পঞ্চগড়ে দুজনকে গলা কেটে হত্যার গুজব ছড়িয়ে সড়ক অবরোধ ও মাইক্রোবাস পোড়ানোর ঘটনায় শহরের তেলিপাড়ার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকার দোকানপাট বন্ধ রাখা হয়েছে। আজ রোববার সকালে দোকান খুলতে এলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ওই এলাকার ব্যবসায়ীদের দোকান বন্ধ রাখতে বলেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, কী কারণে এবং কতক্ষণ দোকান বন্ধ রাখতে হবে সেটা পরিষ্কার করে তাঁদের জানানো হয়নি। 

ওই এলাকায় টহলরত অবস্থায় থাকা বিজিবির সদস্য হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় দোকানপাট বন্ধ রাখা হয়েছে। পুনরায় নির্দেশনা দিলে খুলতে বলা হবে। এর বাইরে কিছু জানতে হলে আমাদের স্যারদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।’ 

দুপুর ২টার দিকে তেলিপাড়ার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গেলে দেখা যায় সব দোকানপাট বন্ধ। এ সময় কথা হয় কয়েকজন দোকান মালিকের সঙ্গে। 

ইমন এন্টারপ্রাইজের মালিক আব্দুল খালেক বলেন, ‘আজ সকালে এসে দোকান খুলে বসামাত্র বিজিবির সদস্যরা এসে বন্ধ করতে বলেন। এরপর থেকে দোকান বন্ধ করে বাইরে দাঁড়িয়ে আছি। এভাবে দোকান খুলতে না দিলে চরম ক্ষতি হবে। যদি আবার জ্বালাও পোড়াও শুরু হয়। দুদিকেই ব্যবসায়ীরা বিপদে আছি।’ 

ভাই টেলিকমের মালিক আব্দুর রউফ বলেন, ‘গতকাল গুজব না ছড়ালে এখানে মিছিল বের হতো না। গাড়ি পোড়ানোর ঘটনাও ঘটত না। গতকাল ঘটনাটা শহর ও কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের গ্রামগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। গুজবের কারণে সেটা শহর থেকে দেড়-দুই কিলোমিটার দূরে আসছে।’ 

এদিকে আজ দুপুরে শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে শান্তি সমাবেশ করেছে জেলা ছাত্রলীগ। সমাবেশে গুজব ছড়ানো ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় দাবি জানান ছাত্রলীগ নেতারা। 

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাৎ সম্রাট আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গুজবের বিষয়ে মসজিদের মাইকে ব্যবসায়ী ও বাজারে আসা লোকজনকে জানানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে। আশা করা যায়, আর কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না।’  

আজ দুপুরের পর পঞ্চগড় সদর থানার পুলিশ কর্মকর্তা কাইয়ুম আলী বলেন, ‘বিচ্ছিন্ন সব ঘটনার কিছু মামলা হয়েছে। কিছু ঘটনার মামলার কাজ চলছে। এ পর্যন্ত ১৯ জনকে আটক করা হয়েছে। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ নিয়ে মিটিং করছেন। মিটিং শেষ হলে আনুষ্ঠানিকভাবে সব জানানা হবে।’ 

এর আগে শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে আহমেদনগরে আহমেদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন দুজনকে হত্যা করেছে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ে পঞ্চগড় শহরে। এরপর দোকানপাট বন্ধ করে লোকজন দিগ্‌বিদিক ছুটতে থাকে। কিছু যুবক হোটেলের রান্নার জ্বালানি কাঠ নিয়ে দলবদ্ধ হয়ে সড়কের মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। তাঁরা ধাক্কামারা মোড়ে ঢাকা-পঞ্চগড় সড়ক অবরোধ করেন। পরে পুলিশ ছত্রভঙ্গ করে দিলে সেখান থেকে দুই কিলোমিটার দূরে কেন্দ্রীয় ট্রাক টার্মিনালের সামনে গিয়ে তাঁরা জড়ো হয়। এ সময় কয়েক শ ক্ষুব্ধ মানুষ একটি মাইক্রোবাসে আগুন দেয়। এই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১৯ জনকে আটক করেছে পঞ্চগড় থানা-পুলিশ। এ ছাড়া শহরের কদমতলা এলাকার একটি জুতার দোকানে লুটপাটের ঘটনাও ঘটে। 

উল্লেখ্য, আহম্মদনগর এলাকায় তিন দিনব্যাপী আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সালানা জলসার আয়োজন করা হয়। এই জলসা বন্ধের দাবিতে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের পঞ্চগড় শাখা, সম্মিলিত খতমে নবুয়ত সংরক্ষণ পরিষদ, ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি, ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ সমিতি, পঞ্চগড় কওমি ওলামা পরিষদ ও জাতীয় ওলামা-মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের নেতা-কর্মীরা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেয়। এরপর শুক্রবার বিক্ষোভ মিছিল করেন ইসলামি আন্দোলনসহ ধর্মভিত্তিক কয়েকটি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এ সময় মিছিলে বাধা দেওয়ায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশ, সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক আহত হন। তবে পঞ্চগড় সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন রোববার সকালে ভর্তি থাকা আহতরা চিকিৎসা নিয়ে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে গেছেন।