সমন্বয়হীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভা বর্জন করেছেন ছয়জন ইউপি চেয়ারম্যান। নিজেদের মধ্যে যেসব ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তার সমাধান করা হবে বলে জানান উপজেলা চেয়ারম্যান।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স সভাকক্ষে উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় অনুপস্থিত ছিলেন ইউপি চেয়ারম্যানেরা। 

সমন্বয় সভা বর্জনকারীরা হলেন উপজেলার আংগারপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা আহমেদ শাহ, আলোকঝাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান, গোয়ালডিহি ইউপি চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন লিটন, ভাবকী ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল আলম তুহিন, খামারপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক চৌধুরী ও ভেড়ভেড়ী ইউপি চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম বাবুল। 

এদিকে এই সভায় অনুপস্থিত ছিলেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এ টি এম সুজাউদ্দিন শাহ লুহিন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আফরোজা পারভীন। তবে তাঁরা ব্যক্তিগত অসুবিধার জন্য সভায় উপস্থিত থাকতে পারেননি বলে জানান। 

জানতে চাইলে উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আফরোজা পারভীন বলেন, ‘ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত থাকায় উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় উপস্থিত থাকতে পারিনি।’ 

সভা বর্জন নিয়ে কথা হয় ইউপি চেয়ারম্যানদের সঙ্গে। তাঁরা আজকের পত্রিকাকে জানান, সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নকাজের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু বিগত কয়েক মাস ধরে সেটি ছাড়াই উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসন এককভাবে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। 

এরই মাঝে ইউনিয়ন পরিষদের মতামত ও ভিডব্লিউবি ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের স্বাক্ষর ছাড়াই ইউএনও, উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা ও ইউপি সচিব খানসামা উপজেলায় ভিডব্লিউবি কর্মসূচির ২ হাজার ৬৫৯ জনের নামের তালিকা চূড়ান্ত করে। এই তালিকা সংশোধন করার দাবিতে গত ১০ জানুয়ারি দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাকে চার ঘণ্টা অবরুদ্ধ করেন ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা। পরে ওসি চিত্তরঞ্জন রায়ের হস্তক্ষেপে দুই পক্ষের মধ্যে বৈঠকের সিদ্ধান্ত হওয়ায় অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করে উদ্ভূত পরিস্থিতির সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত মাসিক সভাসহ উপজেলা প্রশাসনের সব কাজ বর্জনের ঘোষণা দেন ভাবকী ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল আলম তুহিন। 

বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স সভাকক্ষে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভা সকাল ১০টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ১১টায় শুরু হয়। উপজেলা চেয়ারম্যান সফিউল আযম চৌধুরী লায়নের সভাপতিত্বে এবং ইউএনও রাশিদা আক্তারের সঞ্চালনায় দুপুর ১টার দিকে সভাটি শেষ হয়। 

এ নিয়ে উপজেলা ইউপি চেয়ারম্যান ফোরাম ও আংগারপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা শাহ বলেন, ‘বিভিন্ন কাজে ইউনিয়ন পরিষদের সঙ্গে সমন্বয় না করা এবং পরিপত্র অনুযায়ী ভিডব্লিউবি তালিকা তৈরি না করায় উপজেলা পরিষদের মাসিক সভা বর্জন করেছি। আমাদের দাবি পূরণ না হলে পরে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন উপজেলার ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা।’ 

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাশিদা আক্তার বলেন, ‘অনলাইনের মাধ্যমেই ভিডব্লিউবি বা ভিজিডি তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। সমন্বয়হীনতার অভিযোগ সত্য নয়।’ 

উপজেলা চেয়ারম্যান সফিউল আযম চৌধুরী লায়ন বলেন, ‘জনপ্রতিনিধিদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া দরকার। মাসিক সভায় ইউপি চেয়ারম্যানদের অনুপস্থিতি অনভিপ্রেত। নিজেদের মধ্যে যেগুলো ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে, সেগুলো আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে। তাই দায়িত্বশীল হয়ে সভা বর্জন না করে সহনশীল থেকে আগামী মাসিক সভায় তাঁরা উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করছি।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘ভিডব্লিউবি কর্মসূচির তালিকা অনলাইনের মাধ্যমেই চূড়ান্ত হয়েছে। এখানে আমাদের কোনো হাত নেই।’