স্কুল–কলেজ বন্ধ, খেতে মজুর খাটছে শিক্ষার্থীরা

রাশেদুজ্জামান বাবু
প্রকাশ : ২২ মে ২০২১, ১৫: ২৭
আপডেট : ২২ মে ২০২১, ১৮: ২৩

বোদা (পঞ্চগড়): দীর্ঘ সময় করোনা মহামারিতে এক বছরের বেশি সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। শিকেই উঠেছে লেখাপড়া। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। এতে বিপাকে পড়েছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের পরিবারগুলো। সেসব পরিবারের স্কুল–কলেজ পড়ুয়া ছেলে–মেয়েরা এখন খেত–খামারে কাজ করছে। এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকে ঝরে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন শিক্ষকরা।

এখন বোরো কাটা–মাড়াইসহ বিভিন্ন ফসল তোলার সময়। সকাল থেকে প্রখর রোদের মধ্যে, কখনো বৃষ্টি উপেক্ষা করে তারা ধান কাটা, মরিচ, বাদাম তোলার কাজ করছে। এরা পঞ্চম শ্রেণি থেকে কলেজপড়ুয়া ছেলে–মেয়ে। প্রতিদিন ছেলেরা দল বেঁধে ধান কাটছে বিঘাচুক্তিতে। প্রতি বিঘা জমির ধান কাটা, বাদাম তোলা তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা করে নিচ্ছে তারা। আবার কড়া রোদে পুড়ে অনেকে তুলছে মরিচ, প্রতি কেজি সাত থেকে ১০ টাকা চুক্তিতে।

এ চিত্র পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার সর্বত্র। আজ শনিবার সকালে ঝলইশালসিঁড়ি ইউনিয়নের কামারহাট এলাকায় লক্ষ্মীদ্বার গ্রামের একটি ধান খেতে কথা হয় কয়েকজন স্কুলপড়ুয়ার সঙ্গে। সেখানে ছিল নবম শ্রেণি পড়ুয়া শুভ, অন্তর, সপ্তাম শ্রেণির তীর্থ, জয় এবং ৬ষ্ঠ শ্রেণির উৎপল ও ধরণী। তারা বলে, স্কুল বন্ধ, লেখাপড়া নাই, ঘরত বসে থাকিবা মনায় না। আর বাইত খেলা, গানবাজনা, অনুষ্ঠান নাই। এক্কেরে ভালো লাগে না। তাই হামরা এলা ধান কাটেছি। প্রতিদিন কাজ করে ৫০০ আর কোনো দিন ৬০০ টাকা হয়। এ দিয়ে হামরা বাজারত খাই, প্রাইভেট পড়ি আর টাকা থাকিলে বাবাক দেঁও।

কথা হয় অন্তরের মা আলেয়া বেগমের সাথে। তিনি বলেন, বাড়িত পড়াটরা করে না। সারাদিন টিলংটিলং (উদ্দেশ্যহীন ঘুরে বেড়ানো) করে বেরাছে। তাই ওক নিয়ে আইচু হামার সাথে কাজ করতে।

বোদা সরকারি মডেল পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক জামিউল হক বলেন, স্কুল বন্ধ থাকায় আমরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছি। অনেকে করোনায় স্কুল বন্ধ থাকায় খেত–খামার, হোটেল–রেস্তোরাঁ, দোকানপাটে কাজ করছে। নতুন করে এদের স্কুল আনা কঠিন হয়ে পড়বে।

প্রখর রোদের মধ্যে কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে রাস্তায় ছায়ায় বসে ঝিরোচ্ছে একদল শিশু কৃষিশ্রমিক। ছবি: আজকের পত্রিকা

একই আশঙ্কার কথা জানান বোদা পাইলট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক রবিউল আলম সাবুল। তিনি বলেন, আমরা পড়েছি চরম অসুবিধায়। স্কুল বন্ধ থাকায় অনেকে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছে। অনেকে বাসাবাড়ি, খেতে–খামারে কাজ করছে। আবার অনেকে বসেছে বিয়ের পিঁড়িতে। শহরের স্কুলগুলোরই যখন এই অবস্থা, তাহলে গ্রামের স্কুলগুলোর অবস্থা আরো খারাপ তা তো বলাই বাহুল্য।

এদিকে এতো কম বয়সে গ্রীষ্মের দাবদাহের মধ্যে খেতে–খামারে কাজ করলে স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে বলে জানিয়েছেন বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. জাহিদ হাসান। তিনি বলেন, এই বয়সে ছেলে–মেয়েরা খেত–খামারে কাজ করলে স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। কাচি, দা, হাসুয়া নরম হাতে শক্ত কিছু ধরে কাজ করলে হাতের তালু শক্ত হয়ে কড়া পড়ে। আবার প্রখর রোদের কারণে চামড়া পুড়ে যায়। ভারী কিছু বহন বা উত্তোলন করলে মেরুদণ্ডের স্থায়ী ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। আর যারা এই রোদের মধ্যে মরিচ তোলে তাদের ত্বক খুব তাড়াতাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিছুদিনের মধ্যে ত্বকে প্রদাহ শুরু হতে পারে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

শেখ হাসিনাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে এম সাখাওয়াতের বিস্ফোরক মন্তব্য, কী বলেছেন এই উপদেষ্টা

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, আহত ৩

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত