অলস এক রাজনৈতিক সেতু

বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১০ মার্চ ২০২২, ০৮: ১৬
আপডেট : ১০ মার্চ ২০২২, ১৩: ০২

পটুয়াখালীর বাউফলে সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি জনগণের কোনো কাজে আসছে না। রাজনৈতিক রোষানলে পড়ে নির্ধারিত স্থানে নির্মাণ না করায় গুরুত্ব হারিয়েছে সেতুটি। তাই আগের মতো নৌকায় নদী পারাপার হচ্ছেন এলাকাবাসী। তাঁরা জানান, নির্ধারিত স্থানে সেতুটি নির্মাণ করা হলে স্থানীয়দের দুর্ভোগ হতো না।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর বাউফল উপজেলা সূত্র জানায়, ১৯৯৯-২০০১ অর্থবছরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে স্থানীয় সাংসদ আ স ম ফিরোজ উপজেলার কেশবপুর ও সূর্যমনি ইউনিয়নের মানুষের চলাচলে দুর্ভোগ লাঘবে আলগী নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেন। স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের আওতায় ভরিপাশা-নুরাইনপুর খেয়াঘাট এলাকায় ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্য সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয়ে একটি গার্ডার সেতু নির্মাণের জন্য স্থান নির্ধারণ করে প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। ২০০১ সালে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল আলম তালুকদার সাংসদ নির্বাচিত হলে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ঘটে। এরপর বাউফল উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর প্রস্তাবিত সেতুর দরপত্র আহ্বান করে। দরপত্র অনুযায়ী প্রস্তাবিত স্থান থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সাবেক সাংসদ শহিদুল আলম তালুকদার। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানও সেতুটি নির্মাণ করতে বাধ্য হয়। ২০০৬ সালের ১৬ জুলাই সাংসদ নিজ দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে সেতুটি উদ্বোধন করলেও এলাকার জনগণ ব্যবহার করছেন না। তাঁরা আগের মতোই নুরাইনপুর খেয়াঘাটে এসে নৌকায় পারাপার হচ্ছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সাংসদ আ স ম ফিরোজ যে স্থানে সেতুটি নির্মাণের স্থান নির্ধারণ করেছিলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এসে বিএনপির সাংসদ শহিদুল আলম তালুকদার সেতুটি অন্যত্র নির্মাণ করায় তা কোনো কাজে আসছে না। রাজনৈতিক রোষানলের কারণেই সেতুটির সুফল থেকে বঞ্চিত এলাকাবাসী।

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার ভরিপাশা-নুরাইনপুর খেয়াঘাট এলাকায় সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুকেশবপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা ভরিপাশা গ্রামের আলমগীর হোসেন বলেন, ‘যেখানে লোকজনের চলাচল, সেখানে সেতু নাই। আধা কিলোমিটার ঘুরেই যদি আসতে হয়, তাহলে আমাদের খেয়ানৌকাই ভালো।’

সূর্যমনি ইউনিয়নের নুরাইনপুর বাজারের দোকানি হেলাল খান বলেন, ‘এখানে লঞ্চঘাটের পন্টুনে প্রতিদিন দুটি লঞ্চ থেকে এক শ থেকে দেড় শ যাত্রী ওঠানামা করে। সেতুটি অনেক দূরে হওয়ায় অধিকাংশ মানুষ নৌকায় খেয়া পার হয়ে ভরিপাশা কেশবপুর যাতায়াত করেন।’

কেশবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সালেহ উদ্দিন পিকু বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাংসদের প্রস্তাবিত স্থানে সেতুটি না করে বিএনপির সাংসদ শহিদুল আলমের খামখেয়ালিপনার খেসারত এখন দিচ্ছেন এলাকাবাসী। মাঝখান থেকে সরকারের অর্থ ব্যয় হলেও জনগণের উপকারে আসছে না।’

সূর্যমনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বাচ্চু বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাংসদের শাসনামলে প্রস্তাব হয়েছে এক স্থানে আর বিএনপি সরকারের সাংসদ করেছে অন্যখানে। রাজনৈতিক এই রোষানলের কারণে সেতুর সুফল থেকে বঞ্চিত হলো স্থানীয় জনগণ। কার লাভ হলো? এলাকাবাসীর যে দুর্ভোগ, সেই দুর্ভোগ রয়ে গেছে। মাঝখান দিয়ে সরকারের কতগুলো টাকা অপব্যয় হলো।’

বাউফল উপজেলা প্রকৌশলী সুলতান আহম্মেদ বলেন, যদিও ওই সময় তাঁর কর্মস্থল বাউফল ছিল না। তবে এটা ঠিক, পরিকল্পনা না করে জনস্বার্থে কোনো স্থাপনা করলে তা জনগণের উপকারে আসবে না। পরিকল্পনামাফিক জনগণের উপকারে আসে এমন স্থানেই স্থাপনা করা জরুরি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

শেখ হাসিনাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে এম সাখাওয়াতের বিস্ফোরক মন্তব্য, কী বলেছেন এই উপদেষ্টা

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, আহত ৩

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত