ভূঞাপুরে বালুমহাল দখল নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। গত বৃহস্পতিবার ভূঞাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে এ মামলা করেন। এতে ৫৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত নামে আরও ৭০০ থেকে ৮০০ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়।

এদিকে মামলার পর থেকে নিকরাইল ইউনিয়নের সিরাজকান্দি, পুনর্বাসন, ল্যাঙ্গড়াবাজার, পলশিয়া, সারপলশিয়াসহ আটটি গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে গ্রেপ্তার আতঙ্ক বিরাজ করছে। এসব এলাকায় দিনের বেলায় লোকজনের দেখা মিললেও রাতে বাড়িতে থাকছেন না কেউ। গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন আট গ্রামের পুরুষ সদস্যরা। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরে আলম মন্ডলকে ১ নম্বর, অপর ইউপি সদস্য আব্দুল করিমকে ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার ভূঞাপুর উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়নের বাগানবাড়ি এলাকায় বালুমহাল দখল করতে যায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুহাম্মদ আব্দুল মতিন সরকার ও তাঁর লোকজন। খবর পেয়ে বাধা দিতে আসেন বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক মাসুদুল হক মাসুদের সমর্থকেরা। এ সময় পুলিশের উপস্থিতিতেই সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। এতে প্রতিপক্ষকে প্রতিহত করতে চার রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হন। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সাত রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিরাজকান্দি বাজার এলাকার বেশ কয়েকজন বলেন, ‘আগে শুষ্ক মৌসুমে চর জেগে উঠলে তাঁরা সেখানে আবাদ করতেন। এখন আর করা যায় না। এখন বালু ব্যবসায়ীরা জেগে ওঠা চর কেটে বিক্রি করছেন। প্রভাবশালীদের ভয়ে তাঁরা কিছু বলতে পারেন না। বালুঘাট দখল নিতে জনপ্রতিনিধিরাসহ এখানকার বড় বড় নেতারা মাঝে মধ্যেই মারামারিতে জড়ান। এ ছাড়া সারা দিন ট্রাক চলাচল করায় তাঁদের রাস্তাঘাট সব নষ্ট হয়ে যায়।

মামলার বাদী ভূঞাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলাম বলেন, সরকারি কাজে বাধা, নাশকতা, ভাঙচুর ও জনমনে আতঙ্ক ছড়ানোর অভিযোগে একটি মামলা করা হয়েছে। আশা করি, দ্রুত ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আব্দুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। অভিযুক্তরা এলাকা থেকে পালিয়েছেন। তা ছাড়া সার্বিক পরিস্থিতি এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। আসামিদের ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। আশা করছি, দ্রুত আসামিদের আইনের আওতায় আনতে পারব।’

ভূঞাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল ওহাব জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দুই পক্ষের ৫৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত নামে ৮০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। সংঘর্ষের সময় গোলাগুলির কোনো ঘটনা ঘটেছে কি না, সেটা তদন্ত হচ্ছে। সংঘর্ষের সময়ের ভিডিও দেখে আসামি শনাক্ত করে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা দেওয়া হবে। এ ঘটনায় বালুঘাট ও আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।