রিমন রহমান ও রিপন চন্দ্র রায়, রাজশাহী
‘হলে উঠতে বিভাগের ছাত্রলীগের এক সিনিয়র ভাইয়ের সঙ্গে আলাপ করি। তিনি বলেন এখন টাকা ছাড়া তো হলে ওঠা যায় না। আমি যদি সাত-আট হাজার টাকা দিতে পারি, তাহলে তিনি আমাকে হলে তুলে দিতে পারবেন। তাঁর কথামতো আমি তাঁকে সাত হাজার টাকা দিই। পরে তিনি হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলে আমাকে চার সিটের একটি কক্ষে তোলেন।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষার্থী হলে ওঠার গল্পটা শোনালেন এভাবেই। সম্প্রতি তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলে উঠেছেন ছাত্রলীগের মাধ্যমে। দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীদের হলে উঠতে হলে ছাত্রলীগই ভরসা। ছাত্রলীগ ছাড়া হলে ওঠা যায় না। ছাত্রদের সব হলের দখলদারি নিয়ে এভাবেই রাজার মতো শাসন করে যাচ্ছে ছাত্রলীগ। তাদের কাছে অসহায় সাধারণ শিক্ষার্থী, এমনকি হল প্রশাসনও।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্শ হলের আবাসিক শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম কনক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের হল প্রশাসন নিরুপায়। হল প্রশাসনের মাধ্যমে কাউকে বৈধ সিটে তুলে দিলে দেখা যায়, পরে তাকে হুমকি দিয়ে বের করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি মারধরও করা হয়। হল প্রশাসন এ নিয়ে কথা বলতে গেলে বিভিন্ন সময় শিক্ষকেরা লাঞ্ছনার শিকার হন। ফলে যে অল্পসংখ্যক সিট রয়েছে, সেগুলোও সুষ্ঠুভাবে বণ্টন করা সম্ভব হচ্ছে না।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানাচ্ছে, আবাসিক হলের সব বিষয়ের হর্তাকর্তা হলেন প্রাধ্যক্ষ। তবে রাবির হলগুলোতে ছাত্রলীগের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছেন হল প্রাধ্যক্ষরা। হলে সিট খালি হওয়ার আগেই তা হাতিয়ে নিচ্ছে ছাত্রলীগ। পরে এসব সিটে টাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের উঠিয়ে হল প্রাধ্যক্ষের কাছ থেকে জোর করে আবাসিকতা নেওয়া হচ্ছে। ফলে আবাসিকতার গণবিজ্ঞপ্তি দিলেও সিট অনুযায়ী শিক্ষার্থী তুলতে পারে না হল প্রশাসন।
রাবির ১১টি ছাত্র হল প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের শুরুতে শহীদ জিয়াউর রহমান হলে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ১৯২ জনের আবাসিকতা দেওয়া হয়। প্রাধ্যক্ষের দাবি, তিনিই সবাইকে হলে তুলেছেন। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে হল প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, বরাদ্দপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীর এক-চতুর্থাংশ শিক্ষার্থীকেও হলে তুলতে পারেনি প্রশাসন। শাহ মখদুম হলে গত বছরের নভেম্বরে সর্বশেষ আবাসিকতার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। তবে কতজনকে হলে ওঠানো হয়েছে, তা জানায়নি প্রশাসন। নবাব আব্দুল লতিফ হলেও গত বছর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এর মাধ্যমে ১২১ জনকে হলের আবাসিকতা দেওয়া হয়। মাদার বখ্শ হলে গত বছরের আগস্টে সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তখন ১৭০টি ফাঁকা আসনের মধ্যে ১৫০ জন শিক্ষার্থীকে হলে তুলেছেন প্রাধ্যক্ষ।
সৈয়দ আমীর আলী হলে সর্বশেষ গত বছরের মার্চে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে মাত্র ৮৫ জন শিক্ষার্থীকে হলে তোলা হয়েছে। শহীদ শামসুজ্জোহা হলে ৫০-৬০টি সিট খালি থাকা সাপেক্ষে গত মে মাসে আবাসিকতার গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এখনো সে প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। শহীদ হবিবুর রহমান হলে সর্বশেষ কবে আবাসিকতার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল, তা জানাতে পারেনি হল প্রশাসন।
মতিহার হলে সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় গত বছরের ১ জানুয়ারি। তবে এই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কতজনকে আবাসিকতা দেওয়া হয়েছে, সে তথ্য জানাতে পারেনি হল প্রশাসন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয় পাঁচ মাস আগে। কিন্তু ছাত্রলীগের প্রভাবের কারণে এখনো কাউকে সিটে তোলা সম্ভব হয়নি। শেরেবাংলা হলে সর্বশেষ গত বছরের নভেম্বর মাসে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। তখন ৭৫ জন শিক্ষার্থীকে হলে তুলতে সক্ষম হন হল প্রাধ্যক্ষ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে কোনো বিজ্ঞপ্তিই দেওয়া হয় না। এই হলে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি, সম্পাদকসহ নেতা-কর্মীরা। সভাপতি-সম্পাদকের এখন ছাত্রত্বই নেই। তাঁরা নিজেরাই আছেন অবৈধভাবে। তাঁদের সঙ্গে অবৈধভাবে আছেন ছাত্রলীগের আরও অনেকে।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল্লাহ হিল গালিব থাকেন মাদার বখ্শ হলের ২১৫ নম্বর কক্ষে। তিনি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। এখানে ড্রপ আউট হয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স করেছেন। এরপর রাবির সাংবাদিকতা বিভাগের সান্ধ্যকালীন কোর্সে ভর্তি হয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী, সান্ধ্যকালীন কোর্সের শিক্ষার্থীরা হলে থাকতে পারেন না। গালিবের নামে আবাসিকতা না থাকলেও তিনি হলে থাকেন। যোগাযোগ করা হলে ছাত্রলীগের এই নেতা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শুধু আমি না, অনেকেই হলে অবৈধভাবে থাকেন। সবার বিষয়ে খোঁজ নেন।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১১টি হলের কোনোটিই শতভাগ আবাসিক নয়। অনেক শিক্ষার্থীই রাজনৈতিক সুবিধা কাজে লাগিয়ে আবাসিকতা ছাড়াই সিট দখল করে হলে অবস্থান করছেন। এ ছাড়া এক হলের আবাসিক শিক্ষার্থী হয়ে অন্য হলে অবস্থান করার প্রবণতাও দেখা গেছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ হাজার ৯৬৯ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে ১১টি হলে মোট আসন রয়েছে ৫ হাজার ৩৮৩টি। এর মধ্যে মাদার বখ্শ হলে ৫৮৪টি সিটের মধ্যে ৮৪টি অনাবাসিক, নবাব আব্দুল লতিফ হলে ৩২৩ সিটের ৪৩টি অনাবাসিক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে ৬০০ আসনের ১৩৭টি অনাবাসিক, শহীদ শামসুজ্জোহা হলে ৪০৬টি আসনের বিপরীতে ৪১টি অনাবাসিক। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল প্রশাসনের দেওয়া তথ্যমতে, ৩৬৪ সিটের বিপরীতে আবাসিক রয়েছে ৩৫০ জন। তবে এখানেই সবচেয়ে বেশি অনাবাসিক শিক্ষার্থী থাকেন বলে জানা গেছে। হলগুলোতে পাঁচ শতাধিক সিট বেদখল রয়েছে। তাতে মাসে ১০০ টাকা হিসাবে বছরে প্রায় ৬ লাখ টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আবার সাধারণ শিক্ষার্থীরা সিটও পাচ্ছেন না।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আমার হলে বর্তমানে ১৩৭টি আসনে আবাসিক ছাত্র নেই। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমি আবাসিকতার গণবিজ্ঞপ্তিও দিয়েছিলাম। কিন্তু এসব আসনের অধিকাংশই দখল করে আছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। ফলে প্রায় পাঁচ মাস আগে ছাত্রদের ভাইভা নিলেও তাদের সিট দিতে পারিনি। এমনকি প্রতিবন্ধী ছাত্রদের সংরক্ষিত আসনও অবৈধভাবে দখলে রাখা হয়েছে। ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগের কাছে আমরা হল প্রশাসন যেন জিম্মি হয়ে রয়েছি।’
বিভিন্ন হলে থাকা শিক্ষার্থীরা জানান, প্রায়ই হলের প্রতিটি কক্ষে গিয়ে শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহ করেন হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এরপর হলে অবস্থানরত মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের বিছানার নিচে একটি করে ভর্তি বস্তা রেখে আসা হয়। মাস্টার্সের পরীক্ষা শেষ হলেই ওই শিক্ষার্থীকে নানাভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়। একপর্যায়ে ওই শিক্ষার্থী হল ছাড়তে বাধ্য হন। এরপর সিটটি চলে যায় ছাত্রলীগের দখলে। যেখানে তারা নিজেদের কর্মী কিংবা টাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের তোলেন। কিছুদিন পর ওই শিক্ষার্থীর আবাসিকতার জন্য হল প্রাধ্যক্ষের কাছে সুপারিশ করে ছাত্রলীগ। তখন এসব শিক্ষার্থীকে আবাসিকতা দিতে বাধ্য হন হলের প্রাধ্যক্ষরা।
ছাত্রলীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, গ্রীষ্মকালীন ও ঈদুল আজহার ছুটির পর আবাসিক হলগুলোতে ৩০ থেকে ৫০টি সিট ফাঁকা হয়েছে। সিটগুলোর অধিকাংশ দখলে নিয়েছে ছাত্রলীগ। ইতিমধ্যে সিটগুলো মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বিক্রি করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সিটপ্রতি আগের চেয়ে ১ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়ে ৮ থেকে ১২ হাজার টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। ছাত্রলীগ অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা নাগরিক ছাত্র ঐক্যের সভাপতি মেহেদী হাসান মুন্না বলেন, ‘ছাত্রলীগের দখলদারির কারণে শিক্ষার্থীরা যেমন তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি হল প্রশাসনও রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। হল প্রাধ্যক্ষরা কোনো সুবিধা না পেলে কেন ছাত্রলীগের সঙ্গে সমঝোতা করেন? এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রশাসনকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। বেদখল সিটগুলো উদ্ধার করতে হবে।’
তবে প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক হাসনা হেনা বেদখল সিট উদ্ধারে অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘যে দলই ক্ষমতাই আসে, তাদের ছাত্র সংগঠন কিছু সিট দখল করে রাখে। আমরা প্রশাসনের সহায়তায় সিটগুলো তাদের দখল থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করি, কিন্তু পারি না।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, ‘ছাত্রনেতা হিসেবে অনেক দরিদ্র ও অসহায় শিক্ষার্থী হলে ওঠার জন্য আমাদের কাছে আসে। আমরা তাদের হলে তুলতে সহায়তা করি। এ ক্ষেত্রে তাদের আবাসিকতার জন্য আমরা হল প্রাধ্যক্ষকে অনুরোধ করি। আমার জানা মতে, কোনো ছাত্রলীগ নেতা টাকার বিনিময়ে সিট বিক্রি করেন না। এমন অভিযোগের সত্যতা পেলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য সুলতান-উল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হলগুলোতে ছাত্রলীগের আধিপত্যের বিষয়টি আমরা অবগত রয়েছি। তবে যেহেতু বিষয়টি বহুদিনের চর্চার ফসল, সেহেতু এটি কমাতেও আমাদের সময়ের প্রয়োজন। এর মানে এই না যে এটি যত দিন ধরে চলে আসছে, ঠিক তত দিন সময় নেব। এরই মধ্যে আমরা হল প্রাধ্যক্ষদের ডেকে কথা বলেছি। তাদের কাজে যারা বাধার সৃষ্টি করে, তাদের চিহ্নিত করতে বলেছি। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আশা করছি, আমরা ধীরে ধীরে এই সমস্যা কমাতে পারব।’
‘হলে উঠতে বিভাগের ছাত্রলীগের এক সিনিয়র ভাইয়ের সঙ্গে আলাপ করি। তিনি বলেন এখন টাকা ছাড়া তো হলে ওঠা যায় না। আমি যদি সাত-আট হাজার টাকা দিতে পারি, তাহলে তিনি আমাকে হলে তুলে দিতে পারবেন। তাঁর কথামতো আমি তাঁকে সাত হাজার টাকা দিই। পরে তিনি হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলে আমাকে চার সিটের একটি কক্ষে তোলেন।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষার্থী হলে ওঠার গল্পটা শোনালেন এভাবেই। সম্প্রতি তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলে উঠেছেন ছাত্রলীগের মাধ্যমে। দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীদের হলে উঠতে হলে ছাত্রলীগই ভরসা। ছাত্রলীগ ছাড়া হলে ওঠা যায় না। ছাত্রদের সব হলের দখলদারি নিয়ে এভাবেই রাজার মতো শাসন করে যাচ্ছে ছাত্রলীগ। তাদের কাছে অসহায় সাধারণ শিক্ষার্থী, এমনকি হল প্রশাসনও।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্শ হলের আবাসিক শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম কনক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের হল প্রশাসন নিরুপায়। হল প্রশাসনের মাধ্যমে কাউকে বৈধ সিটে তুলে দিলে দেখা যায়, পরে তাকে হুমকি দিয়ে বের করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি মারধরও করা হয়। হল প্রশাসন এ নিয়ে কথা বলতে গেলে বিভিন্ন সময় শিক্ষকেরা লাঞ্ছনার শিকার হন। ফলে যে অল্পসংখ্যক সিট রয়েছে, সেগুলোও সুষ্ঠুভাবে বণ্টন করা সম্ভব হচ্ছে না।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানাচ্ছে, আবাসিক হলের সব বিষয়ের হর্তাকর্তা হলেন প্রাধ্যক্ষ। তবে রাবির হলগুলোতে ছাত্রলীগের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছেন হল প্রাধ্যক্ষরা। হলে সিট খালি হওয়ার আগেই তা হাতিয়ে নিচ্ছে ছাত্রলীগ। পরে এসব সিটে টাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের উঠিয়ে হল প্রাধ্যক্ষের কাছ থেকে জোর করে আবাসিকতা নেওয়া হচ্ছে। ফলে আবাসিকতার গণবিজ্ঞপ্তি দিলেও সিট অনুযায়ী শিক্ষার্থী তুলতে পারে না হল প্রশাসন।
রাবির ১১টি ছাত্র হল প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের শুরুতে শহীদ জিয়াউর রহমান হলে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ১৯২ জনের আবাসিকতা দেওয়া হয়। প্রাধ্যক্ষের দাবি, তিনিই সবাইকে হলে তুলেছেন। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে হল প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, বরাদ্দপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীর এক-চতুর্থাংশ শিক্ষার্থীকেও হলে তুলতে পারেনি প্রশাসন। শাহ মখদুম হলে গত বছরের নভেম্বরে সর্বশেষ আবাসিকতার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। তবে কতজনকে হলে ওঠানো হয়েছে, তা জানায়নি প্রশাসন। নবাব আব্দুল লতিফ হলেও গত বছর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এর মাধ্যমে ১২১ জনকে হলের আবাসিকতা দেওয়া হয়। মাদার বখ্শ হলে গত বছরের আগস্টে সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তখন ১৭০টি ফাঁকা আসনের মধ্যে ১৫০ জন শিক্ষার্থীকে হলে তুলেছেন প্রাধ্যক্ষ।
সৈয়দ আমীর আলী হলে সর্বশেষ গত বছরের মার্চে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে মাত্র ৮৫ জন শিক্ষার্থীকে হলে তোলা হয়েছে। শহীদ শামসুজ্জোহা হলে ৫০-৬০টি সিট খালি থাকা সাপেক্ষে গত মে মাসে আবাসিকতার গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এখনো সে প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। শহীদ হবিবুর রহমান হলে সর্বশেষ কবে আবাসিকতার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল, তা জানাতে পারেনি হল প্রশাসন।
মতিহার হলে সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় গত বছরের ১ জানুয়ারি। তবে এই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কতজনকে আবাসিকতা দেওয়া হয়েছে, সে তথ্য জানাতে পারেনি হল প্রশাসন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয় পাঁচ মাস আগে। কিন্তু ছাত্রলীগের প্রভাবের কারণে এখনো কাউকে সিটে তোলা সম্ভব হয়নি। শেরেবাংলা হলে সর্বশেষ গত বছরের নভেম্বর মাসে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। তখন ৭৫ জন শিক্ষার্থীকে হলে তুলতে সক্ষম হন হল প্রাধ্যক্ষ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে কোনো বিজ্ঞপ্তিই দেওয়া হয় না। এই হলে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি, সম্পাদকসহ নেতা-কর্মীরা। সভাপতি-সম্পাদকের এখন ছাত্রত্বই নেই। তাঁরা নিজেরাই আছেন অবৈধভাবে। তাঁদের সঙ্গে অবৈধভাবে আছেন ছাত্রলীগের আরও অনেকে।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল্লাহ হিল গালিব থাকেন মাদার বখ্শ হলের ২১৫ নম্বর কক্ষে। তিনি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। এখানে ড্রপ আউট হয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স করেছেন। এরপর রাবির সাংবাদিকতা বিভাগের সান্ধ্যকালীন কোর্সে ভর্তি হয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী, সান্ধ্যকালীন কোর্সের শিক্ষার্থীরা হলে থাকতে পারেন না। গালিবের নামে আবাসিকতা না থাকলেও তিনি হলে থাকেন। যোগাযোগ করা হলে ছাত্রলীগের এই নেতা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শুধু আমি না, অনেকেই হলে অবৈধভাবে থাকেন। সবার বিষয়ে খোঁজ নেন।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১১টি হলের কোনোটিই শতভাগ আবাসিক নয়। অনেক শিক্ষার্থীই রাজনৈতিক সুবিধা কাজে লাগিয়ে আবাসিকতা ছাড়াই সিট দখল করে হলে অবস্থান করছেন। এ ছাড়া এক হলের আবাসিক শিক্ষার্থী হয়ে অন্য হলে অবস্থান করার প্রবণতাও দেখা গেছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ হাজার ৯৬৯ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে ১১টি হলে মোট আসন রয়েছে ৫ হাজার ৩৮৩টি। এর মধ্যে মাদার বখ্শ হলে ৫৮৪টি সিটের মধ্যে ৮৪টি অনাবাসিক, নবাব আব্দুল লতিফ হলে ৩২৩ সিটের ৪৩টি অনাবাসিক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে ৬০০ আসনের ১৩৭টি অনাবাসিক, শহীদ শামসুজ্জোহা হলে ৪০৬টি আসনের বিপরীতে ৪১টি অনাবাসিক। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল প্রশাসনের দেওয়া তথ্যমতে, ৩৬৪ সিটের বিপরীতে আবাসিক রয়েছে ৩৫০ জন। তবে এখানেই সবচেয়ে বেশি অনাবাসিক শিক্ষার্থী থাকেন বলে জানা গেছে। হলগুলোতে পাঁচ শতাধিক সিট বেদখল রয়েছে। তাতে মাসে ১০০ টাকা হিসাবে বছরে প্রায় ৬ লাখ টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আবার সাধারণ শিক্ষার্থীরা সিটও পাচ্ছেন না।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আমার হলে বর্তমানে ১৩৭টি আসনে আবাসিক ছাত্র নেই। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমি আবাসিকতার গণবিজ্ঞপ্তিও দিয়েছিলাম। কিন্তু এসব আসনের অধিকাংশই দখল করে আছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। ফলে প্রায় পাঁচ মাস আগে ছাত্রদের ভাইভা নিলেও তাদের সিট দিতে পারিনি। এমনকি প্রতিবন্ধী ছাত্রদের সংরক্ষিত আসনও অবৈধভাবে দখলে রাখা হয়েছে। ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগের কাছে আমরা হল প্রশাসন যেন জিম্মি হয়ে রয়েছি।’
বিভিন্ন হলে থাকা শিক্ষার্থীরা জানান, প্রায়ই হলের প্রতিটি কক্ষে গিয়ে শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহ করেন হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এরপর হলে অবস্থানরত মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের বিছানার নিচে একটি করে ভর্তি বস্তা রেখে আসা হয়। মাস্টার্সের পরীক্ষা শেষ হলেই ওই শিক্ষার্থীকে নানাভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়। একপর্যায়ে ওই শিক্ষার্থী হল ছাড়তে বাধ্য হন। এরপর সিটটি চলে যায় ছাত্রলীগের দখলে। যেখানে তারা নিজেদের কর্মী কিংবা টাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের তোলেন। কিছুদিন পর ওই শিক্ষার্থীর আবাসিকতার জন্য হল প্রাধ্যক্ষের কাছে সুপারিশ করে ছাত্রলীগ। তখন এসব শিক্ষার্থীকে আবাসিকতা দিতে বাধ্য হন হলের প্রাধ্যক্ষরা।
ছাত্রলীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, গ্রীষ্মকালীন ও ঈদুল আজহার ছুটির পর আবাসিক হলগুলোতে ৩০ থেকে ৫০টি সিট ফাঁকা হয়েছে। সিটগুলোর অধিকাংশ দখলে নিয়েছে ছাত্রলীগ। ইতিমধ্যে সিটগুলো মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বিক্রি করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সিটপ্রতি আগের চেয়ে ১ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়ে ৮ থেকে ১২ হাজার টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। ছাত্রলীগ অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা নাগরিক ছাত্র ঐক্যের সভাপতি মেহেদী হাসান মুন্না বলেন, ‘ছাত্রলীগের দখলদারির কারণে শিক্ষার্থীরা যেমন তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি হল প্রশাসনও রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। হল প্রাধ্যক্ষরা কোনো সুবিধা না পেলে কেন ছাত্রলীগের সঙ্গে সমঝোতা করেন? এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রশাসনকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। বেদখল সিটগুলো উদ্ধার করতে হবে।’
তবে প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক হাসনা হেনা বেদখল সিট উদ্ধারে অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘যে দলই ক্ষমতাই আসে, তাদের ছাত্র সংগঠন কিছু সিট দখল করে রাখে। আমরা প্রশাসনের সহায়তায় সিটগুলো তাদের দখল থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করি, কিন্তু পারি না।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, ‘ছাত্রনেতা হিসেবে অনেক দরিদ্র ও অসহায় শিক্ষার্থী হলে ওঠার জন্য আমাদের কাছে আসে। আমরা তাদের হলে তুলতে সহায়তা করি। এ ক্ষেত্রে তাদের আবাসিকতার জন্য আমরা হল প্রাধ্যক্ষকে অনুরোধ করি। আমার জানা মতে, কোনো ছাত্রলীগ নেতা টাকার বিনিময়ে সিট বিক্রি করেন না। এমন অভিযোগের সত্যতা পেলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য সুলতান-উল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হলগুলোতে ছাত্রলীগের আধিপত্যের বিষয়টি আমরা অবগত রয়েছি। তবে যেহেতু বিষয়টি বহুদিনের চর্চার ফসল, সেহেতু এটি কমাতেও আমাদের সময়ের প্রয়োজন। এর মানে এই না যে এটি যত দিন ধরে চলে আসছে, ঠিক তত দিন সময় নেব। এরই মধ্যে আমরা হল প্রাধ্যক্ষদের ডেকে কথা বলেছি। তাদের কাজে যারা বাধার সৃষ্টি করে, তাদের চিহ্নিত করতে বলেছি। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আশা করছি, আমরা ধীরে ধীরে এই সমস্যা কমাতে পারব।’
রাজধানীর বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপসসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী এক ব্যক্তি। ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণের কথা মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
১ ঘণ্টা আগেযশোর টেকনিক্যাল অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কলেজকে পারিবারিক প্রতিষ্ঠান বানিয়ে নজিরবিহীন অনিয়ম-দুর্নীতি করার অভিযোগ উঠেছে অধ্যক্ষ জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে। ১৪ বছর ধরে কর্মস্থলে না গিয়ে একই সঙ্গে দুটি প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হিসেবে বেতন ভাতা উত্তোলন করেছেন। স্ত্রীকে হিসাব সহকারী পদে নিয়োগ দিয়ে প্রায় ১৪ বছর ধরে
২ ঘণ্টা আগে২ মার্চকে ‘জাতীয় পতাকা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ২ মার্চ পতাকা দিবস ঘোষণার দাবিতে ‘হৃদয়ে পতাকা ২ মার্চ’ আয়োজিত প্রতিবাদী সমাবেশে তিনি এই আহ্বা
২ ঘণ্টা আগেদেশের বিশিষ্ট সম্পাদক এবং প্রবীণ সাংবাদিক নূরুল কবীর সম্প্রতি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছে অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রেস উইং।
৩ ঘণ্টা আগে