‘আবাসিকতার কাহিনি বাদ, যা বলব তাই হবে’, ছাত্রলীগকর্মীর হুমকি

ইবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০২ এপ্রিল ২০২৩, ০০: ৩১
আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০২৩, ১১: ১৯

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) হলের কক্ষ থেকে এক আবাসিক শিক্ষার্থীকে জোরপূর্বক বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের চার কর্মীর বিরুদ্ধে। গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলে এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম মাহাদী হাসান। তিনি ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। শনিবার (১ এপ্রিল) চার ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে হল প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীরা হলেন পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের সিদ্দিক, বাংলা বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের তরুণ, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ফাহিম ফয়সাল ও বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের রাজু। তাঁরা চারজনই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কর্মী ও সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়ের অনুসারী বলে জানা গেছে।

লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী মাহাদী হাসান জানান, তিনি আবাসিকতাপ্রাপ্ত কক্ষে বিগত কিছুদিন যাবৎ অবস্থান করছিলেন। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি বাইরে ছিলেন। ফোনে তাঁকে হলে ফিরতে বলেন ছাত্রলীগের কর্মী সিদ্দিক, তরুণ, ফাহিম ও রাজু। হলে গিয়ে দেখেন তাঁর বই, খাতা, তোশক, বালিশ কক্ষের বাইরে করিডরে পড়ে আছে। তখন তাঁকে ৪২৭ নম্বর কক্ষে যেতে বলা হয়। সেখানে আগে থেকেই সিদ্দিক, তরুণ, ফাহিম, রাজুসহ আরও কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী মাহাদী জানান, তিনি ওই কক্ষে যাওয়ার পর ফাহিম তাঁকে বলেন, ‘তুই কোন কক্ষে থাকিস?’ মাহাদী বলেন, ‘৪২৮ আমার আবাসিক কক্ষ। আমি ওই কক্ষেই থাকি।’ তখন ফাহিম বলেন, ‘আগে কোথায় ছিলি?’ মাহাদী বলেন, ‘৩০৮ নম্বরে মেহেদী হাসান তানভীরের অতিথি হিসেবে ছিলাম। এখন আমার কক্ষ ৪২৮ বরাদ্দ হইছে। আমি এখানেই থাকি।’ তখন রাজু ধমক দিয়ে বলেন, ‘তুই কে? তোকে আগে কখনো হলে দেখিনি তো। কে তোরে হলে তুলছে? আর ওই সব আবাসিকতার কাহিনি বাদ দে। আমরা যা বলব হলে তাই হবে।’ এই পর্যায়ে তরুণ বলেন, ‘আমারে চিনিস তুই? এখনো ভালোয় ভালোয় ৪২৮ থেকে সবকিছু নিয়ে কোথায় যাবি যা। ৩০৮-এ থাকবি নাকি কোথায় থাকবি, আমরা জানি না।’

এ ঘটনার পরে ভুক্তভোগী মাহাদী প্রভোস্ট বরাবর আবাসিক কক্ষে থাকা সুনিশ্চিত করে হয়রানি বন্ধ করার জন্য তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। এ বিষয়ে অভিযুক্ত ফাহিম ফয়সাল বলেন, ‘সমাঝোতার ভিত্তিতে মাহাদিকে ৩০৮ নম্বর রুমেই থাকতে বলি। কিন্তু সে মানেনি বিষয়টা। সে ৪২৮ নম্বর কক্ষে থাকতে চায়। আমরা বলি, এই সিটে যেহেতু একজন উঠছে, সেই ক্ষেত্রে তুমি আগের রুমেই থাকো। অভিযোগে যা বলা হয়েছে, তা সবই মিথ্যা।’

এ বিষয়ে লালন শাহ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ৪২৮ নম্বর কক্ষে আবাসিকতা দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই কক্ষে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের একজন থাকায় সে হল ছেড়ে দিলে সেখানে উঠতে বলা হয়েছিল। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিযোগ পেয়েছি। দুই পক্ষের সাথে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করব।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে কয়েক ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ করেন ফিন্যান্স বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরী খাতুন। তাঁর অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরীর নেতৃত্বে তাঁর অনুসারীরা তাঁর ওপর নির্যাতন চালিয়েছেন। নির্যাতনের সময় তাঁকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ, গালাগাল এবং এ ঘটনা কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় ছাত্রলীগের অভিযুক্ত ব্যক্তিদের এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

শেখ হাসিনাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে এম সাখাওয়াতের বিস্ফোরক মন্তব্য, কী বলেছেন এই উপদেষ্টা

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, আহত ৩

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত