বাড়ি থেকে তুলে নেওয়ার দুই দিন পর সেই ৫ জনকে আটক দেখাল র‍্যাব

কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২২, ১৫: ৪৪
আপডেট : ২৭ আগস্ট ২০২২, ১৮: ৫৭

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে তিন মাদ্রাসা শিক্ষকসহ মোট পাঁচজনকে বাড়ি থেকে তুলে নেওয়ার দুই দিন পর প্রতারণার অভিযোগে আটক দেখাল র‍্যাব। গত বুধবার (২৪ আগস্ট) রাত ১১টা থেকে ১টার মধ্যে উপজেলার যদুবয়রা, পান্টি, বাগুলাট ও জগন্নাথপুর ইউনিয়ন এলাকা থেকে তাঁদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।

আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে আটকের কথা বলেন র‍্যাব-১২ কুষ্টিয়া ক্যাম্পের কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার ইলিয়াস খান। 

স্বল্প সময়ের মধ্যে বেশি লাভের প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে তাঁদের আটক করা হয়েছে বলে জানান র‍্যাব কর্মকর্তা ইলিয়াস খান। সানরাইজ বিজনেস সার্ভিস লিমিটেড (এসবিএসএল) নামে একটি কোম্পানির চেয়ারম্যানসহ আটজনকে আটকের কথা জানিয়েছে র‍্যাব-১২। এর মধ্যে দুদিন আগে তুলে নিয়ে যাওয়া পাঁচজনও রয়েছেন।

আটকরা হলেন— কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বেতবাড়িয়া এলাকার জলিল বিশ্বাসের ছেলে হাসান আলী, মহেন্দ্রপুর এলাকার মৃত আমজাদ হোসেনের ছেলে আব্দুল হান্নান (৪৩), বাঁশগ্রাম এলাকার মৃত লিয়াকত আলীর ছেলে মোস্তফা রাশেদ পান্না (৪৭), মৃত আলাউদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে আইয়ুব আলী (২৮), বহলবাড়িয়া এলাকার মৃত আলতাফ শেখের ছেলে হাফিজুর রহমান (২৮), প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ঝিনাইদহের শৈলকুপা এলাকার মনিরুল ইসলামের ছেলে সাজ্জাদ হোসেন (২৯), কোম্পানির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ঝিনাইদহের মহেশপুর পদ্মপুকুর এলাকার আব্দুল গফুরের ছেলে মহসীন আলী (৩১) ও কোম্পানির ফিন্যান্স ডাইরেক্টর কুষ্টিয়া কুমারখালীর গোবরা এলাকার তোফাজ্জেল হোসেনের ছেলে ইমরান হোসেন (২৮)। 

র‍্যাব বলছে, কুষ্টিয়ার কুমারখালীর সানরাইজ বিজনেস সার্ভিস লিমিটেড (এসবিএসএল) নামে একটি মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানি গ্রাহকদের অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। 

কোম্পানিটির প্রতারণার ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে প্রায় ৩০০ পরিবার। কুষ্টিয়া ছাড়াও ঝিনাইদহ, মাগুরা, যশোর, খুলনা, চুয়াডাঙ্গা, পাবনা, রাজশাহী জেলা পর্যন্ত ওই কোম্পানির প্রতারণার ধাপ বিস্তৃত ছিল। প্রতারণার জন্য নিজস্ব ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপ্লিক্যাশন তৈরি করে গ্রাহকদের বিভিন্নভাবে প্রলুব্ধ করে ১ হাজার ২০০ টাকা দিয়ে কোম্পানির আইডি খুলতে বলা হতো। প্রতিটি আইডি থেকে প্রতিদিন ১০ টাকা ও আইডি বাবদ প্রদানকৃত ১ হাজার ২০০ টাকার সমমূল্যের পণ্য দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হতো। 

শুরুর দিকে কিছু গ্রাহক টাকা ও পণ্য পাওয়ার কারণে অনেকেই আইডি খুলতে উৎসাহিত হয়েছিলেন। একসময় গ্রাহকদের লভ্যাংশের টাকা দিতে ব্যর্থ হয়ে আত্মগোপনে চলে যায় প্রতারক চক্রটি। এ বিষয়ে একজন ভুক্তভোগী গ্রাহক বাদী হয়ে কুমারখালী থানায় ওই কোম্পানির চেয়ারম্যানসহ একাধিক ব্যক্তির নামে মামলা দায়ের করেন। 

এরপর থেকেই প্রতারক চক্রকে গ্রেপ্তারের জন্য র‍্যাব উদ্যোগী হয়ে গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে। এরই জেরে প্রতারক চক্রের অবস্থান জেনে র‍্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার সহযোগিতায় গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টায় কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে প্রথমে পাঁচ প্রতারককে আটক করেছে র‍্যাব। পরে তাঁদের দেওয়া তথ্যমতে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন, কোম্পানির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মহসীন আলী ও কোম্পানির ফিন্যান্স ডাইরেক্টর ইমরান হোসেনকে ঢাকার মিরপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে উক্ত প্রতারণার বিষয়টি স্বীকার করেছেন গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা। 

ইলিয়াস খান বলেন, এসবিএসএল কোম্পানির বিরুদ্ধে কুষ্টিয়ার মিরপুর ও কুমারখালী থানায় দুটি মামলা রয়েছে। এ ছাড়া কোম্পানির চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেনের বিরুদ্ধে দুটি চেক জালিয়াতির মামলা, ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মহসিন আলীর বিরুদ্ধে একটি চেক জালিয়াতি, পাঁচটি স্ট্যাম্প জালিয়াতির মামলা ও ফিন্যান্স ডাইরেক্টর ইমরান হোসেনের বিরুদ্ধে দুটি চেক জালিয়াতির মামলা রয়েছে। আসামিদের কুমারখালী থানার পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত