সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ: রবির অপেক্ষায় ছোট বোন রিমঝিম

নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৬ জুন ২০২২, ১৩: ২৯
আপডেট : ০৬ জুন ২০২২, ১৫: ৪৩

‘আপু আমার কেমন আছো, ঈদে কিন্তু বাড়ি যাচ্ছি, তোর জন্য অনেকগুলা পোশাক কিনব। তুই মন দিয়ে পড়াশোনা করবি। একদম দুষ্টুমি করবি না।’ আদরের ছোট বোন রিমঝিমের সঙ্গে গত শনিবার সকাল ৯টার দিকে এসব কথাই হয় ফায়ার ফাইটার রবিউল ইসলাম রবির (২৭)। 

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় নওগাঁ সদরের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম রবি নামের ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মী নিখোঁজ হন। তিনি সীতাকুণ্ড ফায়ার স্টেশনে ফায়ার ফাইটার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি নওগাঁ শহরের চকপাথুরিয়া পূর্বপাড়ায় মহল্লার খাদেমুল ইসলামের ছেলে।

স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, পরিবারটির একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি রবিউল ইসলাম। নিখোঁজের সংবাদ পেয়ে পরিবারটিতে চলছে শোকের মাতম। তিনি জীবিত আছেন নাকি মৃত এই দুশ্চিন্তায় পরিবারের সবাই অস্থির হয়ে পড়েছেন। 

গতকাল রোববার রাতে রবিউলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, কান্না করছে রবির আদরের ছোট বোন রিমঝিম। কিছুতেই থামছে না তার কান্না। কান্না করছে আর বলছে, ‘আম্মু ভাইয়া ফোন রিসিভ করে না কেন? আমি ভাইয়ার সাথে কথা বলব। টিভিতে দেখলাম অনেক মানুষ মারা গেছে। আম্মু ভাইয়া কি আছে।’

রিমঝিম বলে, ‘ভাইয়ার সাথে খুব কথা বলতে মন চাইছে। ভাইয়া যখনই বাড়ি আসে তখন আমার জন্য অনেক খাবার আনে, পোশাক আনে, আমাকে বাইকে করে ঘুরতে নিয়ে যায়। আল্লাহ যেন ভাইয়াকে আমার কাছে ফিরে দেয়।’ 

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, তিন ভাই-বোনের মধ্যে রবিউল বড়। তাঁর বাবা একজন কৃষক। দেড় বছর আগে ফায়ার সার্ভিসে যোগ দেন রবিউল। প্রশিক্ষণ শেষে কর্মস্থল সীতাকুণ্ডে যোগ দেন। গত ঈদে ছুটি নিয়ে বাড়ি আসেন। ছুটি শেষে আবারও কর্মস্থলে ফিরে যান। সীতাকুণ্ডে আগুন নেভানোর কাজে রবিউল অংশ নেন বলে জানায় তাঁর পরিবার। 

সীতাকুণ্ডে কনটেইনার ডিপোর বিস্ফোরণের ঘটনায় নিখোঁজ নওগাঁ সদরের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম রবি। ছবি: সংগৃহীতরবিউলের মা ফাইমা বেগম বলেন, ‘শনিবার রাতে ছেলের সঙ্গে সামান্য কথা হয়েছে। ছেলে ব্যস্ত থাকায় পরে ফোন দিতে বলে। পরদিন সকালে ছেলেকে ফোন দিলে অন্য একজন রিসিভ করে বলেন, ‘‘রবিউল ডিউটিতে গেছে তার জন্য দোয়া করেন।’’ জানি না আমার ছেলের এখন কি অবস্থা।’ 

এদিকে ছেলেকে খুঁজতে বাবা খাদেমুল ইসলাম সীতাকুণ্ড ফায়ার স্টেশনে যাওয়ার পর গতকাল রোববার রাতে সেখানকার কর্মকর্তারা রবিউলের সঠিক কোনো তথ্য দিতে পারেনি। 

খাদেমুল ইসলাম বলেন, ‘সীতাকুণ্ড ফায়ার স্টেশনের কর্মকর্তারা বলেছেন, সহকর্মীদের কয়েকজন মারা গেছেন আবার অনেকে গুরুতর আহত হয়েছেন। ঢাকায় গিয়ে নিজে দেখে শনাক্ত করতে বলেছেন।’ 

সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ সম্পর্কিত সবশেষ খবর পেতে - এখানে ক্লিক করুন

এ বিষয়ে সীতাকুণ্ড ফায়ার স্টেশনের ইনচার্জ নূরে আলম দুলাল জানান, হতাহতের চেহারা ঠিকভাবে চেনার উপায় নেই। অনেক কর্মীকেই ঢাকাতে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে রবিউলও রয়েছেন আশা করছি। তাঁর বাবাকে ঢাকাতে যেতে বলেছি। যাতে নিজেই ছেলেকে শনাক্ত করতে পারেন। 

এই সম্পর্কিত সর্বশেষ:

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত