ভারতে চিকিৎসায় গিয়ে আগুনে পুড়লেন বিজেলী, লাশের অপেক্ষায় স্বজনেরা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২২, ১৬: ১১
আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২২, ১৮: ১৫

ভারতের কলকাতার ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের একটি আবাসিক হোটেলে অগ্নিকাণ্ডে মারা যান চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার শামীমাতুল আরশ বিজেলী (৬০)। তিনি উপজেলার কানসাট ইউনিয়নের পার কানসাট গ্রামের মোশারফের স্ত্রী। এ ঘটনায় তাঁর বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। অভিভাবক হারিয়ে কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না ছেলে সারাফাত হোসেন ও স্বজনেরা। 

আজ সোমবার সকালে উপজেলার কানসাট ইউনিয়নে শামীমাতুল আরশ বিজেলী বেগমের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, গত বুধবার হার্টের চিকিৎসার জন্য ছেলে লাবিবকে সঙ্গে নিয়ে ভারতের কলকাতায় গিয়েছিলেন তিনি। এরপর রাতে থাকার জন্য কলকাতার ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের একটি হোটেলে ওঠেন তাঁরা। হঠাৎ শনিবার ভোরে সেই হোটেলে আগুন লাগে। এতে অগ্নিদগ্ধ হন তিনি। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। এদিকে প্রিয়জন হারানোর যন্ত্রণায় কান্নায় ভেঙে পড়ছেন স্বজনেরা। অভিভাবক হারিয়ে কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না তাঁর সন্তানেরা। তাঁদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা। আহাজারিতে এলাকাবাসীও চোখের পানি থামাতে পারছেন না। 

নিহত শামীমাতুল আরশ বিজেলীর মেয়ে মোয়াজেম্মা বেগম বলেন, ‘মা গত তিন মাস থেকে একটু অসুস্থ, সামনে রোজা তাই মা আমাকে বলছিলেন, সামনে তো রোজা, আমি তো রোজা করব। কিন্তু এই অসুস্থ শরীরে কেমন করে রোজা করব? তখন আমি বলেছি, তাহলে তুমি ভারতে গিয়ে ভালো চিকিৎসক দেখিয়ে এসো। এ কথা শুনে মা চিকিৎসার জন্য ৯ মার্চ আমার এক ভাইকে নিয়ে কলকাতা গিয়েছিলেন। কিন্তু গত শনিবার ভোর চারটার দিকে খবর পাই, আমার মা আর নেই। হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আমার মা মারা গেছেন।’ 

মোয়াজেম্মা আরও বলেন, ‘এ কথা শুনে আমার সবকিছু থমকে গেছে। আমি কখনো ভাবিনি আমার মা এভাবে চলে যাবে।’ 

ছেলে সারাফাত হোসেন বলেন, ‘এর আগেও আমার মা ভারতে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন। অসুস্থ অবস্থায় গিয়ে ভালো হয়ে ফিরেছেন। কিন্তু এবার ঘটল ভিন্ন ঘটনা। ভালো অবস্থায় গিয়ে জীবনটায় হারিয়ে দিলেন তিনি। আমাদের শেষ সম্বল, মাথা রাখার স্থান আর থাকল না।’ 

সারাফাত হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে আরও বলেন, ‘আমার মাকে তো আমরা হারিয়ে দিয়েছি। শত চেষ্টা করেও আর ফিরবে না। তাই দুহাত বাড়িয়ে অপেক্ষা করছি। শেষবার মায়ের মুখটা দেখার জন্য। মাকে নিজ হাতে দাফন করার জন্য।’ 

নিহতের পরিবারে স্বজনদের আহাজারি কানসাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বেনাউল ইসলাম বলেন, ‘কলকাতায় একটি হোটেলে অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যুর ঘটনা শুনেছি। কিন্তু এতে যে আমার ইউনিয়নের একজন রয়েছে, তা আমার জানা ছিল না। আপনি বললেন এখন খোঁজ নিচ্ছি।’ 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মাহবুব আলম খান বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি অবগত নই। খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

উল্লেখ্য, ভারতের কলকাতার শনিবার ভোরে ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের একটি আবাসিক হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে শামীমাতুল আরশ নামের এক বৃদ্ধ ছাড়া সবাইকে সরিয়ে নেওয়া হয়। প্রথমে তাঁকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। পরে দগ্ধ অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে এসএসকেএম হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। এ ছাড়া দুজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি নাগরিক রয়েছেন। তাঁর নাম মেহতাব আলম (৪২)। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

শেখ হাসিনাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে এম সাখাওয়াতের বিস্ফোরক মন্তব্য, কী বলেছেন এই উপদেষ্টা

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, আহত ৩

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত