দুই ভাইয়ের দ্বন্দ্বে মৃত মায়ের জানাজায় বাধা

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৮: ৩১
আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৮: ৫০

শত শত মানুষ ষাটোর্ধ্ব নারী মালেকা বেগমের জানাজা উপস্থিত। জানাজা শুরু হবে। এমন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন এসে হাজির। এর কিছু সময় পর বেশ কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী জানাজা স্থলে উপস্থিত হন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উপস্থিতির পর জানাজায় আগত মুসল্লিদের মধ্যে কানাঘুষা শুরু হয়। 

একপর্যায়ে পুলিশের লোকজন মৃত ওই নারীর বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের জেরা করতে থাকেন। কারণ মৃত নারীর বড় ছেলে মো. ইকবাল হোসেন বাদী হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন তাঁর মায়ের মৃত্যু স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। তাঁর মাকে তাঁর ছোট ভাই নির্যাতন করে মারতে পারেন। এ জন্য ময়নাতদন্তের পর লাশ দাফনের জন্য থানায় লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। এ জন্য মৃত নারীর লাশ দাফন করতে ১ ঘণ্টারও বেশি সময় বিলম্বে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। 

নিহত মালেকা বেগম শ্রীপুর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত আব্দুল মান্নানের স্ত্রী। 
 
জানা যায়, তিনি বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বুধবার রাতে তিনি মারা যান। নানা জটিলতার সঙ্গে তিনি গত এক সপ্তাহ পূর্বে করোনায় আক্রান্ত হন। মৃত্যুর খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর বড় ছেলে স্থানীয় একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইকবাল হোসেন শ্রীপুর থানায় অভিযোগ করেন। পরে পুলিশ গিয়ে লাশ দাফনে বাধা তৈরির চেষ্টা করলেও স্থানীয়দের হস্তক্ষেপে দাফন হয়। 

স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, ১৯৯৪ সালে আব্দুল মান্নান চার ছেলে ও তিন মেয়ে রেখে মারা যান। পরে জমির বণ্টন নিয়ে ভাইদের মধ্যে জটিলতার সৃষ্টি হয়। এ সময় ইকবাল হোসেন তাঁর মায়ের স্বামী সত্ত্বেও পাওয়া সম্পত্তির মালিকানা পেতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। তাঁকে একা জমি লিখে না দেওয়ার তাঁর মায়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এ সময় তাঁর মা ছোট ভাইয়ের বাসায় ওঠেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ছোট ছেলেই তাঁর দেখাশোনা করতেন। 

জানাজা নামজের বিলম্বের ১ ঘণ্টা পর শুরু হয় নামাজনিহতের ছোট ছেলে মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন তিনিই তাঁর মায়ের দেখাশোনা করে আসছিলেন। পরে হঠাৎ করে মা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। গতকাল করোনা আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বাড়িতে লাশ নিয়ে আসার পর তাঁর বড় ভাই পুলিশ নিয়ে এসে মায়ের লাশ দাফনে বাধা তৈরি করেন। 

এ বিষয়ে নিহতের বড় ছেলে মো. ইকবাল হোসেন বলেন, তাঁর মায়ের নামে প্রায় দুই বিঘা জমি ও ব্যাংকে ৫০ লাখ টাকা ছিল। এগুলো আত্মসাৎ করতেই তাঁর মাকে ছোট ভাই মেরে ফেলেছে, এমন ধারণায় তিনি থানায় অভিযোগ করেন। তবে পুলিশ লাশের ময়নাতদন্ত না করেই চলে গেছেন। তিনি এ বিষয়ে আদালতের দ্বারস্থ হবেন। 

মুসল্লি নুরুজ্জামান বলেন, পারিবারিক সমস্যার কারণে মায়ের লাশ নিয়ে এ রকম কাণ্ড সত্যি লজ্জাজনক। এ রকম কাজ একজন সন্তান করতে পারে কি করে? রীতিমতো আশ্চর্য হওয়ার মতো। 

সাব্বির হোসেন নামে এক মুসল্লি বলেন, ‘যে মা তাঁকে জন্ম দিয়ে শিশুকাল থেকে এত কষ্ট করে লালনপালন করে বড় করেছে। লেখাপড়া করিয়ে শিক্ষক বানিয়েছে, সে মায়ের শেষ বিদায় বেলা এ রকম কাণ্ড কোনো সন্তান করতে পারে না।’ 
 
শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক কামরুল ইসলাম বলেন, লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে চিকিৎসার কাগজপত্র দেখে স্বাভাবিক মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ছাড়াও মৃত নারীর করোনা পজিটিভ ছিল। তবে তিনি যেহেতু ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা গেছেন সেহেতু অভিযোগ থাকলে সেখানে মামলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

শেখ হাসিনাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে এম সাখাওয়াতের বিস্ফোরক মন্তব্য, কী বলেছেন এই উপদেষ্টা

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, আহত ৩

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত