অনিশ্চয়তায় নতুন প্রযোজকেরা

মীর রাকিব হাসান
প্রকাশ : ১১ মে ২০২১, ১৪: ৫৫

ঢাকা: করোনাভাইরাস মহামারির দীর্ঘ বিরতির পর হল খুললেও লগ্নিকারকেরা আছেন আস্থার সংকটে। প্রত্যাশা ছিল এই বছর ঈদে মুক্তি দেওয়া হবে বড় বাজেটের বেশ কিছু সিনেমা। কিন্তু মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। আর এতেই হতাশ হয়ে পড়ছেন একঝাঁক তরুণ প্রযোজক, যাঁরা গত কয়েক বছরে বাংলা সিনেমায় লগ্নি করে পরিবর্তনের জোয়ার শুরু করেছিলেন। তবে বর্তমান সময়ের বিবেচনায় লগ্নিকৃত টাকা তোলা তো সম্ভবই নয়, বরং লসের খাতা কতটা ভারী হয় দিনকে দিন সেই দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তাঁদের। 

করোনার প্রকট কিছুটা কমলে গত বছর মাসুদ হাসান উজ্জলের ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ সিনেমাটি মুক্তি পায়। উজ্জলের প্রযোজনা সংস্থা রেড অক্টোবরের পাশাপাশি ছবিটি প্রযোজনা করেছেন আসিফ হানিফ। দুজনেই নতুন প্রযোজক। সিনেমা থেকে ব্যবসায়িক সফলতা পাননি। বলা যায় না এই প্রযোজকেরা নতুন করে সিনেমা নির্মাণের চিন্তা করবেন। পরিচালক উজ্জল বলেন, ‘আমি একেবারেই ট্রেন্ডে বিশ্বাসী মানুষ নই। এখন ওটিটির জয়জয়কার। এটা কনটেন্ট ব্যবসার জন্য হয়তোবা সত্য, কিন্তু বড় পর্দার জন্য ছবি বানিয়ে টিভি বা ওটিটিতে চালানো আমার কাছে অনেক বড়সড় মনে হয়! এই কারণেই ছবি হল থেকে নামিয়ে ফেলার এত মাস পরেও ওটিটি বা টেলিভিশনে দিইনি। গত বছর ২৩ অক্টোবর সিনেমা হলে মুক্তি পায় ঊনপঞ্চাশ বাতাস। আমিও সুসময়ের অপেক্ষায় থাকতে পারতাম। কিন্তু দুঃসময়ে কাউকে না কাউকে এগিয়ে তো আসতে হবে, তাই আমি ঝুঁকি নিলাম। দর্শকও উজাড় করে আমাকে প্রতিদান দিলেন। কিন্তু মাত্র ৪০ শতাংশ টিকিট বিক্রি করে দুই মাস ছবি চালালে লগ্নির টাকা কি আর পুরোপুরি ফিরে আসে? তারপরও অপেক্ষায় রইলাম পৃথিবী স্বাভাবিক হলে আবারও ছবি হলে মুক্তি দেব বলে। কিন্তু পরিস্থিতি সহসা বদলাবে না বলেই মনে হচ্ছে! তাই বৃহত্তর দর্শক শ্রেণির কাছে পৌঁছানোর জন্য এবারের ঈদে চ্যানেল আই–এর পর্দায় দেখা যাবে ঊনপঞ্চাশ বাতাস। যেহেতু হলে আপাতত আর দেখাতে পারছি না, তাই টেলিভিশনের মাধ্যমে দর্শকদের দেখাব। এভাবেই কোনো না কোনোভাবে প্রত্যাশা করছি আমার লগ্নির টাকা কিছুটা হলেও যেন ওঠে।’

কয়েক মাস আগে থেকে ঈদে সিনেমা মুক্তির ব্যাপারে বেশ তোড়জোড় দেখা গিয়েছিল চলচ্চিত্র অঙ্গনে। বেশ কিছু প্রযোজনা সংস্থা ঘোষণাও দিয়েছিল তারা ঈদুল ফিতরে সিনেমা মুক্তি দেবে। কিন্তু হঠাৎ করেই কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হওয়ায় ঈদে মুক্তি পাচ্ছে না বড় বাজেটের আলোচিত কোনো সিনেমা।

ঈদ সামনে রেখে নির্মাণ শুরু হয় শাকিব খানের বিগ বাজেটের ছবি ‘অন্তরাত্মা’র। সিনেমাটি মুক্তির জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল। পরিচালক ওয়াজেদ আলী সুমন জানিয়েছেন ঈদে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ‘অন্তরাত্মা’ সিনেমার প্রযোজক সোহানী হোসেন বলেন, ‘আগে মানুষের বেঁচে থাকা, তারপর অন্য কিছু। সে জন্য এই ঈদে সিনেমা মুক্তি দিতেই হবে ভাবছি না। আর এই পরিস্থিতিতে নতুন সিনেমা মুক্তি দেওয়া ঠিক হবে না বলে মনে করি। ভবিষ্যৎ বলে দেবে সিনেমা প্রযোজনা করব কি না। তবে আমি এর আগে ‘স্বত্বা’ সিনেমাটি প্রযোজনা করেছিলাম। যে সিনেমাটিও দীর্ঘদিন আটকে ছিল। শাকিব খানকে নিয়ে বড় বাজেটের ওই সিনেমাটিতে লস হয়েছে কিন্তু জাতীয় পুরস্কারের মতো অনেক পুরস্কার মিলেছে। সিনেমাই আমার একমাত্র আয়ের উৎস না। ভালোবাসি বলে সিনেমা প্রযোজনা করি। খারাপ এই সময়ে তো কারও হাত নেই।’

প্রযোজনা সংস্থা শাপলা মিডিয়ার মুক্তির মিছিলে রয়েছে ‘বিক্ষোভ’ ও ‘বিদ্রোহী’ নামের দুটি সিনেমা। এর মধ্যে ‘বিদ্রোহী’ ঈদে মুক্তি দেওয়ার জন্য প্রযোজক সমিতিতে নিবন্ধনও করেছে। ‘বিক্ষোভ’ও ঈদে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল। কলকাতার শ্রাবন্তী ও বাংলাদেশের শান্ত খান অভিনীত এই চলচ্চিত্রের মুক্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। শাপলা মিডিয়ার কর্ণধার সেলিম খান বলেন, ‘ইচ্ছে ছিল ঈদে মুক্তি দেব। কিন্তু করোনার কারণে সেটা সম্ভব নয়। তবে হলগুলো খুলে দেওয়া হলে শিওর সিনেমা মুক্তি দেব।’

এদিকে মুক্তির প্রহর গুনছে ‘মিশন এক্সট্রিম’, ‘মন দেব মন নেব’, ‘শান’, ‘পরান’, ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘যাও পাখি বলো তারে’, ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ-২’, ‘দিন: দ্য ডে’সহ বেশ কিছু সিনেমা। এর ভেতর কিছু ছবি ২০২০ সাল থেকেই অপেক্ষমাণ। কিন্তু গত বছর মার্চে করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ায় সিনেমাগুলোর মুক্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। সিনেমাগুলোর বেশির ভাগ প্রযোজকই নতুন।

মিশন এক্সট্রিম সিনেমার অন্যতম পরিচালক সানী সানোয়ার জানান, সিনেমাটি গত বছর থেকেই মুক্তির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে মুক্তি দিতে পারেননি। আবার বিগ বাজেটের এই ছবি ভালো পরিবেশ ছাড়া মুক্তি দেওয়া সম্ভব নয়। এতে করে লোকসান গুনতে হতে পারে। ফলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন তাঁরা।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত