মিনহাজ তুহিন
জন্ম থেকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শরিফুল ইসলাম। স্বাভাবিক কাজকর্মই যেখানে অন্যের সাহায্য ছাড়া করতে পারেন না, সেখানে পড়াশোনা করা যে আকাশ-কুসুম কল্পনা, সেটা জানতেন তিনি। তবু হাল ছাড়েননি শরিফ। নিজের ইচ্ছায় ভর্তি হন বিদ্যালয়ে। স্কুলে আসা-যাওয়া দেখে সমাজের লোকজন তো বটেই, পরিবারের লোকজনও টিপ্পনী কাটত। তবে সবকিছুকে পাশ কাটিয়ে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের পড়াশোনার পাট চুকিয়ে এখন উচ্চশিক্ষার শেষ প্রান্তে শরিফ।
শরিফের বাড়ি গাইবান্ধা জেলার সদর থানায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতক পর্যায়ের লেখাপড়া শেষ করেছেন তিনি। বর্তমানে স্নাতকোত্তরে পড়ছেন। পড়াশোনা শেষ করে পরিবারের বোঝা না হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টাও করছেন তিনি। সে জন্য শিক্ষার্থীদের জন্য খাতা বানিয়ে বিক্রি করছেন তিনি। এগুলো তিনি নিজের গ্রামের বাড়ি ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্রি করছেন। তাঁর এই উদ্যোগ বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। শরিফের স্বপ্ন, একদিন বৃহৎ পরিসরে খাতার কারখানা করবেন।
যেভাবে শুরু
চলতি বছরের মার্চ মাসে ১ হাজার ৫০০ টাকা পুঁজি নিয়ে শরিফ খাতা বানানোর কাজ শুরু করেন। ৪৪০ টাকায় ১ রিম কাগজ কিনে প্রথমে ২৫টি খাতা তৈরি করেন তিনি। এরপর খাতাগুলো গ্রামের বিভিন্ন দোকানে সরবরাহ করেন। সেখানে কিছুটা সাড়া পেয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ২০টি খাতা নিয়ে আসেন ক্যাম্পাসে। প্রাথমিকভাবে বন্ধু-বান্ধবের কাছে বিক্রি করেন সে খাতাগুলো। ভালোই সাড়া পান। এরপর ধীরে ধীরে খাতার সংখ্যা বাড়াতে থাকেন। সবশেষ গত জুলাই মাসে শরিফ ক্যাম্পাসে বিক্রি করেছেন ২৫০টি খাতা!
খাতা তৈরি করা হয় যেভাবে
শরিফ খাতা তৈরির পুরো প্রক্রিয়াটা গ্রামের বাড়িতে সম্পন্ন করেন। খাতা বানানোর কাজে পরিবারের সদস্যরা তাঁকে সাহায্য করেন। প্রথমে তিনি দোকান থেকে কভার পেজ বানিয়ে আনেন। এরপর ভাড়া করেন কাটিং মেশিন। পরে পরিবারের সবাই মিলে খাতা তৈরি করে সেগুলোকে কুরিয়ারে পাঠিয়ে দেন ক্যাম্পাসে।
খাতার নাম পদ্মা সেতু
শরিফ তাঁর তৈরি করা খাতার নাম দিয়েছেন পদ্মা সেতু। কী কারণে, এই নাম দিয়েছেন, তা-ও জানালেন তিনি। শরিফ বলেন, ‘পদ্মা সেতু আমাদের জন্য স্বপ্নের মতো ছিল। এর মাধ্যমে ২১ জেলার মানুষ সুবিধা পাচ্ছে। একইভাবে আমারও একটা স্বপ্ন আছে, যার মাধ্যমে অনেকের উপকার করার ইচ্ছা আছে। এই বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে খাতার নাম দিয়েছি।’
উৎসাহ দিচ্ছেন শিক্ষকেরাও
শরিফের এমন উদ্যোগ ও স্বপ্নকে আশাব্যঞ্জক বলে অভিহিত করেছেন তাঁর বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল হাসান। তিনি বলেন,
‘আমি খুবই খুশি হয়েছি। সে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়েও যে এমন সুন্দর ভাবনা ভাবছে, এ জন্য তাঁকে আমি সাধুবাদ জানাই। এ রকম ভাবনা সবার হওয়া উচিত। সে যেন ভবিষ্যতে বড় কিছু করতে পারে, এ জন্য সবাইকে তাঁর পাশে থাকা উচিত।’
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
শরিফ বলেন, ‘পড়াশোনা শেষ করে আমাকে যেন অন্যের ওপর নির্ভরশীল হতে না হয়, এ জন্য আমি প্রাথমিকভাবে খাতা তৈরি শুরু করেছি। ধীরে ধীরে আমি আমার ব্যবসার পরিসর বড় করব। আমার স্বপ্ন একজন বড় মাপের উদ্যোক্তা হওয়া। বড় করে একটা খাতা তৈরির কারখানা করা আমার ইচ্ছা। এর নাম দেব—শরিফ পেপার হাউস।’
শরিফ মনে করেন, ইচ্ছাশক্তি মানুষকে কর্মে সক্রিয় রাখে। আর এর ওপর ভর করেই মানুষ কখনো কখনো অসাধ্যকেও সাধন করে ফেলে। মূল কথা, ইচ্ছাশক্তিই হলো মানুষের মূল চালিকা শক্তি।
নিজের আক্ষেপ প্রকাশ করে শরিফ বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে মানুষের অনেক অবহেলার শিকার হয়েছি। পরিবারকে অনেক কথা শুনতে হয়েছে আমার জন্য। কারণ, আমার পরিবারে আমিই একমাত্র জন্মান্ধ। আবার আমিই একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছি। অনেকে আমার পরিবারকে বলত, আমাকে দিয়ে নাকি কিছু হবে না। যে ছেলে চোখেই দেখতে পায় না, সে কীভাবে পড়াশোনা করবে? কীভাবে কাজ করবে? তবে আমি দমে যাইনি। আমার যে একজন বড় ব্যবসায়ী হওয়ার স্বপ্ন, সেটা আমি পূরণ করব।’
মিনহাজ তুহিন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
জন্ম থেকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শরিফুল ইসলাম। স্বাভাবিক কাজকর্মই যেখানে অন্যের সাহায্য ছাড়া করতে পারেন না, সেখানে পড়াশোনা করা যে আকাশ-কুসুম কল্পনা, সেটা জানতেন তিনি। তবু হাল ছাড়েননি শরিফ। নিজের ইচ্ছায় ভর্তি হন বিদ্যালয়ে। স্কুলে আসা-যাওয়া দেখে সমাজের লোকজন তো বটেই, পরিবারের লোকজনও টিপ্পনী কাটত। তবে সবকিছুকে পাশ কাটিয়ে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের পড়াশোনার পাট চুকিয়ে এখন উচ্চশিক্ষার শেষ প্রান্তে শরিফ।
শরিফের বাড়ি গাইবান্ধা জেলার সদর থানায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতক পর্যায়ের লেখাপড়া শেষ করেছেন তিনি। বর্তমানে স্নাতকোত্তরে পড়ছেন। পড়াশোনা শেষ করে পরিবারের বোঝা না হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টাও করছেন তিনি। সে জন্য শিক্ষার্থীদের জন্য খাতা বানিয়ে বিক্রি করছেন তিনি। এগুলো তিনি নিজের গ্রামের বাড়ি ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্রি করছেন। তাঁর এই উদ্যোগ বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। শরিফের স্বপ্ন, একদিন বৃহৎ পরিসরে খাতার কারখানা করবেন।
যেভাবে শুরু
চলতি বছরের মার্চ মাসে ১ হাজার ৫০০ টাকা পুঁজি নিয়ে শরিফ খাতা বানানোর কাজ শুরু করেন। ৪৪০ টাকায় ১ রিম কাগজ কিনে প্রথমে ২৫টি খাতা তৈরি করেন তিনি। এরপর খাতাগুলো গ্রামের বিভিন্ন দোকানে সরবরাহ করেন। সেখানে কিছুটা সাড়া পেয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ২০টি খাতা নিয়ে আসেন ক্যাম্পাসে। প্রাথমিকভাবে বন্ধু-বান্ধবের কাছে বিক্রি করেন সে খাতাগুলো। ভালোই সাড়া পান। এরপর ধীরে ধীরে খাতার সংখ্যা বাড়াতে থাকেন। সবশেষ গত জুলাই মাসে শরিফ ক্যাম্পাসে বিক্রি করেছেন ২৫০টি খাতা!
খাতা তৈরি করা হয় যেভাবে
শরিফ খাতা তৈরির পুরো প্রক্রিয়াটা গ্রামের বাড়িতে সম্পন্ন করেন। খাতা বানানোর কাজে পরিবারের সদস্যরা তাঁকে সাহায্য করেন। প্রথমে তিনি দোকান থেকে কভার পেজ বানিয়ে আনেন। এরপর ভাড়া করেন কাটিং মেশিন। পরে পরিবারের সবাই মিলে খাতা তৈরি করে সেগুলোকে কুরিয়ারে পাঠিয়ে দেন ক্যাম্পাসে।
খাতার নাম পদ্মা সেতু
শরিফ তাঁর তৈরি করা খাতার নাম দিয়েছেন পদ্মা সেতু। কী কারণে, এই নাম দিয়েছেন, তা-ও জানালেন তিনি। শরিফ বলেন, ‘পদ্মা সেতু আমাদের জন্য স্বপ্নের মতো ছিল। এর মাধ্যমে ২১ জেলার মানুষ সুবিধা পাচ্ছে। একইভাবে আমারও একটা স্বপ্ন আছে, যার মাধ্যমে অনেকের উপকার করার ইচ্ছা আছে। এই বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে খাতার নাম দিয়েছি।’
উৎসাহ দিচ্ছেন শিক্ষকেরাও
শরিফের এমন উদ্যোগ ও স্বপ্নকে আশাব্যঞ্জক বলে অভিহিত করেছেন তাঁর বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল হাসান। তিনি বলেন,
‘আমি খুবই খুশি হয়েছি। সে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়েও যে এমন সুন্দর ভাবনা ভাবছে, এ জন্য তাঁকে আমি সাধুবাদ জানাই। এ রকম ভাবনা সবার হওয়া উচিত। সে যেন ভবিষ্যতে বড় কিছু করতে পারে, এ জন্য সবাইকে তাঁর পাশে থাকা উচিত।’
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
শরিফ বলেন, ‘পড়াশোনা শেষ করে আমাকে যেন অন্যের ওপর নির্ভরশীল হতে না হয়, এ জন্য আমি প্রাথমিকভাবে খাতা তৈরি শুরু করেছি। ধীরে ধীরে আমি আমার ব্যবসার পরিসর বড় করব। আমার স্বপ্ন একজন বড় মাপের উদ্যোক্তা হওয়া। বড় করে একটা খাতা তৈরির কারখানা করা আমার ইচ্ছা। এর নাম দেব—শরিফ পেপার হাউস।’
শরিফ মনে করেন, ইচ্ছাশক্তি মানুষকে কর্মে সক্রিয় রাখে। আর এর ওপর ভর করেই মানুষ কখনো কখনো অসাধ্যকেও সাধন করে ফেলে। মূল কথা, ইচ্ছাশক্তিই হলো মানুষের মূল চালিকা শক্তি।
নিজের আক্ষেপ প্রকাশ করে শরিফ বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে মানুষের অনেক অবহেলার শিকার হয়েছি। পরিবারকে অনেক কথা শুনতে হয়েছে আমার জন্য। কারণ, আমার পরিবারে আমিই একমাত্র জন্মান্ধ। আবার আমিই একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছি। অনেকে আমার পরিবারকে বলত, আমাকে দিয়ে নাকি কিছু হবে না। যে ছেলে চোখেই দেখতে পায় না, সে কীভাবে পড়াশোনা করবে? কীভাবে কাজ করবে? তবে আমি দমে যাইনি। আমার যে একজন বড় ব্যবসায়ী হওয়ার স্বপ্ন, সেটা আমি পূরণ করব।’
মিনহাজ তুহিন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২০২২ সালের ডিগ্রি পাস ও সার্টিফিকেট কোর্স তৃতীয় বর্ষের সব বিষয়ের পরীক্ষায় ৩০ মিনিট করে সময় বাড়ানো হয়েছে।
১ ঘণ্টা আগে২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) স্নাতক প্রথমবর্ষ ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটির চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
১ ঘণ্টা আগেদেশের প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর অংশ হিসেবে নতুন প্রায় ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিদ্যালয়গুলোয় মিড-ডে মিলে পুষ্টিকর খাবার দেওয়া, বার্ষিক পরীক্ষার মূল্যায়ন চার স্তরে করা, পঞ্চম শ্রেণিতে আবার বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়ারও পরিকল্পনা করা হয়েছে।
৫ ঘণ্টা আগেবিশ্বে প্রতিনিয়ত প্রযুক্তি উন্নতি হচ্ছে। প্রযুক্তির প্রভাব মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে গভীরভাবে প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে শিক্ষাব্যবস্থায় এই পরিবর্তনটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। প্রযুক্তি একদিকে যেমন জীবনকে সহজ করছে অন্যদিকে এটি শিক্ষার ধরন, পদ্ধতি ও কাঠামোর ওপর গভীর প্রভাব ফেলছে।
৫ ঘণ্টা আগে