চবির ‘ডি’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি

সৌরভ চৌধুরী
প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২৩, ০৯: ৫৩

উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনের অন্যতম পর্যায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা। বেশির ভাগ শিক্ষার্থী প্রতিযোগিতামূলক এ পরীক্ষায় বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি গ্রহণে হিমশিম খেয়ে যায়। এ কারণে এ সময় সঠিক পরিকল্পনা ও দিকনির্দেশনা থাকা খুব জরুরি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ডি ইউনিট ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেবে এমন শিক্ষার্থীদের জন্য নিজের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে প্রস্তুতির পরামর্শ তুলে ধরছি।

বাংলা
চবির ডি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রের প্রথম অংশের বিষয়টির নাম বাংলা। পুরোনো বছরের প্রশ্নপত্রগুলো যাচাই করে দেখা যায়, বাংলায় তুলনামূলক সহজ প্রশ্ন করা হয়। এ অংশে মোট ৩০টি প্রশ্ন থাকে। ১৮টি প্রশ্ন সাহিত্যনির্ভর; মানে বাংলা প্রথম পাঠ থেকে আসে প্রশ্নগুলো। বাকি ১২টি প্রশ্ন করা হয় বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি অংশ থেকে। বাংলা পাঠ্যবইয়ের রচনা, কবিতা, শব্দার্থ, লেখক ও কবি পরিচিতিসহ সবগুলো বিষয় আয়ত্তে রাখতে হবে নিজের। পাশাপাশি বাংলা ব্যাকরণের জন্য নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি বইটির টপিকগুলো মনে রাখা খুব জরুরি। উদাহরণসহ সেসব মনে রাখার জন্য অনুশীলন করতে হবে বারবার। অনুশীলনের জন্য জয়কলী প্রকাশনীর বাংলা বিচিত্রা বইটি বেশ সহায়ক ছিল আমার ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির বেলায়। তবে খেয়াল রাখা জরুরি, যেকোনো অনুশীলন বই কেবল চর্চায় সাহায্য করতে পারবে, পুরোপুরি একটি প্রস্তুতিতে নয়।

ইংরেজি
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় অনেক শিক্ষার্থীই যমের মতো ভয় পায় ইংরেজি বিষয়টি। এর কারণ হতে পারে দুটি—প্রথমটি হলো ইংরেজি ব্যাকরণে বনিয়াদি বা মৌলিকতার অভাব এবং দ্বিতীয়টি, অনুশীলন বা চর্চার অভাব। চবি ডি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় বাংলার মতো ইংরেজিতেও পূর্ণমান ৩০ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে। ইংরেজি অংশের প্রশ্নে, বিশেষ করে ইংরেজি ব্যাকরণ ও ভোকাবুলারি প্রাধান্য পায়। এ বিষয়ে ভালো করার জন্য ব্যাকরণের মৌলিক নিয়মগুলোর ওপর স্বচ্ছ ধারণা রাখা জরুরি। প্রস্তুতির জন্য Cliff's Toeffel এবং Barron's Toeffel—বই দুটো অনুশীলনের মধ্য দিয়ে দারুণ সফলতা পেয়েছিলাম। আর হ্যাঁ, অবশ্যই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আগের বছরের ভর্তি পরীক্ষার সব প্রশ্ন সমাধান করতে হবে। পাশাপাশি বিসিএস, বিজিএস ও সরকারি-বেসরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নগুলোও অনুশীলন করতে পারলে ভালো। এ ছাড়া English For Competitive Exam বইটি অনুসরণ করেও সুফল পেয়েছি ব্যক্তিগতভাবে।

ভোকাবুলারি: অনেকগুলো অংশ আছে ভোকাবুলারি ভাগে; মানে synonyms, antonyms, preposition, group verbs, phrases and idioms, one word substitution, analogy—টপিকগুলো। synonyms এবং antonyms-এর জন্য Saifurs Student Vocabulary বইটি সবচেয়ে সমাদৃত। Vocabulary ছাড়া বাকি অংশগুলো Competitive Exam বই থেকে পড়লে মোটামুটি ভালো একটা প্রস্তুতি গড়ে তোলা সম্ভব।

সাধারণ জ্ঞান
নামে সাধারণ জ্ঞান হলেও, বিষয়টি মোটেও সাধারণ না। আয়ত্তে আনতে একটু বেশিই কষ্ট করতে হবে। একই বিষয় পড়া এবং ধৈর্য নিয়ে বারবার রিভিশন চালিয়ে যাওয়া সত্যিই কষ্টের বলে মানছি। তবে সাধারণ জ্ঞান আয়ত্তে নিয়ে আসার উপায় কিন্তু এটিই। সাধারণ জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃত। পুরোটা শেষ করা অসম্ভব। আর শেষ তো তখনই সম্ভব, যদি না বিষয়টির কোনো সিলেবাস থাকত। সেই ঝক্কি সামলাতে প্রাসঙ্গিক এবং অপ্রাসঙ্গিক টপিকগুলো বাছাই করতে হবে সবার আগে। সাধারণ জ্ঞানের জন্য আমার পছন্দ ‘জুবায়ের’স GK’ এবং ‘MP3 (বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক—দুই খণ্ড) নামে বই দুটো। জুবায়ের’স GK বইটি গোছাল। ছবিসহ তথ্যগুলো জানলে মাথায় গেঁথে যায় সহজেই। ভুলে যাওয়ার প্রবণতাও কম, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়েই প্রকাশিত বইটি। সে হিসেবে প্রশ্নের ধরন অনুযায়ী সিলেবাস মিলিয়ে পড়ার চিন্তা রইল না। পাশাপাশি MP3 পড়লে সাধারণ জ্ঞানের আর কোনো তথ্যই বাকি থাকবে না।

সাধারণ জ্ঞান অংশে ভালো করার জন্য অবশ্যই সাম্প্রতিক বিষয়ের ওপর খুব জোর দিতে হবে। মাসিক ম্যাগাজিন Current Affairs পড়ার অভ্যাস থাকলে এদিকটাও ভাবনা নেই।

বিশ্লেষণী দক্ষতা
এই অংশে কিছু Basic Math, Analogy, Grammar, ধাঁধা ধরনের প্রশ্ন থাকে। শুরুতে প্রশ্নব্যাংক দেখলে অনেকটাই জটিল বলে মনে হতে পারে। আসলে তেমন কঠিন নয় বিষয়টি। পরীক্ষার আগে এক পক্ষ থেকে দেড় মাস পর্যন্ত সময় অনুশীলনের মধ্য দিয়েই পোক্ত হয়ে ওঠা যায়। এ জন্য IQ Factors নামে বই আছে একটি। বইটি ছোট এবং বেশ ভালো।

গণিত
চবির ডি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা চাইলে সাধারণ জ্ঞানের বদলে গণিত উত্তর করতে পারবে। এ বিষয়ের প্রশ্নে উচ্চমাধ্যমিকের গণিত বহুনির্বাচনী প্রশ্নের মতোই হয়। একটি বই নিয়ে প্রচুর পরিমাণে গণিত প্রশ্ন অনুশীলন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে শর্টকাট পদ্ধতিতে সমাধানের জন্যও প্রকাশিত হয় কিছু বই, সময় স্বল্পতার বিবেচনায় সেসব বইয়ের একটি বেছে অনুশীলন করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।

বিগত সালের প্রশ্ন সম্পর্কে ধারণা
প্রশ্নব্যাংক বিশ্লেষণ ও সমাধান করার বেলায় প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে ধারণা পেতে পারে শিক্ষার্থীরা। বারবার পুনরাবৃত্তি হতে থাকা প্রশ্নগুলো যাচাইয়ের মধ্য দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো সম্পর্কে জানা যায় সহজেই। সে তুলনায় কম গুরুত্বের বিষয়টিও বোঝা সম্ভব। অনেক প্রশ্নব্যাংকেই ভুল উত্তর থাকে প্রশ্নের, যার জন্য প্রশ্নব্যাংক নির্বাচনের সময় সতর্ক থাকা উচিত। তবে প্রশ্নব্যাংকের প্রশ্নের উত্তর পড়ে গেলেই চলবে না। উত্তরের সঙ্গে ব্যাখ্যা তথা বিস্তারিত তথ্যসহ পড়তে হবে অবশ্যই।

পাঠ্যবই পড়ার গুরুত্ব
ভর্তি পরীক্ষার সময় প্রশ্নব্যাংকের ওপর অধিক জোর দেওয়া এবং পাঠ্যবইকে এড়িয়ে চলার একটি প্রবণতা খেয়াল করেছি শিক্ষার্থীদের মাঝে। এটি বুদ্ধিমানের পরিচয় নয়। জ্ঞানের মূল খুঁটি পাঠ্যবই। পাঠ্যবই থেকেই সাজানো হয় সব প্রশ্ন। প্রত্যেক শিক্ষার্থীরই পাঠ্যবই এবং প্রশ্নব্যাংক—দুটোতেই গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

পত্রিকা পড়ার গুরুত্ব
বর্তমান যুগে একজন নাগরিক হিসেবে যেমন সাধারণ জ্ঞানের অভ্যাস থাকা জরুরি, তেমনি একজন ভর্তি পরীক্ষার্থীর এই অভ্যাস থাকা আরও বেশি জরুরি। তথ্যের সবচেয়ে সহজ, সময়োপযোগী এবং বাস্তব মাধ্যম পত্রিকা। সাধারণ জ্ঞান অংশের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে ঘটমান সাম্প্রতিকঘটনাগুলো জানা যায় পত্রিকা পড়ার মধ্য দিয়েই।

মানসিক প্রস্তুতি
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষাকে দেখা হয় যুদ্ধের আদলে। বিশালসংখ্যক শিক্ষার্থীর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে এ যুদ্ধে টিকতে চাইলে চাই নিরবচ্ছিন্ন পরিশ্রম, অসীম ত্যাগ ও প্রবল আত্মবিশ্বাস। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর থেকে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হওয়া পর্যন্ত সময়টুকু কাজে লাগাতে হবে সবচেয়ে বেশি। নষ্ট করার মতো সময় নেই। মানসিকভাবে দৃঢ় থেকে জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী হয়ে প্রস্তুতি চালিয়ে যেতে হবে। নিজের ওপর বিশ্বাস রেখে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া লড়াকু মানসিকতার শিক্ষার্থীরাই বিজয়ের খেতাব পায় দিন শেষে।

সময় ব্যবস্থাপনা
পুরোপুরি প্রস্তুতি থাকার পরও সময় ব্যবস্থাপনার বিষয়টি আমলে না নেওয়ার কারণে শেষ সময়ে গিয়ে অনেক শিক্ষার্থীকে হিমশিম খেতে দেখা যায়। পুরো উত্তর করে আসতেও পারে না তারা। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নিজের দক্ষতা ও প্রস্তুতির ওপর ভিত্তি করে প্রশ্নের প্রতিটি অংশের জন্য আলাদা আলাদা সময় বাছাই এবং সেই মতো একটি ছক তৈরি করা উচিত। একেকটি অংশের পূর্ণমান ও বিস্তৃতি ভিন্ন হওয়ায়, শিক্ষার্থীর তৈরি সময়ের ছকও হবে আলাদা। হতেই পারে দু-একটি প্রশ্নের উত্তর অজানা। তবে নিজেকে শান্ত রেখে বাদবাকি প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

লেখক: ২০১৯-২০ শিক্ষা বর্ষে ডি ইউনিট

ভর্তি পরীক্ষায় মেধাক্রম ১মঅনুলিখন: মুনতাসির সিয়াম

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

শেখ হাসিনাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে এম সাখাওয়াতের বিস্ফোরক মন্তব্য, কী বলেছেন এই উপদেষ্টা

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, আহত ৩

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত