এলএসডিসহ ধরা পড়েন শিক্ষামন্ত্রীর এপিএসের শ্যালক ও শিল্পী শাফিনের ছেলে, একদিন পর মুক্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ১৮ মে ২০২৩, ২২: ৫৭
আপডেট : ১৮ মে ২০২৩, ২৩: ০৬

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির একান্ত ব্যক্তিগত সহকারী (এপিএস) মফিজুর রহমানের বাসায় অভিযান চালিয়ে ভয়ংকর এলএসডি মাদকসহ তাঁর শ্যালক ইব্রাহিম কিবরিয়াকে গ্রেপ্তার করেছিল মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। এর আগে গুলশান থেকে জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা শাফিন আহমেদের ছেলে আযরাফ আহমেদ ওজিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে এলএসডি উদ্ধার করা হলেও প্রভাবশালীদের তদবিরের কারণে গাজা পাওয়া গেছে উল্লেখ করে ভ্রাম্যমাণ আদালতে একদিনের সাজা দিয়ে ছেড়ে দিয়েছে ডিএনসি। অপর এক তরুণের নামে এলএসডির মামলা করা হয়েছে। সেখানে ইব্রাহিম ও ওজি কাউকে আসামি করা হয়নি। 

গত ৯ মে নেদারল্যান্ডসের রাজধানীর আমস্টারডাম থেকে ডাকযোগে একটি সন্দেহজনক পার্সেল ঢাকায় আসে। প্রাপকের নামের ঠিকানায় ছিল ফারদিন খান। ঠিকানা দক্ষিণ বাড্ডা, কাঁচাবাজার। তবে পার্সেলটি কেউ নিচ্ছিল না, এরপর ডাক বিভাগ বিষয়টি মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে জানায়। মাদক দ্রব্যের গোয়েন্দা বিভাগের উপপরিচালক রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে একটি টিম গিয়ে পার্সেলটি খোলেন। পার্সেল খুলে ২৫টি এলএসডি (লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইথ্যালামাইড) ব্লটার পায় কর্মকর্তারা। 

কর্মকর্তারা মাদক চোরাকারবারিদের ধরতে পার্সেলটি নিয়ে অপেক্ষা করেন। তারা গুলশান পোস্ট অফিসের আশপাশে অপেক্ষায় থাকেন। ১৫ মে পার্সেল নিতে আসেন শাফিন আহমেদের ছেলে আযরাফ আহমেদ ওজি। ডিএনসির কর্মকর্তারা তাকে আটক করেন। তখন তিনি নিজেকে শাফিন আহমেদের ছেলে বলে পরিচয় দেন। 

তিনি ডিএনসির জিজ্ঞাসাবাদে জানান, যার নামে পার্সেলটি এসেছে সেই ফারদিন তাঁর বন্ধু। ফারদিনই পার্সেলের মালিক। তাকে এটি নেওয়ার জন্য পাঠিয়েছেন। তিনি এর কিছুই জানেন না। এরপর ওজিকে দিয়ে ফারদিনকে কৌশলে ডেকে আনে ডিএনসি কর্মকর্তারা। ফারদিনকে আটকের পর তিনি আবার ইব্রাহিম কিবরিয়া নামে এক যুবকের নাম বলেন। তাকে গ্রেপ্তার করতে রাজধানীর আগারগাঁও আসে ডিএনসির টিম। নির্বাচন কমিশন ভবনের সামনে থেকে ইব্রাহিমকেও আটক করে ডিএনসি। 

ডিএনসির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ইব্রাহিম ডিএনসির জিজ্ঞাসাবাদে জানান তিনি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির এপিএস মফিজুর রহমানের শ্যালক। মফিজুর রহমানের বাসায়ই তিনি থাকেন। বিষয়টি ডিএনসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়। এরপর অভিযান অব্যাহত রাখার জন্য নির্দেশ আসে। তারপর মফিজুর রহমানের ফ্ল্যাটেও (ফ্ল্যাট নং ডি-১৩০৩) তল্লাশি চালানো হয়। তার বাসা থেকেও এমডিএমএ (মেথাইলিন ডক্সি মেথা এমফিটামিন) উদ্ধার করা হয়। এ সময় এপিএস সেখানে উপস্থিত ছিলেন। 

ডিএনসি কর্মকর্তারা ওই দিনই ফারদিন খান, ইব্রাহিম ও ওজিকে নিয়ে সেগুনবাগিচার মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদর দপ্তরে নিয়ে আসেন। ১৫ মে রাতে তাদের কার্যালয় রাখা হয়। পরদিন ১৬ মে ওজি ও ইব্রাহিমকে ছেড়ে দিতে ডিএনসিতে প্রভাবশালী থেকে চাপ আসতে শুরু করে। শাফিন আহমেদ ও এপিএস মফিজুর রহমান ডিএনসি সদর দপ্তরে নিজেও গিয়েছিলেন। 

চাপের মুখে পরে ডিএনসি কর্তৃপক্ষ ইব্রাহীম ও ওজি’র কাছ থেকে ১০ গ্রাম গাজা উদ্ধার হয়েছে বলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবা হকের মোবাইল কোর্টে একদিন করে সাজা দেওয়া হয়। যেহেতু তারা একরাত ডিএনসিতে ছিলেন, তাই ১৬ মে তাদের পরিবার সাজা শেষে নিয়ে যান। 

অপরদিকে কোনো তদবির না থাকায় ফারদিনের বিরুদ্ধে ১৬ মে পল্টন থানায় ডিএনসির পরিদর্শক মাসুদুর রহমান মামলা করেন। মামলায় একমাত্র তিনি নামীয় আসামি। 

ইব্রাহীমের দুলাভাই মফিজুর রহমান এবং ওজির বাবা শাফিন আহমেদের কাছ থেকে সাদা কাগজে মুচলেকা নেওয়া হয়। এতে তারা লেখেন, সংশ্লিষ্টরা আর কখনো মাদকসেবন করবেন না। তাদেরকে মাদক পুনর্বাসনকেন্দ্রে পাঠানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

এ বিষয়ে জানার জন্য শিক্ষামন্ত্রীর এপিএস মফিজুর রহমানের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রশ্ন শুনে লাইন কেটে দেন। 

শাফিন আহমেদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কিছু জানি না।’

দুজনকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর পরিচালক (অপারেশনস্ ও গোয়েন্দা) তানভীর মমতাজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যার কাছে মাদক পাওয়া গেছে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বাকি বিষয়টা আমার জানা নেই। এ বিষয়ে জেনে জানাতে পারব।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

শেখ হাসিনাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে এম সাখাওয়াতের বিস্ফোরক মন্তব্য, কী বলেছেন এই উপদেষ্টা

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, আহত ৩

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত