ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় পপি বেগম (২৫) নামে আরও এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৫ হয়েছে। এ ঘটনায় ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় বাসচালককে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন নিহতের এক স্বজন। 

আজ বুধবার বিকেলে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি থানার ওসি মো. হাসানুজ্জামান হাসান। 

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে জেলা সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের তেঁতুলতলা দিগনগর এলাকার ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ইউনিক পরিবহন নামে এক যাত্রীবাহী বাসের (ঢাকা মেট্রো-ব-১১-১৭৫৯) সঙ্গে একটি পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে এক পরিবারের চারজনসহ ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ঘটনাস্থলে ১১ জন এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪ জনের মৃত্যু হয়। 

এ ঘটনায় বোয়ালমারী উপজেলার রুপাপাত ইউনিয়নের কুমড়াইল গ্রামের সাদেক শেখের পুত্র ইমামুল শেখ বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেছেন। তিনি নিহত ইকবাল শেখের ছোট ভাই। 

• ফরিদপুরে বাস-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ১৪

মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, ‘গতকাল সকাল ৭টা ৪০ মিনিটের দিকে নিহতরা ফরিদপুরে যাওয়ার জন্য একটি পিকঅ্যাপ ভ্যানে রওনা দেন। পথে কোতোয়ালি থানা এলাকার দিগনগর এলাকায় ফরিদপুর-মাগুরা মহাসড়কে ইউনিক পরিবহন বাসের অজ্ঞাতনামা চালক দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে বাস চালিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পিকঅ্যাপ ভ্যানটি চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে ১১ জন এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমার ভাই ইকবাল শেখসহ তিনজন মারা যায়। আমি বাসচালকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই।’ 

এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ওসি হাসানুজ্জামান হাসান বলেন, রাতেই নিহতের এক ভাই এজাহার দিয়েছেন এবং মামলা রুজু হয়েছে। সেখানে বাসটির অজ্ঞাতনামা চালককে আসামি করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

এদিকে এ ঘটনায় গতকাল দিবাগত রাত ১টার দিকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পপি বেগম (২৫) নামে আরও একজন মারা গেছে বলে নিহতের পরিবার জানিয়েছেন। তিনি নিহত ইকবাল শেখের স্ত্রী। আজ বুধবার দুপুরে আলফাডাঙ্গা উপজেলার হিদাডাঙ্গা গ্রামের বাবাবাড়িতে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়। 

এ ঘটনায় তাঁদের দেড় বছর বয়সী একমাত্র পুত্র ইয়াছিন শেখ জীবিত আছে। ওই শিশু তার নানা সৈয়দ নান্নুর বাড়িতে রয়েছে বলে জানা গেছে। 

আজ দুপুরে হিদাডাঙ্গা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। একমাত্র শিশু ইয়াছিনের কান্না কেউ থামাতে পারছে না। ওই শিশুর কান্নায় কাঁদছেন সকলে। অনেকে কোলে তুলে নিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু কিছুতেই থামছে না তার কান্না। 

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সৈয়দ নান্নু বলেন, ‘অবুঝ মন কিছু মানছে না। শুধু আম্মু আম্মু বলে চিৎকার করছে। ওর বাবা-মা দুজনকেই আল্লাহ নিয়ে গেল। ওরে নিয়ে এখন আমি করব। কীভাবে ওরে বুঝাব।’
 
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনাকবলিত ইউনিক পরিবহনের বাসটির (ঢাকা মেট্রো-ব ১১-১৭৫৯) ফিটনেস সনদ ও কর পরিশোধের সনদ (ট্যাক্স টোকেন) নেই। 

ফিটনেস সনদ ছাড়াই তিন বছরের বেশি সময় ধরে বাসটি চলছিল। এটির ফিটনেস সনদ ২০২০ সালের পর আর হালনাগাদ করা হয়নি। বাসটি সর্বশেষ ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ট্যাক্স টোকেন হালনাগাদ করে, যার মেয়াদ শেষ হয় ২০২০ সালের নভেম্বরে। এমনকি এই মহাসড়কে বাসটির ছিলনা রুট পারমিটও। 

এটি চলার অনুমোদন ছিল চট্টগ্রাম-বগুড়া পথে। যদিও সেটি চট্টগ্রাম-মাগুরা পথে চলাচল করছিল।