বাসস্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতি, অপহরণ, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধের জড়িত। 

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, ২০১৬ সালে বড় ভাই মোহাম্মদ আলীর হাত ধরে অপরাধ জগতে পা রাখেন রিয়াজুল ইসলাম ওরফে শুটার রিয়াজ। এর পর রূপগঞ্জ ও সোনারগাঁও এলাকায় চাঁদাবাজি, ভূমি দখল ও ভাড়ায় মারামারি করতে গিয়ে অপরাধ জগতের লোকজনের সঙ্গে তাঁর সখ্য গড়ে ওঠে। অপরাধ জগতে রিয়াজকে প্রতিষ্ঠিত করতে স্থানীয় এক ব্যক্তি সহযোগিতা করেন। একপর্যায়ে সেই ব্যক্তির সঙ্গে মনোমালিন্য হলে তিনি নিজেই একটি সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলেন এবং তাঁর সহযোগীদের অবৈধ অস্ত্র সরবরাহ শুরু করে। রিয়াজ তাঁর সহযোগীদের নিয়ে সোনারগাঁও এলাকায় সশস্ত্র মহড়া দিতেন এবং অস্ত্র ঠেকিয়ে বালু ও মাটি ভর্তি ট্রাক থেকে চাঁদা আদায় করতেন। নারায়ণগঞ্জ এলাকায় অবৈধভাবে জমি দখলের জন্য তিনি ও তাঁর দল টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করত। এ ছাড়া উঠতি বয়সী ছেলেদের অস্ত্র সরবরাহ করে দলে ভেড়ানোর চেষ্টাও করত। গ্রেপ্তার রিয়াজের বিরুদ্ধে হত্যা, মারামারি, বিস্ফোরক ও অস্ত্র আইনে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন থানায় ১৫টি মামলা ও বেশ কয়েকটি জিডি রয়েছে। এর আগে বিভিন্ন মেয়াদে তিনি কারাভোগও করেছেন। 

গ্রেপ্তারদের বরাত দিয়ে খন্দকার মঈন জানান, এই বাহিনীর সদস্যরা নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ, সোনারগাঁও ও এর আশপাশের এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করত। এই সন্ত্রাসী দলের সদস্য সংখ্যা ১০ থেকে ১৫। কেউ চাঁদা দিতে না চাইলে ত্রাস সৃষ্টির জন্য হামলা, অস্ত্র দেখিয়ে ভয়ভীতি দেখাত। রিয়াজ বাহিনীর বিরুদ্ধে স্থানীয় কেউ কথা বলার সাহস পায় না। গ্রেপ্তার মো. জাহিদুল ইসলাম ওরফে কালা ভাগিনা, রিয়াজ বাহিনীর প্রধান সহযোগী। রূপগঞ্জের একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করা জাহিদুল আগে সবজির ব্যবসা করতেন। ২০১৯ সালে রিয়াজের সঙ্গে পরিচয় হলে রিয়াজ তাঁকে নিজ দলে ভেড়ান। রিয়াজ বাহিনীর অবৈধ অস্ত্র তিনি বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে জমা রাখতেন। জাহিদুলের বিরুদ্ধে হত্যা, মারামারি ও বিস্ফোরক আইনে রূপগঞ্জ থানায় ছয়টি মামলা রয়েছে। 

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান র‍্যাবের এই কর্মকর্তা।