জামালপুরের ইসলামপুরে নির্ধারিত দিনে উদ্বোধন হয়নি অতিদরিদ্রদের জন্য গৃহীত কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) প্রকল্প। প্রকল্প দেখভালের দায়িত্বে থাকা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানরা বনভোজনে এবং প্রকল্পের মাঠ কর্মকর্তা ছুটিতে থাকায় প্রকল্প উদ্বোধন হয়নি। 

এদিকে প্রকল্পের ৪০ দিনের প্রথম পর্যায়ের বেশির ভাগ কাজই নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি। 

এ বিষয়ে স্থানীয়রা বলছেন, কাজ না করেই কর্মদিবস ফাঁকি দিয়ে প্রকল্পের কাজ করা হয়েছে মর্মে ভুয়া মাস্টাররোলে শ্রমিকদের মজুরির টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করতে পারেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। তাতে প্রকল্পের আওতায় অতিদরিদ্র শ্রমিকদের জন্য সরকারের গৃহীত অর্থনৈতিক সুরক্ষার ওই প্রকল্পে অধিকারবঞ্চিত হবেন দরিদ্ররা। 

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শনিবার উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে একযোগে ইজিপিপি প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু করার সরকারি নির্দেশনা ছিল। কিন্তু উপজেলা অফিসার্স ক্লাবের আয়োজনে বার্ষিক বনভোজনে যান ১২ জনের মধ্যে ১০ ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ (পিআইও) বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা। আর ছুটিতে ছিলেন প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ের দেখভালের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী প্রকৌশলী মো. নুরুনবী মোস্তফা চৌধুরী। প্রকল্প তদারক করেন ইউপি চেয়ারম্যানেরা। সাধারণ ও সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্যরা প্রকল্পের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে থাকেন। 

সরেজমিন উপজেলার গোয়ালেরচর, চিনাডুলী, বেলগাছা, চরগোয়ালিনী, চরপুটিমারীসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে গিয়ে প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হতে দেখা যায়নি। 

উপজেলা প্রকল্প কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় স্বাভাবিকভাবে কায়িক পরিশ্রমে অক্ষম অতিদরিদ্র শ্রমিকদের মাথাপিছু ৪০০ টাকা দৈনিক মজুরিতে ইজিপিপি প্রকল্পের মাটি কাটার কাজ করানোর কথা প্রকল্পের কার্যাদেশে রয়েছে। 

 ১১০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পে প্রথম পর্যায়ে ১২টি ইউনিয়নে ৯৫টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ ১১০ দিন চলার কথা রয়েছে। ২ হাজার ৮১৪ জন সুবিধাভোগী শ্রমিকের বিপরীতে ১২ কোটি ৩৮ লাখ ১৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। 

এর মধ্যে উপজেলার কুলকান্দী ইউনিয়নে ১৭৭ শ্রমিক, বেলগাছায় ২৫৩ শ্রমিক, চিনাডুলীতে ২৪০ শ্রমিক, সাপধরীতে ১৯১ শ্রমিক, নোয়ারপাড়ায় ২৫৩ শ্রমিক, ইসলামপুর সদরে ১৫৮ শ্রমিক, পাথর্শীতে ২৯৫ শ্রমিক, পলবান্ধায় ১৩৬ শ্রমিক, গোয়ালেরচরে ২৮৭ শ্রমিক, গাইবান্ধায় ৩২১ শ্রমিক, চরপুটিমারীতে ৩০৫ শ্রমিক এবং চরগোয়ালিনী ইউনিয়নে ১৭৩ জন শ্রমিকের অবকাঠামো উন্নয়নে মাটি কাটার কাজ করার কথা রয়েছে। 

উপজেলার গোয়ালেরচর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম বাদশা বলেন, ‘উপজেলার অফিসার্স ক্লাবের আয়োজনে গতকাল শনিবার বার্ষিক বনভোজনে লাউচাপড়া অবকাশে গিয়েছিলাম। তাই প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন করা সম্ভব হয়নি।’ 

প্রকল্প বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে তদারকির দায়িত্বে থাকা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. নুরুনবী মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ‘আমি ছুটিতে আছি। প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন করা হয়েছে কিনা জানি না। বিষয়টি পিআইও স্যার বলতে পারবেন।’ 

পিআইও মেহেদী হাসান টিটু বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ শুরু করার নির্দেশনা দিয়েছি। কর্মদিবস ফাঁকি দিয়ে প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে করা না হলে টাকা দেওয়া হবে না।’ 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মু. তানভীর হাসান রুমান বলেন, ‘যেসব প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন করা হয়নি, সেসব প্রকল্পের কাজও এখন থেকে শুরু হবে।’ 

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম জামাল আব্দুন নাছের বাবুল বলেন, ‘প্রকল্পের বিষয়ে আমাকে কিছু জানানো হয়নি। প্রকল্পের কাজ কখন কোথায় কীভাবে শুরু করা হবে, তাও জানি না। তবে এখন খোঁজখবর নেব।’