হাওরে দেখা মিলল অনিন্দ্য সুন্দর জল ময়ূর

প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার
প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৯: ১৬

মৌলভীবাজারের হাইল হাওরে দেখা মিলেছে জল ময়ূরের। হাওরের পদ্ম বনে এদের বংশ বিস্তারের প্রমাণও পাওয়া গেছে। আজ শুক্রবার একটি জল ময়ূর পরিবারের ছবি ধরা পড়েছে শ্রীমঙ্গলের পাখিপ্রেমী খোকন থৌনাউজামের ক্যামেরায়। 

এক সময় হাইল হাওরে প্রচুর পরিমাণে জল ময়ূর দেখা যেত। কিন্তু হাওর ও হাওরের অধিকাংশ বিল ভরাট হয়ে যাওয়ায় এবং মানব বসতি ও মৎস্য খামারের বিভিন্ন স্থাপনার কারণে হাইল হাওর এখন নিঃশেষের পথে। দৃষ্টিনন্দন জল ময়ূর এক সময় হাইল হাওরের অন্যতম আকর্ষণ ছিল। কিন্তু মৎস্যজীবী ও পাখিপ্রেমীরা অনেক দিন ধরেই এ পাখির পাচ্ছিলেন না। ধরেই নেওয়া হয়েছিল হাইল হাওর থেকে জল ময়ূর হারিয়ে গেছে। 
 
শ্রীমঙ্গল হাইল হাওরে বহুদিন পর দেখা মিলল জল ময়ূরখোকন থৌনাউজাম জানান, হাওরের পদ্ম বনেই জল ময়ূরেরা বসবাস করে। এখানে একসময় এ পাখি প্রচুর পরিমাণে দেখা মিলতো। তাই আশা নিয়ে কয়েক বছর ধরেই নিজের উপজেলার হাওরে এই পাখির অনুসন্ধান করতে থাকেন তিনি। জল ময়ূরের খোঁজে বর্ষা এবং শুষ্ক মৌসুমে হাওরের এপার ওপার পাড়িও দিয়েছেন বহুবার। কিন্তু দেখা মেলেনি। 

হাওরের মৎস্যজীবীদের জল ময়ূরের ছবি দেখিয়ে এ জাতীয় পাখি দেখলেই তাঁকে খবর দেওয়ার অনুরোধ করে রেখেছিলেন। ১৫ দিন আগে হাওরবাসী আলমগীর তাঁকে প্রথম সুসংবাদটি দেন। তিনি ফোনকলে জানান, হাইল হাওরে জল ময়ূরের বাসা ও চারটি ডিম দেখেছে। খোকন আলমগীরকে ডিমগুলোর দিকে খেয়াল রাখতে বলেন। 

গতকাল বৃহস্পতিবার আলমগীর খোকন থৌনাউজামকে ফোনকলে জানান, বাসায় ডিম নেই। সঙ্গে সঙ্গে ক্যামেরা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন খোকন। হাইল হাওরের বাইক্কা বিলের পাশে যেখানে ডিম পেড়েছিল জল ময়ূরটি তার কিছুটা দূরেই পদ্ম পাতার ওপর আবিষ্কার করেন ছানাদের। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে দেখা পান পুরুষ জল ময়ূরের। আজ শুক্রবার সকালে তিনি আবার হাওরে যান। এ সময় দেখা পান মা জল ময়ূরের। 
 
খোকন জানান, জল ময়ূরের ইংরেজি নাম ফিজেন্ট টেইলড জাকানা। বৈজ্ঞানিক নাম: Hydrophasianus chirurgus। এটিকে এলাকা ভেদে নেউ, নেউপিপি, পদ্মপিপি বা মেওয়া নামেও ডাকা হয়। এ পাখির লেজে তিন থেকে চারটি লম্বা পালক রয়েছে, দেখতে খুবই সুন্দর। এর মাথা, গলা ও ডানার পালক সাদা। ঘাড় সোনালি-হলুদ, পিঠ গাঢ় বাদামি, বুক-পেট কালচে-বাদামি ও লেজ কালচে। এর লম্বা লেজসহ দেহের দৈর্ঘ্য ৩৯ থেকে ৫৮ সেন্টিমিটার। ওজনে পুরুষ পাখি ১১৩ থেকে ১৩৫ গ্রাম। স্ত্রী পাখি ২০৫ থেকে ২৬০ গ্রাম হয়। 

শ্রীমঙ্গল হাইল হাওরে বহুদিন পর দেখা মিলল জল ময়ূরজল ময়ূর ভাসমান পাতার ওপর হেঁটে হেঁটে জলজ উদ্ভিদে থাকা পোকা ও অমেরুদণ্ডী প্রাণী, জলজ উদ্ভিদের কচি পাতা, অঙ্কুর ও বীজ খেয়ে জীবন ধারণ করে। জল ময়ূর হাওর, বিল, হ্রদ এবং মিঠাপানির জলাভূমিতে বাস করে। বর্তমানে এটি প্রায় সংকটাপন্ন পাখি প্রজাতি। 

শ্রীমঙ্গল বন্যপ্রাণী প্রেমী সিতেশ রঞ্জন দেব জানান, তিনি হাইল হাওরে বহুবার এ পাখিকে দেখেছেন। প্রজননকালে এর পুরুষ প্রজাতিটি পরিশ্রমী হয় বেশি। এ সময় তারা শাপলা পাতা, হুকল পাতা, কলমি বন ও পদ্মপাতা বা এ জাতীয় ভাসমান উদ্ভিদের পাতার ওপর বাসা বানায়। স্ত্রী এতে ডিম পেড়ে সরে যায়। পুরুষ একাই ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায়। বাচ্চা বড় হওয়া পর্যন্ত সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখে। হাওরে পাখি শিকারিদের উৎপাত ও পাখির আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কারণে জল ময়ূরসহ অন্যান্য পাখিও অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

শেখ হাসিনাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে এম সাখাওয়াতের বিস্ফোরক মন্তব্য, কী বলেছেন এই উপদেষ্টা

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, আহত ৩

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত