করোনার টিকা নিতে যেয়ে টিকা কেন্দ্রের দোতলা থেকে পড়ে আঞ্জুয়ারা খাতুন (৩৫) নামের এক বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নারীর মৃত্যু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জের বনশ্রী শিক্ষা নিকেতনের গণ টিকা কেন্দ্রে ঘটনাটি ঘটে। 

নিহত নারী শ্যামনগর উপজেলার হরিনগর গ্রামের মৃত আবুজার মোড়লের মেয়ে।

নিহতের খালাতো ভাই প্রভাষক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আজ মঙ্গলবার স্থানীয় বনশ্রী শিক্ষা নিকেতনের নির্মাণাধীন চারতলা ভবনের দোতলায় গণ টিকা দেওয়ার কাজ চলছিল। এ সময় টিকা নেওয়ার পর অসুস্থবোধ করায় আঞ্জুয়ারা তাঁর মা চায়না বেগমের সঙ্গে দোতলায় একটি বেঞ্চে বসেছিল। কয়েক মিনিট পরে তিনি উঠে দাঁড়ালে অসতর্কতাবশত দোতলার ব্যালকনির ওপর দিয়ে উল্টে নিচে পড়ে যায়। এ সময় মুন্সিগঞ্জ নৌ-পুলিশের ইনচার্জ তারক বিশ্বাসের সহায়তায় স্থানীয়রা দ্রুত উদ্ধার করে শ্যামনগর হাসপাতালে নিলেও চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। 

আঞ্জুয়ারা খাতুনের মা চায়না বেগম জানান, ‘টিকা নিয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকার পর বাড়িতে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াতে যেয়ে সুরক্ষা প্রাচীর না থাকা অংশ দিয়ে সে নিচে পড়ে যায়। করোনা থেকে বাঁচার জন্য টিকা নিতে এসে মেয়েকে হারালাম।’ 

এদিকে টিকাদান কেন্দ্র বনশ্রী শিক্ষা নিকেতনের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল করিম জানান, ‘মঙ্গলবার টিকার বিষয়ে তাঁকে জানানো হয়নি। ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টরা সতর্ক হলে এমন দুর্ঘটনা হয়তো এড়ানো যেত।’ 

টিকাদানের দায়িত্বে থাকা মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক লক্ষ্মী রানি মণ্ডল জানান, ‘প্রথম ডোজের গণ টিকা দেওয়ার সময় কোন সমস্যা হয়নি। কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের নির্দিষ্ট করে দেওয়া অংশে টিকা দেওয়ার সময় মায়ের হাত থেকে ছাড়িয়ে যেয়ে আঞ্জুয়ারা দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন।’ মাত্র তিনজন সহকর্মীকে নিয়ে সাড়ে ৯০০ মানুষের টিকা দেওয়ার কারণে তারা বাইরের দিকে খেয়াল করতে পারেননি বলেও জানান তিনি। 

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মো. জিয়াউর রহমান বলেন, ‘টিকাদান কেন্দ্রে আসা মানসিক প্রতিবন্ধী আঞ্জুয়ারা মায়ের হাত থেকে নিজেকে জোরপূর্বক ছাড়িয়ে নিতে যেয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। ঘটনার তদন্তে ইতিমধ্যে আবাসিক মেডিকেল অফিসার বিপ্লাব কুমার দের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে।’ 

শ্যামনগর থানার ওসি কাজী ওয়াহিদ মুর্শেদ জানান, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। স্বজনদের কোন অভিযোগ না থাকায় মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।