বৈশিক মন্দায় ডলার সংকটের কারণ দেখিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো চাহিদামত এলসি খুলতে অপারগতা প্রকাশ করায় বিপাকে পড়েছেন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। গত অক্টোবর মাসে ব্যাংক এলসির সংখ্যা কমালেও চলতি মাস থেকে পরিমাণ একেবারেই কমে গেছে। চলমান সংকট দ্রুত না কাটলে আগামী দিনে শিল্পকারখানার যন্ত্রাংশ, কাঁচামাল, খাদ্যসহ অনেক পণ্যের আমদানি বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে বলে মন্তব্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর। 

আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব বৈশ্বিক কারণে বাংলাদেশেও পড়ছে। ইতিমধ্যে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে অন্যান্য দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দিয়েছে। খাদ্য দ্রব্যসহ শিল্প, কলকারখানার কাঁচামাল ও মেশিনারিজ দ্রব্য প্রচুর পরিমাণে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় বাংলাদেশকে। কিন্তু বৈশিক মন্দায় ডলারের দামের ঊর্ধ্বগতি আর সংকটের কারণে দেখিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো গত দুই মাস ধরে এলসির সংখ্যা কমাতে থাকে। তবে এখন ডলার সংকট আরও বেড়ে যাওয়ায় চলতি মাস থেকে কোনো এলসি গ্রহণ করছে না বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। এতে আমদানিকারকেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। বর্তমানে ভারত থেকে ৮০ শতাংশ পুরোনো এলসি আর ২০ শতাংশ নতুন এলসির পণ্য আমদানি হচ্ছে। দ্রুত এ সংকট কাটাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে যে কোনো সময় আমদানি বাণিজ্য বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে। এর বিরূপ প্রভাবে দেশে খাদ্য ঘাটতিসহ আমদানি পণ্যের মূল্য লাগামহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। 

আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান নিপু ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী নিপু হোসেন বলেন, ‘বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আমদানি পণ্যের এলসি বন্ধ করে দেওয়ায় মারাত্মক সমস্যার মুখে ব্যবসায়ীরা। এভাবে আমদানি বাধাগ্রস্ত হলে দেশের শিল্প–কলকারখানা অচল হয়ে পড়বে। খাদ্য সংকটও দেখা দেবে।’ 

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শামসুর রহমান বলেন, ‘চলতি মাস থেকে সব ধরনের এলসি নেওয়া প্রায় বন্ধ করেছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। কোনো ধরনের এলসির অনুরোধ গ্রহণ করছে না ব্যাংক। সংকটে পড়েছি। দ্রুত এ সংকট না কাটলে সামনে ভয়াবহ অবস্থা দাঁড়াতে পারে।’ 

এ বিষয়ে বেনাপোল আমদানি–রপ্তানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক বলেন, ‘বর্তমান এলসির ক্ষেত্রে ব্যাংকে ডলারের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১০৬ টাকা। যা দুই মাস আগেও ছিল ৯৬ টাকা। সবশেষ গতকাল সোমবার ভারত থেকে আমদানি হয়েছে মাত্র ১৮৩ ট্রাক পণ্য। রপ্তানি হয়েছে ১১৭ ট্রাক। হঠাৎই যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অর্ধেকে নেমেছে।’ 

বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক মনির হোসেন বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমদানির পরিমাণ অর্ধেকে নেমেছে। বন্দরের শেড ও ইয়ার্ড খালি পড়ে আছে। 

এ বিষয়ে বেনাপোল আল আরাফা ইসলামী ব্যাংকের ম্যানেজার শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ডলার সংকটের কারণে তাঁরা আমদানিকারকদের চাহিদামতো এলসি গ্রহণ করতে পারছেন না। সংকট কাটলে এ সমস্যা থাকবে না।’